ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলিসি প্রাসাদের সামনের রাস্তার নাম— ‘চ্যাম্পস এলিসি’। প্যারিসের ১.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বিখ্যাত এই সড়কে সমবেত হয়ে লাখ লাখ মানুষ ফুটবল বীরদের বরণ করে নেয়। গ্রিজম্যান-এমবাপ্পে-পগবারা যখন ছাদ-খোলা বাসে স্বপ্নের সোনালি ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরে যাচ্ছিলেন তখন লাখো মানুষের আনন্দ-চিৎকার যেন গোটা শহরকে প্রকম্পিত করছিল। উদযাপনে বাড়তি মাত্রা এনে দিয়েছিল ফরাসি বিমানবাহিনীর ৯টি যুদ্ধ বিমান। সারিবদ্ধভাবে উড়ে নীল-সাদা-লাল—তিন রঙের ধোঁয়া ছেড়ে প্যারিসের আকাশ রঙিন করে দিয়েছিল।
মূল অনুষ্ঠান ছিল এলিসি প্রাসাদের পাশেই এলিসি গার্ডেনে— যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষমাণ ছিলেন বীর ফুটবলারদের নিকটাত্মীয়রা। উজ্জীবিত করার জন্য হাজার খানেক উদীয়মান ফুটবলারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সব মিলে অতিথির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফুটবল বীরদের সংবর্ধিত করা হয়। খোদ ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন এবং তার সহধর্মিণী ব্রিজিত পুরো আয়োজনের তদারকি করেন। ফরাসি সরকার প্রধান আবেগাপ্লুত হয়ে বিজয়ী ফুটবল দলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা সুন্দর— কারণ তোমরা সংঘবদ্ধ থেকে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে ফ্রান্সের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনেছ।’
২০১০ ব্রাজিল বিশ্বকাপে সুবিধা করতে পারেননি ফ্রান্স। কিন্তু সেরা উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছিলেন পল পগবা। এবার সেই পগবা ফ্রান্সের শিরোপার অন্যতম রূপকার। তবে এবারও উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার ফরাসিদের হাতছাড়া হয়নি। ১৯ বছর বয়সী এমবাপ্পে পেয়েছেন। ৪ গোল করে দারুণ উজ্জীবিত ফরাসি এই তরুণ স্ট্রাইকার, ‘আমি খুবই গর্বিত যে ফ্রান্সের মানুষের উত্সবে মাতানোর জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি।’ ১৯৯৮’র বিশ্বকাপ জয়ে মাঠের নায়ক ছিলেন জিনেদিন জিদান। আর এবার আঁতোয়ান গ্রিজম্যান। নিজে চারটি গোল করেছেন। বেশ কয়েকটি গোলে দারুণভাবে সহায়তাও করেছেন। ফাইনাল ম্যাচটি তো গ্রিজম্যানময় ছিল। যদিও ‘গোল্ডেন বল’ জিততে পারেননি— কিন্তু তার চেয়েও বড় পুরস্কার তো পেয়েছেন। তাই ফরাসি এই প্লে-মেকার যেন একটু বেশিই খুশি, ‘আমরা সবাই চেয়েছি সম্মিলিত প্রয়াসে ফ্রান্সের জন্য ভালো কিছু করতে, সেটা করেও দেখিয়েছি। যা অনুসরণ করে আজকের তরুণ আগামীকে খুঁজে নেবে।’ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম। তারই নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় ফ্রান্স। এবার তার কোচিংয়েই দ্বিতীয় শিরোপা। ব্রাজিলের জাগালো এবং জার্মানির ফ্রেঞ্জ বেকেন বাওয়ারের পর তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের অনন্য কীর্তি গড়লেন দেশ। তাই ফরাসি এই কিংবদন্তির আবেগ যেন একটু বেশি, ‘১৯৯৮’র উদযাপনে ছিলাম, এবারের উদযাপনে আছি, ২০২২’র উদযাপনেও এখানে থাকব।’