সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেষ দিনের প্রচারে দুই প্রার্থী যা বললেন

গাজীপুর প্রতিনিধি

আগামীকালের ভোটকে সামনে রেখে গতকাল গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রার্থী-সমর্থকরা শেষদিনের প্রচারণা চালিয়েছেন। এ সময় তারা ভোট প্রার্থনা করে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কেউ কেউ ভোট নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের শালনায় দিনের প্রথম কর্মসূূচি পালন করেন। এ পথসভায় বলেন, নির্বাচনে নৌকার পক্ষে একটি জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুরের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবেন। গাজীপুরের মানুষ আর অনুন্নয়নের পথে থাকতে চান না। তিনি বলেন, প্রচারে গিয়ে দেখেছি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব। আগে গাজীপুর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। এ বঞ্চনা অবসানের সময় হয়েছে। এ সময় খুলনা সিটির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক উপস্থিত ছিলেন। শালনার পর জাহাঙ্গীর আলম মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকায় যান। সেখান থেকে বাসন এলাকার চৌরাস্তায় পথসভা করেন। এই পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ অঞ্চলেই আমি বেড়ে উঠেছি। নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। এখানকার মানুষের ভোট পাওয়া আমার অধিকার। তাদের ভালোবাসাতেই আজ আমি জাহাঙ্গীর আলম হয়েছি। আপনাদের জন্যই সত্তর বছরের দলটির মেয়র প্রার্থী আমি হতে পেরেছি। আপনারা নিশ্চয়ই আমার সম্মান রাখবেন।’ তিনি আরও বলেন, গাজীপুরে এখন হাঁটা চলার মতো রাস্তাঘাট নেই। বর্তমান মেয়র কিছুই করেননি।’ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই অনুন্নয়নে কোনো মানে হয় না। আমি এর অবসান চাই। তিনি বলেন, এখন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচিত হলে আমার পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের কথা বলব। বাসনের সভার পর জাহাঙ্গীর আলম জয়দেবপুরে ২৪ নং ওয়ার্ডে যান। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। তারপর কোনাবাড়িতে গিয়ে সভা করেন। দুপুরে ছয়দানা হারিকেন এলাকার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আবারও উন্নয়নের স্বার্থে তাকে নির্বাচিত করার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে জনগণের কাছে আবেদন করেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকার এখন ভোট না চেয়ে অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন। তিনি গাজীপুরে একাধিক ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছেন। ভোটের জন্য রক্তাক্ত করেছেন মানুষকে। আমি চাই না এখানে কোনো রক্ত ঝরুক। এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লাহ খান উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর শহরের শিববাড়ি এবং আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে, টঙ্গী মিলগেট, গাছা বাজার ও বোর্ডবাজার এলাকায় পথসভায় বক্তব্য দেন। বিকালে মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪২৫ কেন্দ্র কমিটির নেতা-কর্মীরা এবং সর্বস্তরের জনতা এলাকায় মিছিল করেন। এদিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বিজয়ী করতে দিনভর গণসংযোগ ও প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, সদস্য এস এম কামালসহ স্থানীয় নেতারা।

এদিকে আওয়ামী সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সংবাদ সম্মেলন এবং খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকসহ অন্যান্য নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারণার বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, আচরণবিধি লংঘন করে সরকার দলের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সেটা দেখছে না।

বিএনপি প্রার্থী : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. হাসান উদ্দিন সরকার গতকাল টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, গত ২০ জুন নির্বাচন কমিশন ও তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- নির্বাচনী মাঠে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বরং খুলনা স্টাইলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ২০ দলীয় জোট নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার ও হুমকি-ধমকি দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বানচাল করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকেও পুলিশের গাড়িতে দেখা গেছে। খুলনার কারচুপির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পুলিশ সদস্যদের এরই মধ্যে গাজীপুরের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য আনা হয়েছে। কিন্তু শত বাধা সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের চরিত্র জাতির সামনে তুলে ধরব। তিনি আওয়ামী লীগের ‘গোপন পরিকল্পনা’র কথা তুলে ধরে দাবি করেন, ‘বাইরে থেকে সিল মেরে ব্যালট ভিতরে  ঢোকানো হবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের পুলিশ দিয়ে আটকে রেখে জোরপূর্বক তাদের বানানো রেজান্ট শীটে স্বাক্ষর নেওয়া হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাক্ষর না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের হতে দেবে না। খুলনার মতো কারচুপি যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য তারা একটি সুবিন্যস্ত রেজাল্ট শিট তৈরি করে রেখেছে। তাদের দলীয় ৫০ জন কাউন্সিলরকেও চূড়ান্ত করে রেখেছে।’ হাসান সরকার ঝড়-বৃষ্টি ও সব বাধা উপেক্ষা করে ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সব অপকৌশল জেনে গেছি। আমরা তাদের এসব অপকৌশল প্রতিহত করার চেষ্টা করব। তিনি সকাল ৭টার মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকের সব এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে আসার আহ্বান জানান এবং কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার জন্য ২০ দলীয় জোটের সব নেতা-কর্মীকে কেন্দ্রের পাশে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ জানান। হাসান সরকার আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কতটুকু সম্মান করে? এই নির্বাচনে আমি হয়তো শেষ মুক্তিযোদ্ধা হব। আগামীতে হয়তো আর কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে আপনারা নির্বাচনে পাবেন না। তাই সব মুক্তিযোদ্ধাকে আমার পক্ষে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, সুনামের সঙ্গে বেঁচে থাকতে চাই। মানুষের ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। জীবনের এই শেষ নির্বাচনে জীবন দিয়ে হলেও গাজীপুরবাসীর ইজ্জত রক্ষা করব। তিনি সাংবাদিকদের সঠিক চিত্র তুলে ধরার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ্র পরে আপনারা আমাদের ভরসা। আপনারা সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারলে এবং ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হলে সম্মানজনক ভোটে বিজয়ী হবো। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন, জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন শেষে হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর নেন এবং গ্রেফতারকৃতদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখার জন্য দলের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দেন। বিকালে হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বশেষ প্রচারণায় অংশ নেন।

ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার সর্বশেষ দিনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। এ সময় তিনি দুর্নীতি মুক্ত নগর গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।

সর্বশেষ খবর