সোমবার, ২ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রধান

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ

কূটনৈতিক ও নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংক প্রধান জিম ইয়ং কিম। জাতিসংঘে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটি ছবি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন মহাসচিব —বাসস

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বলেছেন, সংকট মোকাবিলায় অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তারা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানে বাংলাদেশের মহানুভবতার প্রশংসা করেন এবং এই বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে জানান। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করবে বলেও তারা আশ্বস্ত করেছেন। জানা যায়, জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান তাদের ফুল দিকে স্বাগত জানান। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এ সময় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেন তারা। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে নেতারা এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখায় তাদের সংকল্পের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে আসেন। প্রেস সচিব বলেন, তারা মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়াবলি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। দীর্ঘকাল ধরে, সেই ১৯৭৭ সাল থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে থাকার বিষয়েও তিনি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কেবল মানবিক কারণে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেছে, কেননা এ দেশের জনগণেরও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে শরণার্থী হিসেবে অনুরূপ আশ্রয় গ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে একটি দ্বীপে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে যেখানে তারা জীবনযাপনের জন্য আরও ভালো অবস্থা পাবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার এটার বাস্তবায়নে এখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা : শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও জিম ইয়ং কিম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন। উন্নয়ন সহযোগী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির প্রশংসা করেন তারা। এতে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে অভিযাত্রা উদযাপনকালে এ দুই সংস্থা প্রধানের আগমন বাড়তি মাত্রা যোগ করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমরা দ্রুত বর্ধনশীল একটি যুগে বসবাস করছি। বিশ্বায়নের এই সময়ে কোনো দেশ একা কাজ করতে পারে না। কোনো দেশের হুমকি বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব জাতি ও সংগঠনকে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

মিয়ানমারে সব ধরনের অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে বিশ্বব্যাংক- অর্থমন্ত্রী :অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের দেশ ও জাতির জন্য একটি জটিল জাতীয় সমস্যা। সফররত বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল এক যৌথ ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। এদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চাপ বাড়াতে বিশ্বব্যাংক মিয়ানমারের সব ধরনের প্রজেক্টে অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে, শুধু রিলিফগুলো চালু রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটি বড় বোঝা। এ জটিলতা নিরসনে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, যা আমাদের একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এরকম একটা সংকটময় মুহূর্তে বিশ্বব্যাংককে পাশে পাওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আমরা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত পাঠাতে চাই। এর জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শরণাপন্ন হয়েছি। তারই অংশ হিসেবে আজকে আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘের মহাসচিবকে কাছে  পেয়েছি।’ পরে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চাপ বাড়াতে বিশ্বব্যাংক মিয়ানমারের সব ধরনের প্রজেক্টে অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে, শুধু রিলিফগুলো চালু রয়েছে। মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটা বড় ধরনের আক্রমণও।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক প্রধানের এ সফরের মাধ্যমে বিশ্ব সচেতনতা জাগ্রত হচ্ছে। তারা আসায় সবচেয়ে বড় ইমপেক্ট আছে, বিশ্ব এ সম্পর্কে সচেতন আছে এটা হাইলাইট করাই বিগেস্ট গেম। এর ফলে হয়তো মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। 

বৈঠক ও নৈশভোজ : গতকাল বিকালে র‌্যাডিসন হোটেলে বাংলাদেশে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি টিমের সঙ্গে বৈঠক করেন গুতেরেস। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়োজনে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ভোজসভায় যোগ দেন।

আজ যাচ্ছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে : আজ বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতিসংঘ হাইকমিশনার।

সর্বশেষ খবর