বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রার্থীদের বিতর্কে উত্তাপ নির্বাচনী মাঠে

সিলেট

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে উন্নয়ন বিতর্কে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী। একজন বলছেন, তিনি যে উন্নয়ন করেছেন তা ‘অতুলনীয়’, অন্যজন বলছেন, উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে; ‘কসমেটিক উন্নয়ন’ হয়েছে। শীর্ষ দুই দলের মেয়র প্রার্থীদের এ বিতর্ক উত্তাপ ছড়াচ্ছে সিলেটের নির্বাচনী মাঠে। এদিকে, গতকাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের একটি সমাবেশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া ওই সমাবেশ শেষে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতার ওপর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। সিসিকের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। বছরখানেক দায়িত্ব পালনের পর সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাগারে যেতে হয় তাকে। প্রায় ২৯ মাস কারান্তরিন ছিলেন আরিফ। তিনি বলছেন, যে সময়টুকু তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে সিলেট নগরের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের স্বার্থে কারও সঙ্গেই আপস করেননি বলে দাবি আরিফের। সিসিকের আসন্ন নির্বাচনের প্রচারণায় এই উন্নয়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। উন্নয়নের বদলে আবারও নগরবাসীর ভোট চাইছেন আরিফ। তার দাবি, প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালনকালে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন, ছড়া-খাল উদ্ধার, রাস্তা সম্প্রসারণ, সৌন্দর্যবর্ধন, পানি সংকট কমানোর ব্যবস্থা প্রভৃতি নানা উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করেছেন। আরিফ বলছেন, সিলেট নগরের উন্নয়নের জন্য তিনি কয়েকটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছেন, যেগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথাও বলছেন আরিফ। কিন্তু সিসিকের প্রথম দুই মেয়াদের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলছেন, আরিফ উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছেন। বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটের উন্নয়নে আন্তরিক। তাই প্রচুর বরাদ্দ পেয়েছেন আরিফ। কিন্তু সেই বরাদ্দ যথাযথভাবে কাজে না লাগিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। ছড়া-খাল উদ্ধার ও সংস্কারে ২৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেই টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়নি। কামরানের দাবি, যেসব উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলোও ঠিকমতো হয়নি। এ ক্ষেত্রে ‘কসমেটিক উন্নয়ন’ হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলছেন, আরিফের মেয়াদকালে তিনি যদি দুই বছর দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাহলে বাকি তিন বছর কি উন্নয়ন হয়নি? নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় আরিফের ‘কসমেটিক উন্নয়ন ও লুটপাটের’ বিষয়টি তুলে ধরছেন কামরান। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্বল্প সময়ে আমি যে উন্নয়ন করতে পেরেছি, অতীতে তা কখনই হয়নি। এ উন্নয়ন দেখে কারও কারও গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থেই নগরবাসী আবারও আমার পক্ষেই রায় দেবেন।’ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘সরকারের টাকায় উন্নয়ন করে তা নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন আরিফ। উন্নয়নের জন্য প্রচুর বরাদ্দ পেলেও সঠিকভাবে কাজ করেননি তিনি। কসমেটিক উন্নয়ন হয়েছে, করা হয়েছে লুটপাট। এর জবাব এবার নির্বাচনে দেবেন নগরবাসী।’এদিকে, গতকাল নগরের আম্বরখানা মণিপুরীপাড়া, সুনামগঞ্জ রোড, হাউজিং এস্টেট এলাকায় প্রচারণা চালান কামরান। অন্যদিকে নগরের কুমারপাড়া, ঝরনার পাড়, শেখঘাট, জল্লার পাড়, কাজীটুলা, কলাপাড়া, ঘাসিটুলা, মিরের ময়দান, শাহি ঈদগাহ এলাকায় প্রচারণা চালান আরিফ।

কামরানের সমাবেশ নিয়ে ইসিতে অভিযোগ : আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থনে গতকাল বেলা দেড়টায় বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার উদ্যোগে হাসপাতাল চত্বরে সমাবেশ করা হয়। হাসপাতালের উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক শিউলী আক্তারের সভাপতিত্বে ও নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেকের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন সিলেট শাখার সভাপতি শামীমা নাছরিন প্রমুখ। এ সমাবেশে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তার পক্ষে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কামরানের সমাবেশে বিশাল স্টেজ, ব্যানার, কয়েক শতাধিক চেয়ার ও একাধিক মাইক ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীরা এ সমাবেশের আয়োজন করেন, যা আইনসম্মত নয়।’ এদিকে, গতকাল নির্বাচন কমিশনে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার ও অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের হামলা : ওসমানী হাসপাতালে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সমাবেশ শেষে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেকের ওপর হামলা চালিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে নাম না বলায় ও বক্তব্যের সুযোগ না দেওয়ায় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিনুর রশীদ সুজনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা-কর্মী এ হামলা চালান। এ সময় হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। হামলায় আহত সাদেককে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা কামরান তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর