মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

জীবনবাজির লড়াই আর্জেন্টিনার ছাড় দেবে না নাইজেরিয়া

জীবনবাজির লড়াই আর্জেন্টিনার ছাড় দেবে না নাইজেরিয়া

আজও দৃষ্টি থাকবে মেসি ও মুসার দিকে —এএফপি

আইসল্যান্ডের বিপক্ষে নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে জিততে দেখে কী যে খুশি হয়েছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকরা! লিওনেল মেসিদের বিশ্বকাপে টিকে থাকার সম্ভাবনা যে বেড়ে গেল! কিন্তু এই খুশির মধ্যেও ছিল দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। আইসল্যান্ডকে যে  দল হেসে-খেলে হারিয়েছে, সেই নাইজেরিয়া আর্জেন্টিনাকে নিয়ে কী করতে পারে! কিন্তু আর্জেন্টিনার সামনে কোনো পথ খোলা নেই। বিশ্বকাপের মঞ্চে টিকে থাকতে হলে, জয়ের কোনো বিকল্প নেই। কেবল নিজেদের জয়ই নয়, আলবেসিলেস্তদের আজ তাকিয়ে থাকতে হবে ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচের দিকেও। আইসল্যান্ড জিতে গেলেই যে বিপদ! জীবনবাজি রেখেই লড়াই করতে হবে আর্জেন্টিনাকে। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচই গুরুত্বহীন নয়। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোও ঠিক ফাইনালের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে মাঝে মধ্যে। জার্মানি যেমন ‘ফাইনাল’ জিতল সুইডেনের বিপক্ষে। ব্রাজিল একটা ফাইনাল জিতল কোস্টারিকার বিপক্ষে। তেমনি আর্জেন্টিনাকেও আজ অন্যরকম এক ফাইনালে জিততে হবে। অবশ্য এমন ফাইনাল জয়ের রেকর্ড লিওনেল মেসিদের ভালোই আছে। বিশ্বকাপের বাছাই পর্বেই তো ফাইনাল খেলে এসেছেন মেসিরা। শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেই বিশ্বকাপটা নিশ্চিত করেছিলেন লিওনেল মেসি। সেই ম্যাচের পর আর্জেন্টাইনদের উল্লাস ছিল বিশ্বকাপ জয় করার মতোই। চূড়ান্ত পর্বে খেলতে এসেও আর্জেন্টিনাকে খেলতে হচ্ছে আরেকটি ফাইনাল। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে না জিতলে যে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাবে! সর্বশেষ ২০০২ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এরপর কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে ২০০৬ ও ২০১০ সালে। গতবার তো ফাইনালটাই খেলল। দীর্ঘদিন পর আরও একবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ার ভয় দেখা দিয়েছে আর্জেন্টাইনদের মনে। লিওনেল মেসি যেভাবে আর্জেন্টিনাকে বাছাই পর্বে ইকুয়েডরের বিপক্ষে জিতিয়ে দিয়েছিলেন, আজও কি পারবেন! মেসি পারবেন, আর্জেন্টাইনরা এই বিশ্বাস নিয়েই আজ মাঠে খেলা দেখতে আসবে। সুদূর আর্জেন্টিনার পাব আর রেস্টুরেন্টগুলোতেও হাজারো আর্জেন্টাইন ভক্ত দল বেঁধে এই আশা নিয়েই খেলা দেখতে যাবে। আর এদিকে সেন্ট পিটার্সবার্গে, আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচের শহরে এখন গমগম করছে আকাশি-নীলের দল। কোথাও তারা খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে না। তবে ভিতরে ভিতরে ঠিকই প্রস্তুত, জয়ের উত্সব করতে। আর্জেন্টিনা জিতলেই উত্সবে মাতবে তারা। মেসিকে নিয়ে গান গাইবে। মাতাল হয়ে সারা রাত উত্সব করবে। ইউরোপীয়রা মাতাল হয়েই উত্সব করে। রাত শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় একে-অপরের হাত ধরে রাখে ওরা। ইউরোপীয়দের এই অভ্যাসটা এখন ল্যাটিনরাও রপ্ত করেছে বেশ। এ কারণেই শেষ রাতে ইউরোপীয়দের পাশাপাশি মাতাল হয়ে বহু ল্যাটিনকেও হোটেলে ফিরতে দেখা যায়। আজ অবশ্য আর্জেন্টাইনরা মাতাল হবেই। মেসিরা জিতলে তারা মাতাল হবে আনন্দ করার জন্য। হারলে তারা মাতাল হবে দুঃখ ভুলতে। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব পাড়ি দিয়ে নকআউট পর্বে যাবে কি না, এই নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ থাকতে পারে। তবে নাইজেরিয়ানরাই মনে করে, আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে নকআউট পর্বে খেলা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আহমেদু নামের এক নাইজেরিয়ান দর্শকের সঙ্গে দেখা সেন্ট পিটার্সবার্গের বিখ্যাত শপিং সেন্টার ‘গ্যালারি’তে। দল বেঁধে তারা এসেছে শপিং করতে। বাংলাদেশি জেনেই বলে উঠল, তোমাদের দেশে তো নাইজেরিয়া খেলতে গিয়েছিল। আর্জেন্টিনার সঙ্গেই ছিল ম্যাচটা। ফুটবলের বেশ খবর রাখে বোঝা গেল। আহমেদু জানালেন, ‘আর্জেন্টিনার মতো দলকে টপকে দ্বিতীয় রাউন্ড খেলাটা সত্যিই কঠিন। তবে এমনটা ঘটলে আমাদের চেয়ে বেশি খুশি আর কে হবে!’ আর্জেন্টাইন সমর্থকরা এখন খুব একটা কথা বলতে রাজি নয়। নিজের দলের ওপর বিশ্বাস আছে তাদের। কিন্তু সেই বিশ্বাসের খুঁটিটা যে খুব নড়বড়ে হয়ে গেছে! আজ আইসল্যান্ড ১-০ গোলে জিতলে আর্জেন্টিনাকে জিততে হবে অন্তত ৩-০ গোলে।

