রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

হামলা আশঙ্কায় পুলিশে ১৯ দফা নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের স্থাপনা, চেকপোস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার আশঙ্কা করছে পুলিশ। আর এই হামলা মোকাবিলায় সতর্ক থাকার পাশাপাশি পুলিশকে ১৯ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সদর দফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য দিয়ে বলেছে, এ নির্দেশনা পুলিশের সব ইউনিটপ্রধান, র‌্যাব মহাপরিচালকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্টে সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হন। বাড্ডায় খুনের পর অপরাধীরা ঢাকার গুলশানের চেকপোস্টে গুলি করে পালিয়ে যায়। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ১৯ দফা নির্দেশনা পালনের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি, এসবি, সিআইডি, র‌্যাব সদর দফতরসহ সব পুলিশ স্থাপনায় স্ক্যানিং করে গাড়ি প্রবেশ ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রবেশের আগে সেই গাড়ি ও ব্যক্তিগত সামগ্রী তল্লাশি করতে হবে। আগতদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে হবে। থানাসহ স্থাপনাসমূহে সাহায্যকারী, দর্শনার্থীদের নাম-ঠিকানা ও তাদের আগমনের উদ্দেশ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদর দফতর, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, অস্ত্রাগার ও পুলিশ লাইনসের প্রবেশপথে নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ ও তল্লাশির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। সূত্র জানায়, ক্যাম্প ও ফোর্সের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, থানা কিংবা স্থাপনার মেইন গেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে সেগুলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে নির্মাণ অথবা মেরামত করা, ঝুঁকিপূর্ণ পুলিশ স্থাপনাসমূহের সীমানাপ্রাচীর উঁচু করা অথবা কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাতে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, থানাসহ পুলিশ ইউনিটসমূহে মেইন গেট বন্ধ রেখে পকেট গেট খোলা রাখতে হবে। কেউ পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তার নাম-পরিচয় নিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, নম্বরবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুলিশ স্থাপনাসমূহে প্রবেশ করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ অনুযায়ী ইউনিটপ্রধানদের ভেহিকেল সার্চিং মিরর, হ্যান্ড হল্ড মেটাল ডিটেক্টর, টর্চ, হ্যালোজেন লাইট ও সিকিউরিটি লাইট নিশ্চিত করতে হবে। সব ইউনিটপ্রধানকে নিরাপত্তার বিষয়ে নিয়মিত ফোর্সেস ব্রিফিং ও দায়িত্ব পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অফিসপ্রধানরা সময়ে-অসময়ে আকস্মিকভাবে তার অধীন ইউনিটসমূহ পরিদর্শন করবেন। কোনো ক্ষেত্রে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, অধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পেশাগত জ্ঞান, অস্ত্র চালানোর সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা সচেতনতা সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হবেন। সব অফিসার ও ফোর্সকে মাঝে মাঝে অস্ত্র খোলা, জোড়া লাগানো, অস্ত্রের নিরাপত্তা, অস্ত্র চালানোর কৌশল রপ্ত করার বিশয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউনিটপ্রধানরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন। বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইউনিটপ্রধানরা পিআরবিতে বর্ণিত বিধিবিধানের কোনো ব্যত্যয় ব্যতীত পরিপূর্ণভাবে পালন করবেন। পুলিশ সুপার ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট নির্ধারিত/আকস্মিক পরিদর্শনে গেলে পুলিশ ইউনিটসমূহের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই পরিদর্শন করবেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। পুলিশ ইউনিটসমূহের নির্দেশাবলি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা পেশাগত কারণে কঠোর ও বিনয়ী হবেন এবং কোনোক্রমেই যাতে অহেতুক হয়রানি না হয়, ইউনিটপ্রধানরা সে বিষয়ে নিশ্চিত করবেন। এ সংক্রান্তে ‘বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য ও স্থাপনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়ে কয়েকজন পুলিশ সুপার (এসপি) জানান, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা আমরা হাতে পেয়েছি। সে অনুযায়ী কাজ করছি। বিশেষ করে পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর