লোকটার বুকে ঝুলানো প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘আমার একটা টিকিট চাই’। সুদূর মেক্সিকো থেকে এসেছে। নাম রাফায়েল। ফাইনাল দেখার আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছে মস্কোর প্রাণকেন্দ্র রেড স্কয়ারে। রাফায়েলের মতোই অনেকে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফাইনালের টিকিট কিনতে তারা হাজার হাজার ডলার খরচ করতেও রাজি। কিন্তু টিকিটের দেখা নেই কোথাও!
মিরপুরে টিকিটের জন্য দর্শকরা যেমন হাহাকারে থাকেন। মস্কোতে ফাইনালে শুরুর মুহূর্তে অনেকটা সেই দৃশ্যই দেখা গেল। রেড স্কয়ারে ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকদের আধিপত্য। লাল-সাদা ডোরাকাটা জার্সি গায়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে মধ্যেই দল বেঁধে ছবি তুলছে। ‘আলে, আলে’ কোরাস গাইছে। রেড স্কয়ার দখলে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া সকাল থেকেই। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বিশ্বের নানান দেশ থেকে আসা দর্শকরা। মজার ব্যাপার হলো, সবাই সমর্থন করছে ক্রোয়েশিয়াকে। কোস্টারিকার পতাকা নিয়ে একদল সমর্থক হেঁটে যাচ্ছিল। কোন দল সমর্থন করবে আজ (গতকাল)? প্রশ্ন শুনে ত্বরিত উত্তর, ক্রোয়েশিয়া। পাল্টা প্রশ্ন, তুমি? রিপোর্টারদের কোন দল থাকে না, ভাই। মেক্সিকোর মেয়েটিও মেট্রোতে চড়তে চড়তে বলল, ক্রোয়েশিয়াকেই সমর্থন করব। কেন? কারণ, ওদের খেলা ভালো লাগে। তাছাড়া আরও একটা বিষয়কে খুব গভীরভাবে নিয়েছে ফুটবল সমর্থকরা। নতুন একটা দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হোক। ফ্রান্স ১৯৯৮ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তারা ২০০৬ সালে ফাইনাল খেলেছে। এবারেও না জিতলে ফ্রান্স সাবেক চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই স্বীকৃতি পাবে। নতুন একটা দল চ্যাম্পিয়ন হলে, ফুটবলের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। পুরনো খোলস ছেড়ে বেরুতে পারবে ফুটবল। ২০১০ সালে যেমন পুরো দুনিয়া স্পেনের সমর্থক হয়ে উঠেছিল, এবারে সবাই ক্রোয়েশিয়ার সমর্থক। আর রাশিয়ানরা! যারা কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারল! ওরাও ক্রোয়েশিয়ার সমর্থক। রাশান বন্ধু ভাসিলকে এই প্রশ্ন করতেই হেসে বলল, ‘আজ (গতকাল) ক্রোয়েশিয়াকেই সমর্থন করব আমরা।’ সবাই মিলে! রাশানদের অনেকেই ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে সমর্থন করেছে। মাঠের এই সমর্থনে ম্যাচ শুরু হওয়ার অনেক আগেই ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে গিয়েছিল। রেড স্কয়ারের উৎসবটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। এই কারণেই বুঝি এখানে লোক সমাগম এত বেশি। ভিড় ঠেলে সামনে যাওয়াই মুশকিল। তাছাড়া নিরাপত্তা প্রহরীদের কড়াকড়ি তো আছে। প্রবেশ পথের শেষ নেই। অসংখ্য। চেক পোস্ট শত শত। কিন্তু সব চেক পোস্টেই হাজার হাজার লোকের ভিড়। ফুটবল সমর্থকরা অবশ্য ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ফাইনাল ম্যাচের আগে রেড স্কয়ারে নিজ নিজ দলের জয়ধ্বনি দিতে সবাই মরিয়া। এজন্য রোদের উত্তাপকে উপেক্ষা করাই যায়। রেড স্কয়ারে প্রবেশপথেই একটা মন্দির আছে। মন্দিরের সামনে চার কোণা আকৃতির একটা স্থান। সবাই এখানে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করে। মনোবাঞ্চনা পূরণ হওয়ার আশায়। অনেক ফুটবল সমর্থকদেরই গতকাল ফাইনালের আগে এখানে প্রার্থনা করতে দেখা গেল। গতকাল স্বাভাবিকের চেয়ে উত্তপ্ত ছিল মস্কো। গ্রীষ্মের উত্তাপের সঙ্গে মিশে ছিল বিশ্বকাপ ফাইনালের উত্তাপও!