বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রেমে বা ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে অনেকে গুম হয়ে যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রেমে বা ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে অনেকে গুম হয়ে যান

আসাদুজ্জামান খান কামাল

অনেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে গুম হয়ে যান মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘দেখা যায়, দুজনের মনের মিল না হলে অনেকে চলে যান অন্যখানে। আবার অনেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কিংবা ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে গুম হয়ে যান। আমাদের জানামতে বেশির ভাগ গুমই এমন। বিচারবহির্ভূত হত্যা আমরা করি না।’ সবার জন্য আইন সমান। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গতকাল আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মাদক-সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে সংসদ সদস্যরাও রেহাই পাবেন না। আমরা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরতদেরও ছাড় দিচ্ছি না। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দু-একজনকে কারাগারের অন্তরীণও করা হয়েছে। এ অপরাধে যারাই জড়িত থাকবেন, সবাইকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পাঁচটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে একটি তালিকা করা হয়েছে। যাদের নাম এ তালিকায় কমন পড়ছে, তাদের বিরুদ্ধেই অ্যাকশনে যাওয়া হচ্ছে। যাদের নাম কমন পড়ছে না, তাদের বিরুদ্ধেও প্রমাণ সাপেক্ষে ধীরে ধীরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সময় লাগলেও সঠিক জিনিসটি করতে চাই। নির্দোষ ব্যক্তি সাজা পাক সেটি আমরা চাই না। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে হবে আমাদের। তাই কারও বিরুদ্ধে তথ্য থাকলে দিন। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। সবাইকে এ যুদ্ধে শরিক হতে বলছি। সবাই কাজ করছেন। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো মাদক-সংশ্লিষ্টদের ধরার চেষ্টা করছে। যারা নির্দোষ তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। মাদকের জন্য যুবসমাজ নষ্ট করতে চাই না। নিয়মিত অভিযান চলবে, যত দিন পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণে না আসে।’ খালেদা জিয়া সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া কঠিন অবস্থায় অসুস্থ আছেন এ কথা সত্য নয়। কারণ প্রতিদিনই কারাগারের ডাক্তার তার খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনি এমন কোনো নতুন রোগে আক্রান্ত হননি, যার কারণে স্বাস্থ্যহানি হয়েছে। আগে থেকেই তিনি রোগগুলো নিয়ে চলছেন। চিকিৎসা নিতে সিএমএইচেও তিনি যেতে রাজি হননি। জেলকোড অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া তার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে আইজি প্রিজন জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কোথাও বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যা হচ্ছে না। কেউ গুম হচ্ছে না। যারা গুম হয়েছে বলা হচ্ছে, আমরা ধরে এনে তাদের হাজির করছি। অনেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে গুম হয়ে যান। দুজনের মনের মিল না হলে চলে যান অন্যখানে। আমাদের জানামতে বেশির ভাগ গুমই এমন।’ ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা আমরা করি না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে ঢুকে গেছে। এদের ফেরত পাঠাতে সরকার যা যা সম্ভব সবই করছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে কথা বলছি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছে বলে জানিয়েছে। যুদ্ধ করে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আলোচনার মাধ্যমে এটি সমাধান হবে বলে আশা করি। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করার তথ্য পেলে আমরা সেটি বাতিল করে দিচ্ছি।’ আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সহজ টার্গেট হতে পারে এই রোহিঙ্গারা। এটা আমি সব সময় বলে আসছি। আমি জাতিসংঘে বলে এসেছি, আপনারা ব্যবস্থা নিন। মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সব সময় বলে যাচ্ছেন তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নেওয়ার কোনো চিহ্ন আমরা দেখলাম না।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ না ডাকলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যায় না। এর আগে ভিসির বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি আমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কর্তৃপক্ষের ডাকেই সেখানে গিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সবার বিচার হবে। সবার জন্য আইন সমান। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ টেকনাফে একরাম হত্যা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিয়ে তদন্ত চলছে। তার পরিবারের সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। তদন্তে হত্যায় কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেব।’ ওয়ারেন্ট বা অভিযোগ ছাড়া কাউকে নির্বাচনের আগে গ্রেফতার করা হয় না মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল তাদের আটক করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও কাউকে এর বাইরে আটক করা হবে না। সাগর-রুনি হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমে এটা এখন র‌্যাবের কাছে আছে। র‌্যাব দ্রুতই এ বিষয়টি জনসমক্ষে তুলে ধরবে বলে আশা করি। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখবে।’ বঙ্গবন্ধু খুনিদের ধরতে টাস্কফোর্সসহ অন্যান্য সংগঠন কাজ করছে বলেও জানান মন্ত্রী। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলী শুভ। সংগঠনের অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর