শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্রিটিশ বিমানের বোর্ডিং কার্ড নিয়ে দিল্লি এসেছিলেন কার্লাইল

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

ব্রিটিশ এমপি লর্ড কার্লাইল বুধবার মধ্যরাতে দিল্লি থেকে লন্ডন উড়ে গিয়ে গতকাল সেখান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন করেন। তার এই কার্যকলাপকে ভারত সরকার সম্পূর্ণ ‘অযৌক্তিক এবং অপ্রয়োজনীয়’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ‘নাটক’ শব্দ ব্যবহার না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রভীশ কুমার বলেন, ‘লর্ড কার্লাইলকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার ই-ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

তা সত্ত্বেও তিনি সুপরিকল্পিতভাবে লন্ডন থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে রাতে দিল্লি এসে পৌঁছান। তার এ সফর যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তার প্রমাণ তিনি জেনেশুনেই ওইদিন রাতের ব্রিটিশ বিমানের ফিরতি বোর্ডিং কার্ড নিয়েই এসেছিলেন। কাজেই তিনি যে কথা বলছেন ভিসা বাতিল হয়েছে এটা আগে তার জানা ছিল না, তার এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’ মুখপাত্র আরও কঠোর শব্দ ব্যবহার করে বলেন, ‘ওনার (কার্লাইলের) উদ্দেশ্য ছিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক নষ্ট করা এবং বাংলাদেশের বিরোধী দল (বিএনপি) সম্পর্কেও একটা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা।’ তিনি বলেন, ‘ভারত সরকারের বরাবরের নীতি হলো বাংলাদেশের শাসক ও বিরোধী দলের সঙ্গে বার্তালাপ করা। প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোনো নেতাই বাংলাদেশ সফর করার সময়ে প্রতিবারই বিরোধী দলের সঙ্গেও বার্তালাপ করে থাকেন।’ লর্ড কার্লাইল ভিডিও কনফারেন্সে এও অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশের চাপেই ভারত সরকার প্রেস বার্তা বাতিল করে। তার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকার ভারতীয় কার্যকরী হাইকমিশনারকে তলব করে চাপ দেন। ভারতের মুখপাত্র এ অভিযোগ খারিজ করে বলেন, ‘লর্ড কালাইল ভারতীয় ভিসাপ্রাপ্তির নিয়ম মানেননি বলেই তার ভিসা খারিজ করা হয়।’ রভীশ কুমার বলেন, ‘ই-ভিসার জন্য উদ্দেশ্য লিখতে হয়। তিনি বিজনেস আবেদন করে ই-ভিসা পেয়েছিলেন। অথচ তিনি ভারতে এসে রাজনৈতিক সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন। সেটা নিয়মবিরুদ্ধ। যদি আপনি বিদ্যার্থী ভিসার জন্য আবেদন করে কোনো দেশে চাকরি করতে শুরু করেন তাহলে সেটা যেমন বেআইনি হবে লর্ড কার্লাইলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’ তিনি এও বলেন, ‘সব জানা সত্ত্বেও কার্লাইল এমপি জোর করে ভারতে আসেন বলেই তার আচরণ সন্দেহজনক।’ বলেন, ‘তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করা, দুটি দেশের সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করা এবং বিএনপি সম্পর্কেও বিভ্রান্তি তৈরি করা।’ রভীশ কুমার বলেন, ‘কার্লাইল এই সংবাদ সম্মেলন লন্ডনে বসেও করতে পারতেন। কেন তাকে ভারতে আসতে হবে।’ কার্লাইল বলছিলেন, তিনি প্রথমে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভিসা না দেওয়ায় ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গত বুধবার রাতেই তিনি দিল্লির ব্রিটিশ হাইকমিশনেও ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পাননি বলে তিনি নিজেই বলেন।

মুখপাত্র বলেন, ‘তিনি কী ধরনের ভিসা আবেদন করলে আসতে পারতেন তার থেকেও বড় কথা তার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল সেটা দেখা। বিজনেস ভিসা নিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করা যায় না। তিনি তথ্য গোপন করে আসতে চেয়েছিলেন বলেই তার ভিসা আটকে দেওয়া হয়েছে।’ তার আগে দিল্লির পাঁচ তারা হোটেল মেরিডিয়ানে তার লাইভ ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে যেমন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন। বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সঠিক নিয়ম মেনে বিচার হচ্ছে না। তবে কার্লাইল নিজেকে জামায়াত সমর্থক বলতে নারাজ। তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলন করা ছাড়াও তিনি কমনওয়েলথ মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলতে আসছিলেন। একসময় বলতে বলতে তিনি ভারতকে (বাংলাদেশের) দাস মনোভাবের শিকার বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এর পরে তিনি লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করবেন। তার দাবি সংবাদ সম্মেলন করা তার গণতান্ত্রিক অধিকার।

সর্বশেষ খবর