বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোট দিলে ক্ষমতায় আসব না দিলে নাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোট দিলে ক্ষমতায় আসব না দিলে নাই : প্রধানমন্ত্রী

গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে নির্বাচন, জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসব। না হলে আসব না। এটা আল্লাহর ওপরও নির্ভর করে, তিনি যদি চান। তবে তার আগেই আমি আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই। মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ, মানুষের পাশে থাকাই আমাদের কাজ। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে (জিটুপি-গভর্নমেন্ট টু পারসন) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পৌঁছার খবর তাদের মোবাইল ফোনে চলে যাবে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সে টাকা তুলতে পারবেন তারা। দেশে সব মিলিয়ে ভাতাপ্রাপ্তদের সংখ্যা এখন প্রায় ৬৭ লাখ। তবে আজ ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার পদ্ধতির আওতায় এসেছেন এক লাখ ১৫ হাজার জন। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান প্রকল্পের অর্থ প্রদান সম্পর্কিত একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকেরা ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আরও সাতটি জেলা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে বয়স্ক এবং পরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের জন্য তিনি ভাতা চালু করেন। পরে চালু হয় প্রতিবন্ধী, হিজড়া, চা শ্রমিক, বেদেদের ভাতা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর হামলার সময় তিনি এলাকায় গিয়ে জেনেছেন, বয়স্ক ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হয়। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে না পারলে যেন এমন কেউ করতে না পারে সে চিন্তা থেকে উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি টাকা পাঠানোর পদ্ধতি চালু করার কথা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন পরিমাণে ভাতা দেব যা দিয়ে আপনি খাদ্য কিনতে পারবেন। কিন্তু কাজ আপনাদের করতে হবে। শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। যারা কর্মক্ষম তারা কাজ করবেন। শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকলে কর্মবিমুখ হয়ে পড়বেন। তিনি বলেন, কারও সংসার চালানোর দায়িত্ব আমরা নেব না। তবে যে ভাতা দেব সে ভাতায় আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা হবে। বয়স্ক মানুষ যখন ভাতা পায় তখন ছেলেমেয়েরাও তাকে গুরুত্ব দেয়। তার পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা দূর হয়। তাকে সংসারের বোঝা না ভেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত করতে পেরেছি। দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ কিছু দুখী মানুষের মুখে হাসি দেখে আমি সত্যিই খুব অভিভূত। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। প্রতিটি গ্রামে মানুষ শহরের মতো সুবিধা পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে ভাতার টাকা ব্যাংক ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যেত। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ আমরা সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে যার যা প্রাপ্য তার কাছেই পৌঁছে দেব। কেউ আর কমিশন খেতে পারবে না। সরাসরি টাকা আপনার হাতে পৌঁছে যাবে। প্রতিটি জায়গায় নামের তালিকা করে ডাটাবেজ করে রাখব। ১ কোটি ৪০ লাখ মা এখন মোবাইল ফোনে টাকা পাচ্ছে তার বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে সে কারণে। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণ করেছি, যার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছি আমরা। ৯৬-এ যখন সরকার গঠন করি তখন দেখি ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম খাদ্য ঘাটতি দূর করতে হবে। তখন বিএনপি ছিল সংসদে বিরোধী দল। সংসদে তারা বলত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যাবে না। তাহলে বাইরে থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না, অর্থাৎ ভিক্ষা পাওয়া যাবে না।’

‘আপনি যেন বারবার কইরা ক্ষমতায় আসতারেন’ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসতে পারেন, সেটি কামনা করেছেন সরকারের সামাজিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন ভাতাভোগী। এই ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় সবাই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, আগে তাদের জীবন ছিল দুর্বিষহ। এখন পরিবারে তাদের অবস্থান আগের চেয়ে ভালো। অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জ থেকে যোগ দেন সুবিধাভোগী বাবুল গাজী। দুটি পা নেই তার। তিনি বলেন, ভাতা পাওয়ার আগে নিজেকে অসহায় মনে করতাম। যেদিন থেকে ভাতা পাই, সেদিন থেকে নিজেকে আর অসহায় মনে করি না। আমার মা, আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার মতো অচল সন্তানদের পাশে আছে। বাবুল বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আল্লাহ অনেক দিন আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখুক এবং সে যেন বারবার নির্বাচিত হয়ে আমার মতো দুস্থদেরকে, প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে পারে। আল্লাহর আছে আরও দোয়া করি, তুমি তাকে সকল বিপদ আপদের থেকে রক্ষা করো। সে যেন দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রচ্ছন্নভাবে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটার বিরুদ্ধেই আন্দোলন। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পাওয়া না গেলে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনার আলোকে তার সরকার মেধা তালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করতে পারি না। কাজেই আমরা ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি এ বিষয়টি দেখার জন্য। প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বুঝতে পারছি না কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আন্দোলনের পেছনে কী যুক্তি কাজ করছে। আন্দোলনের অরাজক পরিস্থিতি দেখে আমি বলেছিলাম, ঠিক আছে কোটা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিএসসির অধীনে কোনো চাকরি পেতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পিএসসির পরীক্ষা পদ্ধতি অত্যন্ত শক্ত। এ পরীক্ষায় যারা অংশ নেয় তারা অত্যন্ত মেধাবী। মেধা ছাড়া এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। পিএসসির অধীনে নন-ক্যাডার চাকরি চালুর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কেমন মেধাবী যারা বলছেন নন-ক্যাডার চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা মেধাবী নন। তারা কীভাবে এমন নির্বোধের মতো কথা বলতে পারেন?

আইনমন্ত্রীর বাসায় প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বড় বোন সায়মা ইসলামের মৃত্যুতে তাকে সমবেদনা জানাতে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে তার বাসভবনে যান। প্রধানমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে এক ঘণ্টার অধিক সময় অবস্থান করেন। প্রধানমন্ত্রী সায়মা ইসলামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি মরহুমার আত্মার শান্তি কামনা করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আইনমন্ত্রী এবং তার মা ও সায়মা ইসলামের স্বামী উপস্থিত ছিলেন। সায়মা ইসলাম রবিবার নগরীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগছিলেন।

সর্বশেষ খবর