শিরোনাম
সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফাইনালে যাবে কারা

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সামারা থেকে

ফাইনালে যাবে কারা

বেলজিয়ামের লুকাকু, ফ্রান্সের এমবাপ্পে ও ক্রোয়েশিয়ার মদ্রিচ জ্বলে উঠতে চান —এএফপি

ট্রেন স্টেশনকে রাশানরা বকজাল বলে। সামারার বকজালে আসতেই দেখা গেল, গোল হয়ে একদল ফিফা ভলান্টিয়ার ও সাধারণ জনতা ছোট্ট এক মোবাইলে রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া টাইব্রেকার দেখছে। একে একে টাইব্রেকারের শট নেওয়া দেখে রাশানরা কখনো উল্লসিত কখনো ব্যথিত হয়েছে। এরপর রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর রাশানরা একেবারেই চুপসে যায়। আগে থেকেই মদের বোতল শেষ করে মাতাল হয়েছিল অনেকে। এবার যেন পুরো রাশিয়াই মাতাল হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

সামারার বকজালের প্রবেশমুখেই বেশ কয়েকজন মাতাল রাশিয়ান সমর্থক। দূর থেকেই হাত উঁচিয়ে কী যেন বলতে লাগল রুশ ভাষায়। হয়ত সান্ত্বনা খুঁজছিল! হাত বাড়িয়ে দিতেই তা লুফে নিল। তারপর হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠল। রাশিয়া বিদায় নেওয়ায় রাশিয়ানরা যে কী কষ্ট পেয়েছে, তা বলে বুঝানোর মতো নয়। কিন্তু রাশিয়া তো যোগ্য প্রতিপক্ষের কাছেই হেরেছে। ক্রোয়েশিয়া এমন এক দল, যারা আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে। যারা ডেনমার্ককে হারিয়েছে। কিন্তু রাশানরা এবার খুব করে আশা করেছিল, বিশ্বকাপ জিতবে বলে। আকিনফেভদের ঘিরে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেছিল তারা।

 কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই শেষ হলো। ৩২ দলের বিশ্বকাপে টিকে রইল কেবল চারটা। ফ্রান্স-বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া। এবার ফাইনালে উঠার লড়াই। কারা যাবে ফাইনালে? কারা জিতবে ২১তম বিশ্বকাপ? মিলিয়ন ডলারের এই প্রশ্নের উত্তরটা কেবল ১৫ জুলাই পাওয়া যাবে। তবে এরই মধ্যে সারা দুনিয়ায় কোটি কোটি ডলারের জুয়া খেলতে শুরু করেছে অনেকে। কারও বাজি ফ্রান্স। বিশ্বকাপ শুরুর আগে যে পাঁচটা দলকে শীর্ষ ফেবারিট বলে ধরা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেবল টিকে আছে ফ্রান্সই। কিলিয়ান এমবাপ্পে, আঁতোয়ান গ্রিজমান, পল পগবা, স্যামুয়েল উমতিতি, রাফায়েল ভারানেদের নিয়ে গড়া দলটা যেন বিশ্বকাপ জয়ের জন্যই রাশিয়া এসেছে। প্রতিটা ম্যাচেই নিজেদের প্রমাণ করেছে তারা। চাপের মধ্যেও জয়ের জন্য ছুটতে পারে ফরাসিরা। অন্যদিকে বেলজিয়াম। এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করেছে তারা। পাঁচ ম্যাচে ১৪টি। তাদের গোল করার এই ক্ষমতা, ফ্রান্সের মতো দলকেও উড়িয়ে দিতে পারে। সেন্ট পিটার্সবার্গে ১০ জুলাইয়ের সেমিফাইনালে ফ্রান্স-বেলজিয়াম লড়াইয়ের ফেবারিট কে, বলা কঠিন। দুই দলের যে কোনোটা উঠে যেতে পারে ফাইনালে। বড় ম্যাচে জয়ের অভিজ্ঞতা আছে দুই দলেরই। ফ্রান্স বিদায় করেছে আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়েকে। অন্যদিকে বেলজিয়াম বিদায় করেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে। নাহ্, এই ম্যাচে কাউকে এগিয়ে রাখা মুশকিল। বিশেষ করে, দুটি দলই ইউরোপিয়ান ফুটবলের খুব পুরনো দল হওয়ায় বিষয়টা আরও কঠিন।

মস্কোতে ১১ জুলাই দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া। এই ম্যাচে ইংলিশদেরই এগিয়ে রাখতে হয়। টুর্নামেন্টজুড়ে তারা কেবল একটা ম্যাচই হেরেছে। বেলজিয়ামের কাছে, গ্রুপ পর্বে। বাকি ম্যাচগুলোতে জিতেছে দাপুটে ফুটবল খেলে। অন্যদিকে গ্রুপ পর্বে দারুণ খেললেও ক্রোয়েশিয়া নকআউট পর্বে টাইব্রেকারের সুবিধা নিয়েই জিতেছে। রাশিয়ার বিপক্ষেও তো টাইব্রেকারে জিতেই তারা সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল। ভাগ্য কী প্রতিদিন আর এভাবে সাহায্য করবে! বলা কঠিন। তবে এই ম্যাচে ইংল্যান্ডকেই ফেবারিট বলে ভাবছেন সবাই।

ফাইনালটা তাই ইংল্যান্ডের সঙ্গে হতে পারে ফ্রান্স অথবা বেলজিয়ামের। তবে বেলজিয়াম-ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল হলেও মন্দ হয় না। বিশ্বকাপে নতুন এক চ্যাম্পিয়নের দেখা মিলবে। এর আগে ফরাসিরা ১৯৯৮ সালে এবং ইংল্যান্ড ১৯৬৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফরাসিরা শেষবার ফাইনাল খেলল ২০০৬ সালে। অন্যদিকে বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়ার সর্বোচ্চ অর্জন বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা। বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়ার জন্য ফাইনাল হবে পুরোপুরিই এক নতুন অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি ফুটবল দুনিয়ার জন্যও!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর