মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

টানটান উত্তেজনা গাজীপুরে

কে হবেন নগরপিতা । বিএনপির শঙ্কা আওয়ামী লীগের আশাবাদ

গোলাম রাব্বানী ও শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

টানটান উত্তেজনা গাজীপুরে

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট উত্সব আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। ভোটকে সামনে রেখে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে গাজীপুরে। কে হচ্ছেন নগরপিতা সে আলোচনা এখন নগরজুড়ে। জাতীয় সংসদসহ আসন্ন তিন সিটি ভোটের আগে এ নির্বাচন বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মর্যাদার লড়াই। আর নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আশার কথা বললেও বিরোধী দল বিএনপি বলছে শঙ্কার কথা। তবে ভোটকে ঘিরে নগরজুড়ে বিরাজ করছে উত্সবের আমেজ। সিটি এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে সব কলকারখানা। গাজীপুরের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) ও বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) মধ্যে মূল লড়াই হবে।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুরজুড়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। টহলে রয়েছে বিজিবি-র‌্যাব ও পুলিশ। ভোটের পরদিন পর্যন্ত তারা থাকবে। ভোটকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের জন্য থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ভোটগ্রহণকালে নির্বাচন কমিশনের ৫৭ জন নিজস্ব পর্যবেক্ষক মাঠে কাজ করবে। তারা ভোটগ্রহণে কোনো অনিয়ম হলে তাত্ক্ষণিক নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

ইসি জানিয়েছে, গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৬ জন (৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন— আওয়ামী লীগের মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)।

 অনিয়ম করলে কড়া ব্যবস্থা : নির্বাচনে কেউ অনিয়ম করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে তা দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যদি কেউ নির্বাচনে অন্যায়-অনিয়ম করেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রার্থী হতে পারেন বা সমর্থক হতে পারেন বা কোনো অফিসার হতে পারেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এক নজরে গাজীপুর : এ নির্বাচনে নয় হাজার কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। তারা একজন মেয়র, ৫৭টি সাধারণ এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। মোট ৪২৫টি কেন্দ্রে। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুর। গত ১৫ মে খুলনা সিটির সঙ্গে গাজীপুর সিটির ভোট হওয়ার কথা থাকলেও মাঝপথে আইনি জটিলতায় তা আটকে যায়। এ জটিলতা কেটে গেলে নির্বাচন কমিশন আজ ভোটের দিন নির্ধারণ করে। গত ১৮ জুন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৬ জুলাই গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম এ মান্নান আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে ৩৩৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ এবং ৮৮টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ভিডিপিসহ ২৪ (১২ জন অস্ত্রধারী) জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ২২ (১০ জন অস্ত্রধারীসহ) জন সদস্য মোতায়েন থাকবে।

ভোটের মাঠে ১৫ হাজার ফোর্স : নির্বাচনে নিরাপত্তার বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, ‘১৫ হাজার ফোর্স মোতায়েন থাকবে। ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়ন্ত্রণে রেখে বিজিবির ২৯ প্লাটুন ফোর্স রয়েছে। এই ফোর্স নিয়ন্ত্রণ ও আইনানুগ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ৬৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। তাত্ক্ষণিক বিচারের জন্য ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।

এ দিকে গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা ৪২৫টি কেন্দ্রে নির্বাচনী মালপত্র পৌঁছানো, ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা এবং ভোট গ্রহণের পর ভোটের ফলাফল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আনা ও সংশ্লিষ্টরা নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের অবস্থান থাকবে। এ জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। কোনো ভাবেই কেউ গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের দিকে। আপনাদের ওপর নির্ভর করছে গাজীপুরের ভাবমূর্তি।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে : র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)-এর সিও লে. কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাসেম গতকাল গাজীপুর সার্কিট হাউসের অফিসার্স ক্লাবে নির্বাচনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারে, সে জন্য সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব। মাঠে ৭০০ র‌্যাব সদস্য কাজ করবেন।

ছয় কেন্দ্রে ইভিএম : ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে বলে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানিয়েছেন। সোমবার দুপুরে তিনি আরও জানান, কেন্দ্রগুলো হলো চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাপুলিয়া মফিজ উদ্দিন খান উচ্চবিদ্যালয়, পশ্চিম জয়দেবপুর মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১), মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোট কেন্দ্র-২), রানী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় (কেন্দ্র-১) ও রানী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় (কেন্দ্র-২)।

গণগ্রেফতারে আতঙ্ক বিএনপিতে : ভোটের একদিন আগে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেফতারের অভিযোগ করেছেন দলটির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। এ ঘটনায় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রধান এজেন্ট ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. সোহরাব উদ্দিন গতকাল দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দুটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘রবিবার রাতে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ১৮ জনকে বিভিন্ন এলাকার গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। বিনা ওয়ারেন্টে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে ভোটের আগে গ্রেফতার না করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর গাজীপুর পুলিশ সুপারকে এ নির্দেশ দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে ইসির যুগ্ম-সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়। ‘গাজীপুর নির্বাচনে সব দল ও প্রার্থীর সুযোগ নিশ্চিতে’ এ চিঠি জারি করা হয়।

সর্বশেষ খবর