বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

মৌলভীবাজারের চার আসামির ফাঁসির আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষক আকমল আলী তালুকদারসহ চার আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়। গত ২৭ মার্চ থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, গুম, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। বিচারে সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল প্রথম অভিযোগে সব আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও দ্বিতীয় অভিযোগে সব আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে। এ মামলার চার আসামির মধ্যে আকমল আলী তালুকদার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি তিন আসামি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আবদুন নূর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া, আনিছ মিয়া ও আবদুল মোছাব্বির মিয়া পলাতক রয়েছেন। এই চার আসামি একাত্তরে রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে রাজনগরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে মামলার নথিতে বলা হয়েছে। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, সঙ্গে ছিলেন শেখ মুশফিক কবীর। আসামি আকমলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হাসান শুনানি করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রাজনগরে গণহত্যাসহ যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা কেবল একটি জায়গায় কয়েকজন মানুষকে হত্যা করা নয়, পুরো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যারা এ অপরাধ করেছে তারা মানবতার শত্রু। মামলার প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৭ মে এ মামলার চার আসামিসহ রাজাকার সদস্য ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রামে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫৯ জনকে বেঁধে, পিটিয়ে, গুলি করে হত্যা করে। তাছাড়া ওই গ্রামের ১৩২টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট চালানো হয় ১০২টি বাড়িতে। ওই গ্রামের বহু নারী সেদিন ধর্ষণের শিকার হন। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ২৪ নভেম্বর চার আসামিসহ রাজাকার সদস্যরা রাজনগরের পশ্চিমবাগ গ্রামের চক্রবর্তীদের বাড়িতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের বাড়িতে লুট করে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করা হয়। ওই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বিনোদ চক্রবর্তী ও নিখিল রঞ্জন চক্রবর্তীকে রাজনগর থানায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে তাদের মনু নদীর তীরে বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হয়। গত বছরের ৭ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রাম থেকে আকমল আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ চার আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।

সর্বশেষ খবর