সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিপিডি সংলাপে বক্তারা

ব্যাংক খাত উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকিং খাতে লুটপাট চলছে। আর করপোরেট কর কমানোসহ বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে লুটেরাদের উৎসাহিত করছে সরকার। এক্ষেত্রে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব, সেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিকলাঙ্গ করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ব্যাংকিং খাত উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় মন্তব্য করা হয়, দেশের অর্থনীতি ডায়াবেটিস রোগীর           মতো চলছে। এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে জানান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, সিপিডির সম্মনীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং মেট্রো পলিটন চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদকে উদ্দেশ করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আপনাদের সময়ে আর্থিক অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আপনারা সেগুলো দ্রুতই ভুলে যান। কিন্তু এর মানে নয়, যে আমি বলেছি আওয়ামী লীগের সময় ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম হয়নি। তিনি বলেন, ব্যাংকে অনিয়ম হয়েছে। তবে এর সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি পাওনা টাকাও ফেরত দিতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তা সমাধান দুই মাসের ব্যাপার। তার মতে, আর্থিক খাতে সংস্কার করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও উদ্যোগ থাকবে। সবকিছুই সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। এ সময়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উদ্দেশে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, আপনি নির্বাচন করতে চাইলে আমি তহবিলের ব্যবস্থা করে দেব। নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এ সময়ে বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী নির্বাচন করতে চাইলে আমার আসন ছেড়ে দেব। এম এ মান্নান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সিএজি অফিসের স্বাধীনতার কথা আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো তারা স্বাধীনতা চায় কিনা। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এরা স্বাধীন থাকতে চায় না। কারণ এরা বিভিন্ন তদবির এবং অবসরের পর বিভিন্ন করপোরেশনের বড় পদে নিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে আস্তে আস্তে এ অবস্থার উত্তরণ হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের করপোরেট কর কমানো নিয়ে সমালোচনা আসছে। কিন্তু বাজেটে যে ঘোষণা করা হয়েছে, তা শুধু প্রস্তাব। এটি চূড়ান্ত নয়। তিনি বলেন, সরকার বোবা কিংবা অন্ধ নয়। সবকিছু শুনছে এবং দেখছে। আপনারা অপেক্ষা করেন। বাজেট পাসের সময় অবশ্যই করপোরেট করের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এরপরেই তিনি বলেন, ‘হবে সেটি আমি এখনই বলছি না। তবে পুনর্বিবেচনা হতে পারে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু ব্যাংক নয়, সব খাতেই সংস্কার জরুরি। বিষয়গুলো সরকার বিবেচনা করছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুশাসন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ জরুরি। মৌলিক বিষয় পরিবর্তন না করে অর্থ বাড়িয়ে স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, মসজিদ নির্মাণ করে আর বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে খেলার মাঠ বাড়ানোসহ মেধার বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। পাশাপাশি চায়ের দোকানেও বিয়ার উন্মুক্ত করে দিতে হবে। তিনি বলেন, বিয়ার সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। প্রচার করা হচ্ছে বিয়ার মদ। আসলে সত্য নয়। কারণ মদের জন্য ৮ শতাংশের ওপরে অ্যালকোহল থাকতে হয়। আর বিয়ারে ৩ থেকে ৪ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, অর্থনীতি ডায়াবেটিস রোগীর মতো চলছে। প্রতি বছর বাজেটের আকার যেহারে বাড়ছে, সম্পদ আহরণ ওই হারে বাড়ছে না। ফলে ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছরই সরকারের ঋণ বাড়ছে। আবার পরের বছর ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে। এর মানে হলো ডায়াবেটিস রোগীর মতো অর্থনীতি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কর আদায় না বাড়াতে পারলে এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তিনি বলেন, বাজেট এক বছরের জন্য নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে। ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা উচ্চাভিলাষী। দিনশেষে ভালো করদাতার ওপর এর প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ওইভাবে বাড়েনি। অর্থনীতির আকার অনুসারে জিডিপির ৩৩ থেকে ৩৪ শতাংশ বিনিয়োগ দরকার। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দ্রুত কার্যকর না হলে লাভ নেই। তিনি বলেন, মধ্যবিত্তরা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কিন্তু এবারের বাজেট এদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ড. রেহমান সোবহান বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় রপ্তানিতে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখনো ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু ভিয়েতনামের রপ্তানি ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, শিল্পায়নের অর্থায়নের খাতগুলো সংকুচিত হয়ে আছে। পুঁজিবাজার অকার্যকর। ব্যাংকিং খেলাপি ঋণ একটি বড় সমস্যা। জিয়াউর রহমানের সময় এই ঋণখেলাপির সংস্কৃতি শুরু হয়। বর্তমানে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

সর্বশেষ খবর