মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিটিতে অনিয়ম হলে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

সিটিতে অনিয়ম হলে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না বাংলাদেশ

মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন আশা করে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববাসী এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আগামী ৩০ জুলাই বরিশালসহ তিন সিটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে আমরা বিশ্ববাসীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। যে কোনো মূল্যে এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভূলুণ্ঠিত হতে দিতে পারি না।

গতকাল বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকালে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের অডিটরিয়ামে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুজিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাহফুজুর রহমান এবং বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমানসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য বা অন্য কোনো বাহিনীর সদস্যকে অতি উৎসাহী আচরণ করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেওয়া হবে না। প্রার্থীরা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে এবার নির্বাচন কমিশন শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিস) করে বসে থাকবে না। প্রয়োজনে অভিযুক্ত প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বলেন, ভোট নির্বাচন কমিশনের কাছে জনগণের পবিত্র আমানত। কমিশন এই পবিত্রতা নষ্ট করে দেবে না। প্রতিটি ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাবেন, নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন এবং ভোট দেওয়ার পর নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা এই পবিত্র দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মতবিনিময় সভায় বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ক্ষমতাসীনরা পোস্টার সাঁটাচ্ছে। মানি ও মাসেলের ব্যবহার হচ্ছে। জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) মেয়র প্রার্থী বশির আহম্মেদ ঝুনু সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তার সংশয়ের কথা বলেন। কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ অভিযোগ করেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে। এতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব বলেন, বরিশালেও যে খুলনা এবং গাজীপুরের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হবে না তার নিশ্চয়তা কী? জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানান। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ার কারণে কিছু হলেই তার দিকে অঙ্গুলি তোলা হয়। কিন্তু গত কয়েক দিনে বরিশালে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বরিশালেও যেন খুলনা এবং গাজীপুরের মতো নির্বাচন না হয়। সেই সঙ্গে ভোটবাক্স এবং ব্যালট পেপার আগের রাতে কেন্দ্রে না পাঠিয়ে নির্বাচনের দিন ভোরবেলায় কেন্দ্রে পাঠানোর দাবি জানান তিনি। মেয়র প্রার্থীরা ছাড়াও সাধারণ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন কমিশনারের কাছে নানা অভিযোগ করেন এবং এর প্রতিকার দাবি করেন। প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, কী করে একটা ভোটবাক্সে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে, তার জবাব সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে। রাতের বেলায় ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার ঢুকিয়ে রাখবেন আর নির্বাচন কমিশন বসে বসে সেটা দেখবে। পরদিন পত্রিকায় ছাপা হবে। নির্বাচন কমিশন কখনো এটা হতে দিতে পারে না।

সর্বশেষ খবর