সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
সেই গুহা থেকে চার কিশোর উদ্ধার

জীবন-মরণ অভিযান

প্রতিদিন ডেস্ক

জীবন-মরণ অভিযান

থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ‘থাম লুয়াং ন্যাং নন’ গুহায় আটকে পড়া একটি কিশোর ফুটবল দলের ১৩ সদস্যের মধ্যে সর্বশেষ খবর পর্যন্ত চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদেরও যথাসময়ের মধ্যে উদ্ধার করা হবে। উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল টিমের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। উদ্ধার হওয়াদের একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে চিয়াং রাই হাসপাতালে নেওয়া হয় বলেও খবরে বলা হয়। এর আগে আটকে পড়াদের উদ্ধারে স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ১০টা থেকে অভিযান শুরু করে কর্তৃপক্ষ। অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছয়জনকে জীবিত উদ্ধারের এ খবর এলো।

গত ২ জুলাই দুজন ব্রিটিশ ডুবুরি গুহার ভিতরের এক জায়গায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের জীবিত সন্ধান পান। তবে নানা জটিলতা ও ঝুঁকি থাকায় সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার অভিযান শুরু করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে জীবিত সন্ধান পাওয়ার পাঁচ দিন পর গতকাল ১৮ সদস্যের একটি বিশেষায়িত দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এ লক্ষ্যে তারা ভূগর্ভস্থ বন্যা প্লাবিত টানেল নেটওয়ার্কে নামে। বিশেষজ্ঞ দলটি গুহার চার কিলোমিটার ভিতরে আটকা সদস্যদের এ টানেল দিয়েই এক এক করে বের করে নিয়ে আসার কথা। কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ এ উদ্ধার অভিযান শেষ হতে দুই থেকে তিন দিন লাগতে পারে বলে উত্তরাঞ্চলীয় রাই প্রদেশের গভর্নর নারংসাক ওসতথানাকর্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

উদ্ধার প্রসঙ্গে চিয়াং রাই স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ও উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তোসাথেপ বুনথং বলেন, ‘দুই কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছে। গুহার কাছে স্থাপিত ফিল্ড হাসপাতালে তারা অবস্থান করছে। আমরা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। তাদের এখনো চিয়াং রাই হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়নি।’ তবে এপি তাদের খবরে জানিয়েছে, অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই দুটি অ্যাম্বুলেন্সকে গুহার কাছ থেকে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। আর এএফপি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বরাতে জানায়, আরও দুই কিশোর উদ্ধার ক্যাম্পে পৌঁছেছে। তারা শিগগিরই গুহা থেকে বেরিয়ে আসবে।

এর আগে উদ্ধার অভিযান শুরু প্রসঙ্গে প্রাদেশিক গভর্নর জানান, গুহার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে ফুটবল দলের সদস্যরা শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরো ফিট। সেই সঙ্গে তারা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধও। একজন চিকিৎসক তাদের সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। উদ্ধার পরিকল্পনা সম্পর্কে গুহায় আটকে পড়া পরিবারের সদস্যদের আগেভাগে অবহিত করা হয়েছে বলেও যোগ করেন গভর্নর। 

প্রাদেশিক গভর্নর নারংসাক আরও জানান, গুহার ভিতরকার গুরুত্বপূর্ণ চেম্বারগুলোর (বড় জায়গা) তিনটিতে অর্থাৎ চেম্বার ১, চেম্বার ২ ও চেম্বার ৩-এ পানির স্তর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে গেছে। এমনকি গুহার কিছু কিছু স্থানে পানির স্তর ৩০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ১১ দশমিক ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত কমে গেছে, যা গত ১০ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। সেই সঙ্গে স্থানীয় সময় রবিবার থেকে ফের ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাই গতকালকেই উদ্ধার অভিযান শুরুর মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

