বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

অপ্রতিরোধ্য ইংল্যান্ড, ভয়হীন ক্রোয়েশিয়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে

অপ্রতিরোধ্য ইংল্যান্ড, ভয়হীন ক্রোয়েশিয়া

মডরিচ ও হ্যারি কেইন। দুই দলের প্রধান ভরসা —এএফপি

এক অদ্ভূত শিহরণ জাগছে ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকদের মনে! এবার হবে! ২০ বছর আগে যা হয়নি, এবার তা হতেই পারে। দিনে দিনে নিজেদের অস্ত্র ধার দিয়ে যুদ্ধের উপযোগী করে তুলেছে দলটা। চূড়ান্ত একটা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আজ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া। লুঝনিকি স্টেডিয়ামের এই লড়াইয়ে কে জিতবে? তারুণ্যনির্ভর দল ইংল্যান্ড, নাকি অভিজ্ঞ ক্রোয়েশিয়া? বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে আসার পর কোনো দলকে আর অনভিজ্ঞ বলা যায় না। কোনো দলকেই এককভাবে শ্রেষ্ঠত্বও দেওয়া যায় না। ফেবারিটের তকমাটা দুই দলই সমানভাবে দাবি করতে পারে। ক্রোয়েশিয়া দলের অন্যতম তারকা ফুটবলার মারিও মানজুকিচ এমন কথাই বললেন সংবাদ সম্মেলনে। ‘ইংল্যান্ড দলটাকে তরুণ ভাবতে পারেন। অনেকেই বলে তারা অতটা অভিজ্ঞ নয়। কিন্তু বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে যে দল, তাদের অভিজ্ঞতার কমতি আছে বলে আমি মনে করি না।’ সেমিফাইনালে তাই ইংল্যান্ডের সম্ভাবনাও কম দেখেন না ক্রোয়েশিয়ান এই তারকা ফুটবলার। মানজুকিচের কথাই হয়ত ঠিক। ইংল্যান্ড সেমিফাইনালের পথে হারিয়েছে কলম্বিয়া এবং সুইডেনের মতো দলকে। গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামের কাছে হারলেও ইংল্যান্ড দলটার দুরন্তপনায় মুগ্ধ সবাই। ইংল্যান্ড সমর্থকরা এতটাই উত্তেজিত, বিশ্বকাপ ছাড়া আর বাড়ি ফিরবেই না যেন! ‘ইটস কামিং হোম’ গানের সুরে মুগ্ধ করছে তারা প্রতিপক্ষদেরও।

মারিও মানজুকিচ অবশ্য ইংল্যান্ড দলকে সম্মান করলেও নিজেদের ওপরও আস্থা রাখছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান রেখেই মাঠে খেলতে যাব। তবে একটা কথা বলি রাখি, আমাদের কোনো ভয় নেই।’ কেন যে ভয় নেই, তারও ব্যাখ্যা দিলেন এই জুভেন্টাস তারকা। ‘আমরা বিশ্বকাপের আগে ভাবিনি এতদূর আসব। প্রতিটা ম্যাচই জিততে চেয়েছি কেবল। সামনের ম্যাচটা নিয়েই ভেবেছি। সেমিফাইনালে উঠে আসার পর আমরা এখন বিশ্বকাপটা উপভোগ করছি।’ সত্যিই তো! ক্রোয়েশিয়া অনেক ভালো দল। এই দলে লুকা মডরিচ আছেন। মারিও মানজুকিচ আর আইভান রাকিটিচদের মতো তারকা ফুটবলার আছেন। তারপরও কে ভেবেছিল, আর্জেন্টিনার মতো দলকে তারা হারিয়ে দিবে! কে ভেবেছিল ডেনমার্ককে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আসবে! শেষ আটের লড়াইয়ে রাশিয়াকে পেয়ে অবশ্য তাদের সুবিধাই হয়েছিল অনেকটা। এই পর্বে রাশিয়ার পরিবর্তে স্পেন থাকলে, ক্রোয়েশিয়ার কাজ বেশ কঠিন হতো। এই কারণেই ক্রোয়েশিয়ার এখন আর কোনো ভাবনা নেই। বিশ্বকাপ উপভোগ করাটাই যেন তাদের কাজ। কোনো চাপ নেই। চাপমুক্ত এই ক্রোটরা ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিতে পারে ১৯৬৬’র চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের জন্য।

পরিসংখ্যান বলছে, ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া লড়াই বেশ ভালোই জমে ইউরোপিয়ান ফুটবলে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ক্রোয়েশিয়াকে ইংলিশরা হারিয়েছিল ৪-১ ও ৫-১ ব্যবধানে। তবে এর আগেই ইউরো কাপের বাছাই পর্বে ক্রোয়েশিয়া হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে ২-০ ও ৩-২ ব্যবধানে। অবশ্য দুই দলের স্মরণীয় লড়াই ইউরো কাপের গ্রুপ পর্বে। ২০০৪ সালে ইউরো কাপে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেবার ওয়েইন রুনি ছিলেন ম্যাচের তারকা। দুটি গোল করেছিলেন তিনি। অতীতে সাতবারের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার ২ জয়ের বিপরীতে ইংলিশরা জিতেছে চারবার। একবার ড্র। কিন্তু অতীত পরিসংখ্যান দিয়ে কখনোই বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো ম্যাচের বিচার করা ঠিক হবে না। এই কারণেই আজকের ম্যাচে ফিফটি-ফিফটি সুযোগ রয়েছে দুদলের।

ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ইতিহাস, ডেভর সুকারের গোল্ডেন বুট জয়ের ইতিহাস। ইংল্যান্ডের ইতিহাস, বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস। গ্যারি লিনেকারের গোল্ডেন বুট জয়ের ইতিহাস। আজ কী হবে? দুদলের কে যাবে বিশ্বকাপের ফাইনালে? কারা লিখবে নতুন ইতিহাস?

সর্বশেষ খবর