শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
রাজনীতির হালচাল
উৎকণ্ঠা মাঠের বিরোধ নিয়ে

কোন্দলের আশঙ্কায় জেলা কমিটি করছে না বিএনপি

মাহমুদ আজহার

কোন্দলের আশঙ্কায় জেলা  কমিটি করছে না বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলা কমিটি গঠন নিয়ে আর ভাবছে না বিএনপি। এতে নতুন করে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে দলটি। যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা কমিটি নিয়েই হিমশিম খাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই শাখার থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি নিয়েও দলের ভিতরে-বাইরে উত্তেজনা চলছে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও কারাগারে। সার্বিক বিবেচনায় ভোটের আগে আর কোনো কমিটি না দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ৮১টি। এর মধ্যে ৫১টির কমিটি দেওয়া হয়েছে। ২৭টি জেলায় আংশিক, দুটিতে আহ্বায়ক আর বাকিগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, আরও অন্তত ১৫টি জেলা কমিটি চূড়ান্ত পর্যায়ে। হাইকমান্ড চাইলে এগুলো যে কোনো সময় ঘোষণা করতে পারে। তবে ভোটের আগে এখন কমিটি দিলে কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। বেগম জিয়া জেলে থাকায় এসব সামাল দেওয়াও তখন কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এসব কারণেই আপাতত কমিটি থেকে বিরত থাকছে দলটি।

কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘আপাতত কমিটি গঠনের কোনো সম্ভাবনা নেই। যখন নির্দেশ দেওয়া হবে, তখনই কমিটির কাজ শুরু হবে। তবে আগে থেকেই অন্তত ১৫টি জেলার আংশিক কমিটি চূড়ান্ত হয়ে আছে। হাইকমান্ড চাইলে এগুলো দেওয়া যাবে।’ সূত্রমতে, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এরই মধ্যে বিএনপির জেলা কমিটি না দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও একমত যে, এই মুহূর্তে জেলা কমিটি দিলে সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। এতে তিন সিটিসহ আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।  বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দেওয়া অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ আছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও। কাউন্সিল নেই, সভা-সমাবেশ কিছুই নেই, এ অবস্থায় কমিটি ঘোষণা করার বিপক্ষে তারা। এটা বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলের জন্য লজ্জাজনক বলেও মনে করেন কেউ কেউ। একইভাবে ঢাকা মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়েও স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এখন আমি দলের মধ্যে শুনি দুই দিন পর পর কমিটি দিয়ে দিচ্ছে। সম্মেলন ছাড়া কমিটি দেয় কীভাবে? এই বিএনপি থেকে সব অঙ্গ-সংগঠন থেকে কমিটি দেওয়া-নেওয়ার প্রথা উঠিয়ে ফেলতে হবে। কমিটি হতে হবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে। গণতান্ত্রিকভাবে কমিটি বা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি যদি খারাপও হয় তা যে কোনো পকেট কমিটির  চেয়ে অনেক ভালো হয়। এই সরকারের সময়ে আমাদের দলের সম্মেলন করতে দেওয়া হচ্ছে না। ঠিক আছে, যদি সম্মেলন করতে না দেওয়া হয়, আমরা কৌশলে আলোচনা করে কমিটি করতে পারি।’ জানা যায়, ঘোষিত ৫১টি কমিটি নিয়েও সংকটে বিএনপি। অধিকাংশ জেলা কমিটিই ঢাকা থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের মতামত গুরুত্ব পায়নি। স্থানীয় নেতারা এসব কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। এ কারণে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ হওয়া জেলা কমিটির অনেক ত্যাগী নেতাও এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আগামীতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা এখন অঙ্গ-সংগঠনের জেলা কমিটি নিয়েই ভাবছি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের দুই শাখার কমিটিও দেওয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে হাইকমান্ডের কোনো নির্দেশনা নেই। এখন আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি আন্দোলন-কর্মসূচিতেই আছি।’

সর্বশেষ খবর