স্থানীয় ‘ওয়াইল্ড বোরস’ ফুটবল টিমের সহকারী কোচসহ ১৩ কিশোর সদস্য গত ২৩ জুন উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই অঞ্চলের ‘থাম লুয়াং ন্যাং নন’ গুহায় ঘুরতে গিয়ে আকস্মিক ভারি বর্ষণে সেখানে আটকা পড়ে। বহুজাতিক বিশেষজ্ঞদের যৌথ চেষ্টায় ঘটনার ৯ দিন পর ২ জুলাই গুহার ভিতরে এক ছোট্ট জায়গায় তাদের জীবিত সন্ধান পায় দুই ব্রিটিশ ডুবুরি। তবে জায়গাটি বন্যা প্লাবিত, সংকীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আটকে পড়াদের নিরাপদে উদ্ধার করে নিয়ে আসা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। উদ্ধারে সম্ভাব্য কয়েকটি উপায় সাফল্যের মুখ না দেখায় শেষ পর্যন্ত তাদের ভূগর্ভস্থ সংকীর্ণ টানেল দিয়েই বাইরে বের নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ যে সরু টানেল দিয়ে আটকে পড়াদের বের করে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে সেসব টানেলে পানির স্তর কিছুটা নিচে নেমে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ গতকাল থেকেই উদ্ধার অভিযান শুরু করে। উদ্ধারকারী দলে ১৩ জন বহুজাতিক বিশেষজ্ঞ ডুবুরি ও থাই রয়্যাল নেভি সিলের পাঁচজন সদস্য রয়েছেন। উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রাদেশিক গভর্নর নারংসাক ওসতথানাকর্ন। অভিযান শুরু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি আজ (গতকাল) সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আজ (গতকাল) হচ্ছে ডি-ডে।’

গভর্নর আরও জানিয়েছেন, আটকে পড়াদের আলাদা আলাদাভাবে বের করে নিয়ে আসা হবে। টানেলে ঝুঁকি থাকায় এ সময় দুজন করে ডুবুরি প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে থাকবেন। যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সময় গতকাল রাত ৯টার সময়ই তাদের গুহার বাইরে বের হয়ে আসার আশা করা হচ্ছে। কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছর। আর তাদের সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওয়ের বয়স ২৫। গুহার প্রায় চার কিলোমিটার ভিতরে এখন তারা অবস্থান করছে। গুহার প্রবেশমুখ থেকে সে জায়গায় আসা-যাওয়া করতে প্রায় ১১ ঘণ্টা লাগবে। এ হিসাবে আটকে পড়া সবাইকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে কয়েক দিন লাগতে পারে বলে প্রাদেশিক গভর্নর জানিয়েছেন। উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সবাইকে বের করে আনতে দুই থেকে তিন দিন লাগতে পারে।

যেভাবে উদ্ধার করা হবে আটকে পড়াদের :  গুহার ভিতরকার চেম্বার ১, ২ ও ৩ কেন্দ্র করেই মূলত উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভিযানের কমান্ড সেন্টার (যেখান থেকে অভিযানের সামগ্রিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে) স্থাপন করা হয়েছে চেম্বার তিনে যা প্রবেশমুখ থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার ভিতরে। ১৮ সদস্যের উদ্ধারকারী দল কমান্ড সেন্টার থেকেই বিস্তীর্ণ, পানি প্লাবিত ও জটিল টানেল নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে প্রথমে আটকে পড়াদের কাছে পৌঁছাবেন। এরপর টানেলের মধ্য দিয়ে আটকে পড়াদের এক এক করে কমান্ড সেন্টার অর্থাৎ চেম্বার তিনে নিয়ে আসা হবে। চেম্বার তিনে পৌঁছানোর পর আটকে পড়াদের পৃথক একটি বিশেষজ্ঞ দলের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই বিশেষজ্ঞ দলটি এরপর উদ্ধার হওয়াদের স্ট্রেচারে করে গুহার চেম্বার এক ও দুইয়ের মধ্য দিয়ে বাইরে বের করে নিয়ে আসবেন। বাইরে নিয়ে আসার পরপরই অপেক্ষারত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। অপারেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাই নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।

এদিকে থাই প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রায়ুথ চান ওচা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন বলে সরকারের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন। আজ তার সেখানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী আটকে পড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং উদ্ধার অভিযান তত্ত্বাবধান করবেন বলে মুখপাত্র  জানিয়েছেন। সিএনএন, বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর