শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোনালদোকে ঘিরেই যত আলোচনা

মেজবাহ্-উল-হক

রোনালদোকে ঘিরেই যত আলোচনা

স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে শিষ্যদের নির্দেশনা দেন অস্কার তাবারেজ। বয়স ৭১ পেরিয়ে গেছে। এক যুগ থেকে উরুগুয়ে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী কোচ তাবারেজ বয়সের            ভারে খানিকটা দুর্বল হলেও মানসিকভাবে ভীষণ দৃঢ়চেতা। তার দাপুটে নির্দেশনাতেই দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে উরুগুয়ে। বিশ্বকাপের একমাত্র দল হিসেবে এখনো এই ল্যাটিন দলটির জালে কেউ বল জড়াতে পারেনি। কিন্তু আজ নকআউটের লড়াইয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে আটকে দিতে পারবে উরুগুয়ে? প্রথম স্পেনের বিরুদ্ধে রোনালদোর হ্যাটট্রিক যেন ভক্তদের চোখে ভাসছে। তিনটি গোল তিন রকম সৌন্দর্য প্রদর্শন করে। বিশেষ করে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি-কিকের গোলটি ছিল অসাধারণ। এখন পর্যন্ত পর্তুগাল প্রতিপক্ষের জালে যে পাঁচবার বল জড়িয়েছে তার মধ্যে চার গোলই করেছেন রোনালদো। দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে পর্তুগিজ উইঙ্গার যেন বিশ্ববাসীর মন জয় করে নিয়েছেন! তাই আজকের ম্যাচে সবার দৃষ্টি থাকবে রোনালদোর দিকে। পর্তুগালের ভাগ্যও তো তার হাতেই। কেননা রোনালদো ক্যারিশমা দেখানোর পরও কিন্তু পর্তুগাল দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট পেয়েছে অনেকটা ভাগ্যের জোরে। স্পেনের বিরুদ্ধে ড্র, মরক্কোর বিরুদ্ধেও কোনো রকমে ১-০ গোলে জয়। শেষ ম্যাচে আর একটু হলে ইরানের কাছে হেরেই যেত পর্তুগাল। শেষ মিনিটে ইরান গোল মিস করায় নাটকীয়ভাবে পরের রাউন্ডের টিকিট পেয়ে যায় পর্তুগিজ। কিন্তু এই শক্তিমত্তা নিয়ে কি অপ্রতিরোধ্য উরুগুয়েকে হারাতে পারবে রোনালদোরা? পর্তুগিজ-উরুগুয়ে ম্যাচে থাকবে ‘এল ক্ল্যাসিকো’ এবং ‘মাদ্রিদ ডার্বি’-র ছায়া! রিয়াল মাদ্রিদের সেরা তারকা রোনালদো বনাম বার্সেলোনা তারকা লুইস সুয়ারেজ। তবে আসল লড়াইটা হবে রোনালদোর সঙ্গে উরুগুয়ের অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের দুই ডিফেন্ডার দিয়েগো গর্ডিন ও হোসে জিমেনেজের।

প্রথম দুই ম্যাচে চার গোল করে রোনালদো দেখিয়েছেন তার ক্যারিশমা। তার প্রতিটি গোলই ছিল অসাধারণ। যদিও শেষ ম্যাচে একটি পেনাল্টি মিস করেছেন তিনি। তারপরও এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার তো রোনালদোই। তবে সিআর-সেভেনকে আটকানোর মতো যথেষ্ট সামর্থ্য আছে ল্যাটিন দলটির।

মজার বিষয় হচ্ছে, রোনালদোকে আটকে দিতে পারলেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে উরুগুয়ের। কেননা ল্যাটিন দলটির রক্ষণভাগ যতটা ইস্পাত কঠিন ততটা শক্ত নয় পর্তুগালের ডিফেন্স। লুইস সুয়ারেজকে আটকাবে কে? অবশ্য বার্সা তারকা একা নন, তার সঙ্গে রয়েছেন এডিনসন কাভানি। এই জুটিই পর্তুগালের রক্ষণভাগ তছনছ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে পর্তুগালের ডিফেন্স ততটা আস্থার পরিচয় দিতে পারেনি। বার বার বিধ্বস্ত হয়েছে। স্পেন, মরক্কো, ইরান —তিন দলের বিরুদ্ধেই নাভিশ্বাস বেরিয়ে গেছে পর্তুগিজ রক্ষণভাগের। তিন ম্যাচে চার গোল হজম করতে হয়েছে। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে উরুগুয়েই একমাত্র দল, যারা কোনো গোল হজম করেনি। তাদের রক্ষণভাগ যেন ইস্পাত কঠিন।

তবে এটাও ঠিক যে, রোনালদো তার নিজের দিনে সব ভেঙে চুরমার করে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। তা ছাড়া এই পর্তুগাল কিন্তু বর্তমানে ইউরো সেরা। যদিও ২০১৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় নেই দলে। কিন্তু খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছে জয়ের তীব্র ক্ষুধা, আছে আত্মবিশ্বাস। আর যে দলে রোনালদোর মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার নেতা সে দলের খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত হওয়ার জন্য বাড়তি কিছুর প্রয়োজন নেই।

দুই দলের ‘হেড টু হেড’ লড়াইয়ে এগিয়ে পর্তুগাল— একটি করে জয় ও ড্র। তবে বিশ্বকাপে অতীতের রেকর্ড কোনো ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় না। আজ রোনালদো আটকে দিতে পারলেই বাজিমাত করে ফেলবে উরুগুয়ে।

সর্বশেষ খবর