ছাড় দেবে না নাইজেরিয়া : নাইজেরিয়া আবারও আর্জেন্টিনার মুখোমুখি। রাশিয়া বিশ্বকাপের এক সন্ধিক্ষণে মাঠে নামছে দুই দল। যখন আর্জেন্টিনার সামনে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে নাইজেরিয়ার সামনে ড্র করলেও সুযোগ থাকবে নকআউট পর্ব খেলার। এই কারণেই ‘সুযোগ পেলে জয় নাহলে ড্র’ নীতিতে মাঠে নামবে নাইজেরিয়া। এমন প্রস্তুতি নিয়েই শিষ্যদের মাঠে পাঠাচ্ছেন নাইজেরিয়ার জার্মান কোচ গার্নট রোর।

নাইজেরিয়া এর আগে ১৯৯৮ সালে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় করেছিল স্পেনকে। সুপার ঈগলদের এই অতীত মনে রাখলে সারাক্ষণই ভয়ে থাকবেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। তবে আশার কথা, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে কখনোই নাইজেরিয়ার কাছে পরাজিত হয়নি। ১৯৯৪, ২০০২, ২০১০ ও ২০১৪ সালে দুই দল বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবারই আর্জেন্টিনা জিতেছে (২-১, ১-০, ১-০ ও ৩-২ ব্যবধানে)। কিন্তু গত বছরেরই নভেম্বরে এক প্রীতিম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল আফ্রিকান সুপার ঈগলরা। সেই ম্যাচে মেসি ছিলেন না। আজ মেসি ফলটা বদলে দিতে পারেন কি না দেখা যাক! নাইজেরিয়া এক দুর্দান্ত দল নিয়ে বিশ্বকাপে হাজির হয়েছে। আফ্রিকান সুপার ঈগলরা যে কোনো দলের জন্যই কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামে। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের নায়ক ছিলেন আহমেদ মুসা। দুটি গোলই করেছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনার বিপক্ষেও তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে নাইজেরিয়া। কিন্তু নাইজেরিয়া দল মানে কেবল আহমেদ মুসা নন। এই দলে আর্সেনালের আলেক্স আইওবি, চেলসির ভিক্টর মোসেস এবং জন ওবি মাইকেলের মতো তারকা ফুটবলার আছে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারলেও নাইজেরিয়ার গতিশীল ফুটবল আর্জেন্টিনার দুশ্চিন্তা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। আইসল্যান্ডের মতো ইউরোপের অন্যতম দলকে তারা হারিয়েছে ২-০ গোলে। তাও বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। আর্জেন্টিনাকে নিয়ে কী ভাবছে আফ্রিকার সুপার ঈগলরা!

 কোচ গার্নট রোর গতকাল বললেন, ‘আমাদের লক্ষ্য থাকবে জয়। তবে আমরা জানি, দলটা আর্জেন্টিনা। তাদের সাম্প্রতিক ফল খারাপ হলেও এই দলে মেসির মতো ফুটবলার আছে। যিনি একাই ম্যাচের ফলাফল বদলে দিতে পারেন।’ নাইজেরিয়ান কোচ অবশ্য জোর দিয়ে বলে গেলেন, আর্জেন্টিনার জন্য পূর্ণ প্রস্তুত হয়েই দলকে মাঠে পাঠাবেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর