শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেষ চমকের অপেক্ষা!

কাল স্বপ্নের ফাইনাল

শেষ চমকের অপেক্ষা!

রবিবার মহারণ। শেষ মুহূর্তে তাই নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা —এএফপি

লুঝনিকি স্টেডিয়ামের মূল ফটকের বাম পাশে ছোট্ট একটা মাঠ। চারপাশ উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। উঁকি দিলে কেবল একটা মঞ্চ চোখে পড়ে। দূর থেকে বোঝা যায়, কিছু একটা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পরই রুশ ভাষায় মাইকে ঘোষণা চলছে। থেমে থেমে মিউজিক বাজছে, ম্যাজিক ইন দ্য ইয়ার। বেশ বোঝা যায়, বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানের মহড়া চলছে। এক মাস আগে এই মাঠেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়া হয়েছিল। তখন ছিল আনন্দমুখর পরিবেশ। বেজেছিল বিশ্বকাপের আগমনী গান। উৎসবের দিনগুলো শেষ হয়ে গেল খুব দ্রুত। বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে। এবারও অনুষ্ঠান হবে। উৎসব হবে। তবে এই আয়োজনের মধ্যে লুকিয়ে থাকবে বিদায়ের করুণ সুর। চার বছর অপেক্ষার পর মিলেছিল বিশ্বকাপ। আবারও চার বছরের জন্য দূর দেশে চলে যাচ্ছে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ হতে মাত্র একটা দিন বাকি। আগামীকালের সূর্যোদয় কী নিয়ে আসবে? ক্রোয়েশিয়ার উদ্দাম উৎসব নাকি ফরাসিদের শ্যাম্পেইন পার্টি!

রাশিয়া বিশ্বকাপ এরই মধ্যে চমকে দিয়েছে ফুটবল দুনিয়াকে। নতুন দল হিসেবে ফাইনালে উঠে এসেছে ক্রোয়েশিয়া। ১৩তম দল হিসেবে ফাইনাল খেলতে এসে কি বিশ্বকাপের নবম চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে তারা! ২০১০ বিশ্বকাপে ১২তম ফাইনালিস্ট ছিল স্পেন। সেবার তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলেছিল নেদারল্যান্ডস। প্রথমবার ফাইনাল খেলতে গিয়েই বাজিমাত করেছিল স্প্যানিশ আর্মাডা। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্সও। ক্রোয়েশিয়াও কি ফ্রান্স আর স্পেনের পথে হাঁটবে! রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ এই চমক দেখার অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছেন ফুটবল-ভক্তরা। আর ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা জীবনবাজি রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাত্র ৫৬ হাজার ৫৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এক ইউরোপীয় দেশ ক্রোয়েশিয়া। জনসংখ্যা ৪২ লাখ ছুঁই ছুঁই। জনসংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় ছোট্ট দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে ক্রোয়েশিয়া। এদিক থেকে রেকর্ডটা উরুগুয়ের। জনসংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে ছোট্ট দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালই কেবল নয়, জয়ও করেছে উরুগুয়ে। ১৯৯১ সালে সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। স্বাধীন হওয়ার পর নানান দিক থেকেই চ্যালেঞ্জ ছিল ছোট্ট দেশটার এগিয়ে চলার পথে। ফুটবলেও কম বাধা আসেনি। যুগোস্লাভিয়া ছিল দারুণ এক ফুটবল জাতি। বিশ্বকাপে বড় বড় দলগুলোকে হারিয়েছে তারা। রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ফ্রান্সের কাছে তো বিশ্বকাপে কখনই পরাজিত হয়নি যুগোস্লাভিয়া। সেই ফ্রান্সের কাছেই ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। অথচ সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ হিসেবে ফ্রান্সের বিপক্ষে ১০ বার জয় পেয়েছে তারা। হেরেছে ৯টিতে। ১৯৫৪ এবং ১৯৫৮ বিশ্বকাপে যুগোস্লাভিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছিল ফ্রান্স। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ১৯৯৮ সালে তারই প্রতিশোধ হয়তো নিয়েছিল ফরাসিরা। ক্রোয়েশিয়ার সামনে এবার আরও বড় সুযোগ। সেমিফাইনালে হারের প্রতিশোধ ফাইনালে নেওয়াটাই সবদিক থেকে তৃপ্তিকর।

বিশ্বকাপের মঞ্চে আগের চেয়েও দুরন্ত একটা দল নিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপ জয়ের অদম্য বাসনা যাদের কখনো ক্লান্ত হতে দেয় না। টানা তিনটা ম্যাচ ১২০ মিনিট করে কীভাবে খেলল এই দলটা! যাদের প্রথম একাদশের বেশির ভাগই ত্রিশের কোটা পাড়ি দিয়েছে! ফাইনালে এই কারণেই ক্রোয়েশিয়া অনেকটা এগিয়ে থাকবে। ফাইনালটা অতিরিক্ত মিনিটে গড়ালে ফরাসিদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে ম্যাচ। নকআউট পর্বে সব ম্যাচই নির্ধারিত সময়ে জিতেছে ফ্রান্স। অতিরিক্ত মিনিটে খেলতে গেলে অনভ্যস্ত দলটা ভেঙে পড়তে পারে। অবশ্য হিতে বিপরীতও হতে পারে। তিন ম্যাচের ক্লান্তি আছে ক্রোয়েশিয়ার। অন্যদিকে ফরাসিরা এই ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে। কী নিয়ে অপেক্ষায় আছে লুঝনিকি স্টেডিয়ামের সবুজ জমিন! কার গলায় মালা দিতে প্রস্তুত রাশিয়া! আর মাত্র একটা দিন। তবে ফুটবল সমর্থকদের আর যেন তর সইছে না। তারা জমা হয় রেড স্কয়ারে। জমা হয় ক্রেমলিন চত্বরে। স্লোগান তোলে নিজ নিজ দলের নামে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশায় প্রহর গুনছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকরা। কার মুখে ফুটবে শেষ হাসি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর