মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিএনপির প্রতীকী অনশন

খালেদাকে কারাগারে রেখে নির্বাচন হবে না

ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে এ দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল এ দেশে নির্বাচন হবে, অন্যথায়      নির্বাচনই হবে না। সব রাজনীতিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য শুধু নয়, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য নয়। আজকে এ দেশের মুক্তির জন্য, ১৬ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য, মানুষকে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার  জন্য, স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলন ছাড়া এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনো উপায় নেই।’ গতকাল বিকালে রাজধানীতে বিএনপির পূর্বঘোষিত টানা ৭ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে সভাপতির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল সবার প্রতি এই ঐক্যের আহ্বান জানান। উচ্চ আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের প্রতিবাদে এবং তাঁর মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে ঢাকার গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে কর্মসূচি পালিত হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো ধরনের জাতীয় নির্বাচন হবে না। বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ অংশ নেন। এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, বিএনপি নেতা বেলাল আহমেদসহ অন্যান্যরা বসে এই অনশনে অংশ নেন। দল ও জোটের নেতাদের বাইরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না মহানগর নাট্যমঞ্চের অনশনে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুত্ফর রহমান, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীসহ শরিক দলের অন্য নেতারাও অনশনে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ও দলের সিনিয়র নেতাদের জুস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান। সারা দেশে জেলা পর্যায়েও গতকাল একই কর্মসূচি পালন করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। সকাল নয়টার আগে থেকেই অনশনে যোগ দিতে দলের হাজারও নেতা-কর্মী ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনে এসে হাজির হন। সেখানে মাদুর বিছিয়ে যথাসময়েই অনশনে বসেন তারা। বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। অনশন কর্মসূচিতে বেগম খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ উল্লেখ করে অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। সভাপতির বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করার ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের উদ্দেশ্য একটাই, খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করা। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের এখন একটাই ষড়যন্ত্র, সেটি হলো খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি ও ২০ দলকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করার। কিন্তু দেশের জনগণ সেটি কখনই হতে দেবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তারপর জাতীয় নির্বাচনের চিন্তা করতে হবে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার মামলায় উচ্চ আদালত দ্রুত শুনানির নির্দেশ দিলে নিম্ন আদালত শুনানি করছে ঠিকই কিন্তু জামিন বাতিল করছে। কাজেই এই প্রক্রিয়ায় কিছু হবে না।

 আন্দোলন করেই দেশনেত্রীকে কারামুক্ত করতে হবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, পৃথিবীতে অনেক রাষ্ট্রনায়ককে কারাগারে যেতে হয়েছে এবং মুক্তি পেয়েছেন। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকবেন, এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তিনি তাঁর সুচিকিৎসা তো পাবেন, সেটা তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না।

চট্টগ্রামে প্রতীকী অনশন : সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম বিএনপিও খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে প্রতীকী অনশন পালন করেছে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, আবদুল মান্নান, জাসাস নেত্রী জেলী চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর