বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাদিকের আশা উন্নয়নে সরোয়ারের ভোটব্যাংক

বরিশাল

নিজামুল হক বিপুল, বরিশাল থেকে

সাদিকের আশা উন্নয়নে সরোয়ারের ভোটব্যাংক

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সামনে চলে আসছেন সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। তার সময়ের উন্নয়নই এখন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রধান পুঁজি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নৌকা প্রতীক এবং ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অন্যতম সম্বল হচ্ছে বরিশাল শহরে বিএনপির মধ্যে তার নিজস্ব বলয়ের ভোট ব্যাংক। কারণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের অনুসারীরা এবং আরও কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুুদ্র অংশ মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে মাঠে নেই। এ ছাড়া সরোয়ার একাধিকবার বরিশাল সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং একবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। এ কারণেও তার কিছু নিজস্ব বলয় তৈরি হয়েছে।  গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে সিটি করপোরেশনের ভোট রাজনীতির এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকা ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। শহরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের আগেই সাগরদী এলাকার পুলপাড় পার হলেই এই এলাকাটির শুরু। এক সময় টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত টিয়াখালী, হরিণাকুলিয়া, জাগুয়া এবং কালিজিরা নদীর দক্ষিণ পাড়ের চর জাগুয়া গ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শহর অতিক্রম করে এই বর্ধিত এলাকায় ঢুকলেই দেখা মিলবে একেবারে সবুজ গ্রাম আর মেঠোপথ। ওই জনপদে পা রাখতেই বোঝা গেল সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলেও সেখানে উন্নয়নের বাতাস খুব একটা লাগেনি। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। শহরের রঙিন আলোর ঝলকানি সেখানে পৌঁছেনি। রাস্তাঘাট যাও পাকা হয়েছিল, তাও পাঁচ বছর আগে শওকত হোসেন হিরণের আমলে। তারপর গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের দেখা পাননি এলাকাবাসী। টিয়াখালী গ্রামের একটি চা দোকানে বসতেই বেশ কয়েকজন বক্তব্য দিতে শুরু করে দিলেন বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে। তারাই বলছিলেন, একবার যে ভুল করেছিলেন সেই ভুল তারা করবেন না। দ্বিতীয় দফায় হিরণ মেয়র নির্বাচিত হলে তাদের এলাকার চিত্র আজ অন্যরকম হতো। গ্রামীণ মেঠোপথ ২০ ফুট চওড়া রাস্তায় পরিণত হতো। আলোর ঝলকানি দেখা যেত। গ্রাম রূপ নিত শহরের চেহারায়।

তাই এবারের নির্বাচনে তারা এখন হিরণকেই স্মরণ করছেন মনেপ্রাণে। যেমনটা বলছিলেন টিয়াখালী গ্রামের জামাল হোসেন। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর প্রধান পুঁজি হচ্ছে হিরণের সময়ের উন্নয়ন। এরপর তো কোনো উন্নয়ন হয়নি। তাই এবার উন্নয়নের জন্যই তারা নৌকা প্রতীককে বেছে নিতে চান। আরেকজন হরিণাকুলিয়া গ্রামের সৈয়দ শাহীন বলছিলেন, হিরণের উন্নয়নের কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমানকে। কারণ তার পূর্বসূরি বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল গত পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশনের কোনো উন্নয়নই করেননি। আর এটিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তরুণ সাদিক আবদুল্লাহর বড় পুঁজি। আর এখানেই পিছিয়ে আছেন প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান। অবশ্য একই ওয়ার্ডের চঠা গ্রামের শইজ্জিদ হাওলাদার বলেন, উন্নয়ন করুক আর না করুক- আমরা সরোয়ারকেই ভোট  দেব। একথা শুনে তার পাশে দাঁড়ানো রেশমি বেগম বলছিলেন, ভোট কেন্দ্রে গিয়ে অনেকেই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে। তাই এখনই বলা যায় না কি হবে। চঠা গ্রামের দুলাল হাওলাদারের মতে, এবারের ভোট হবে উন্নয়নের পক্ষে। সরেজমিন ঘুরে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, সাদিক আবদুল্লাহর বড় পুঁজি এখন প্রয়াত মেয়র হিরণের উন্নয়ন। সঙ্গে আছে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ, নৌকা প্রতীক এবং নিজের তারুণ্য। এত উন্নয়নের পরও কেন হিরণকে পরাজিত হতে হয়েছিল জানতে চাইলে, অনেকেই কৌশলে উত্তর দিলেন। বললেন, সেবার মানুষ হিরণের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। উন্নয়ন করার পরও ভোট দেননি। তবে কেউ কেউ এটা বলতে ভুল করলেন না যে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের চেহারা পাল্টে দেওয়ার পরও আগের সিটি নির্বাচনে বরিশাল আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই হিরণকে পরাজিত হতে হয়েছিল। যা এবার নেই। এবারের নির্বাচনে হিরণের অনুসারীরাও প্রকাশ্যে সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে দ্বারে দ্বারে ভোট চাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পুঁজি হচ্ছে তিনি বরিশাল বিএনপির পুরনো নেতা। একাধিকবার সদর আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একবার সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। ওই সময়গুলোতে তিনি বেশ কিছু উন্নয়ন করেছিলেন, যা এবারের নির্বাচনে তাকে সাহায্য করবে। সঙ্গে রয়েছে ধানের শীষ প্রতীক। যদিও এবারের নির্বাচনে বিএনপিতে অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিএনপিতে সরোয়ারের নিজস্ব বলয়ের লোকজনের বাইরে অন্যরা কাজ করছেন না। বিশেষ করে বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল তো মাঠেই নামেননি। তার অনুসারীরাও নেই। তার ওপর আবার কামালের এই পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন না হওয়ায় সরোয়ার সমর্থকরা ভোটারের কাছে তাদের মেয়রের কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও তুলে ধরতে পারছেন না।

যদিও বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিছ জাহান শিরিন সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন, বরিশাল বিএনপিতে কোনো অন্তর্দ্বন্দ্ব নেই। সবাই একাট্টা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে। তিনি বলেন, যারা দল ভালোবাসে, জিয়ার আদর্শের অনুসারী তারা কখনো অন্য কারও অনুসারী হতে পারে না। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আহসান হাবিব কামালের প্রকাশ্যে মাঠে না নামার বিষয়ে তিনি বলেন, কামাল এখনো মেয়র। তিনি লাভজনক পদে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী মেয়র থাকা অবস্থায় কেউ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। এ কারণেই কামাল নামতে পারছেন না। শিরিন বলেন, কোন্দলের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের নেত্রী জেলে। তাই এই নির্বাচনে আমরা জেতাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এদিকে বিএনপি প্রার্থীর জন্য আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে বিএনপি’র ভোটে এবার ভাগ বসাতে পারে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। তারা হেফাজতে ইসলাম বরিশালের আমীর মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুবকে প্রার্থী করেছে। তিনি হাতপাখা নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ কারণে হেফাজতের যে ভোট বিএনপির বাক্সে গিয়ে থাকে, সেটি এবার ভাগ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহও চাইবেন নিজেদের ভোট বাড়াতে। চেষ্টা করবেন বিএনপির ভোট কেটে নৌকার বাক্সে নিতে। এতে করেও  বিএনপির ভোট কমার শঙ্কা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর