শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
কে কোথায় ভোটের ফ্যাক্টর

উন্নয়নেই চোখ সাধারণ ভোটারদের

রাজশাহী

জুলকার নাইন, রাজশাহী থেকে

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ হিসাবে পাঁচটি ফ্যাক্টর বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নারী একটি বড় ফ্যাক্টর এখানকার রাজনীতিতে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ভোটার হওয়া তরুণদের নানা প্রত্যাশা। পাশাপাশি সীমান্তলাগোয়া রাজশাহীতে মাদকের প্রাদুর্ভাবও যথেষ্ট। এটি নির্মূল এখানকার রাজনীতিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতের নির্বাচনে রাজশাহীতে জামায়াতের ভোটের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবারও নীরবে এসব ভোট কার পক্ষে যাবে তা একটি ফ্যাক্টর। তবে সব ছাপিয়ে শহরের উন্নয়নে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর অতীতে মেয়র থাকাকালীন করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা যাবে বলে মনে করছেন রাজশাহীর রাজনীতি-বিশ্লেষকরা। নির্বাচন দফতরের হিসাবমতে, ৩০ ওয়ার্ডের রাজশাহী সিটিতে মোট ভোটার তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জনই নারী ভোটার। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। নারীদের অধিকাংশই গৃহিণী হওয়ায় তাদের কাছে বড় ইস্যু গ্যাস সংযোগ। এর আগে দুই নির্বাচনেও গ্যাস সংযোগ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৩ সালের নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৩৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২৭টিতেই পরাজিত হন লিটন। বাকি যে ৯টি কেন্দ্রে জয়লাভ করেন তিনি সেসব কেন্দ্রে ভোটের ব্যবধান সামান্য। নারী ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে একমাত্র নগরীর রাজশাহী বিবি হিন্দু একাডেমি কেন্দ্রে জয় হয় লিটনের। সেখানে তিনি পান ৬২৪ ভোট আর বুলবুল পান ৫০৭ ভোট। অধিকাংশ নারীকেন্দ্রে লিটনের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণেরও বেশি ভোট পান বুলবুল। ধারণা করা হয়, বুলবুলকে বেশি আকারে নারী ভোট দেওয়ার পেছনে কারণ ছিল ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বুলবুল দায়িত্ব পেয়েও ঘরে ঘরে গ্যাস পৌঁছাতে পারেননি। বরং টাকা জমা দিয়েও অনেকে পাননি গ্যাস সংযোগ।

শহরের নারী ভোটার শামসুন্নাহার বললেন, গ্যাস সংযোগ নারীদের কাছে অবশ্যই একটি বড় বিষয়। কিন্তু এর পাশাপাশি ঘরে-বাইরে নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে রাজশাহীতে ৩১ হাজার ২২৩ জন নতুন ও তরুণ ভোটারকে কাছে টানা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন প্রার্থীরা। শিক্ষানগরী রাজশাহীতে কর্মমুখী তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে তরুণ ভোটার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুয়েল হায়দারী বলেন, ‘মাদকের ভয়াবহতা রাজশাহীতে অনেক বেশি। মাদকের কারণে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ গত নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে এমন কয়েকজন জয়ী হন, যারা মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক। এবারও এমন অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। সুতরাং যেসব মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী সত্যিকার অর্থেই মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারবেন, আমরা তাদের ভোট দেব। সেই সঙ্গে প্রযুক্তির প্রসার ও সহজলভ্যতা থেকে শুরু করে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’ আরেক তরুণ ভোটার নাজনীনের মতে, ‘যেসব প্রার্থী তরুণ ও নতুন প্রজন্মের চাহিদা বুঝতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন, আমরা তাদের ভোট দেব। শুধু দল ও গোষ্ঠী বিবেচনায় ভোটের দিন আর নেই।’ এ ছাড়া পদ্মার পাড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ওয়াইফাই জোনের বর্তমান অবস্থাও ভোটের ক্ষেত্রে প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন নাজনীন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক মিথুন মাহবুবের দাবি, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর বর্তমান ও সাবেক মেয়রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। তার মতে, দুই প্রার্থীই আগে মেয়র থাকার সময় শহরের কেমন উন্নয়ন হয়েছে সেটিই এখানে বড় প্রশ্ন। তাই দুই মেয়রের আমলের উন্নয়ন বিবেচনায় এবার ভোট দেবেন ভোটাররা। তবে উন্নয়ন নিয়ে ভিন্নমত দুই মেয়র প্রার্থীর। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী নগরীতে ৮৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তার দাবি, তিনি নগরবাসীকে উপহার দেন একটি ক্লিন সিটি। তবে তিনি যে ক্লিন সিটি রেখে গেছেন তা এখন নেই। বিপরীতে গত পাঁচ বছরে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে, যা দৃশ্যমান বলে দাবি করেন সদ্য সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তার দাবি, তাকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মী সুলাইমান নিলয়ের মতে, মাদকের পৃষ্ঠপোষকরা রাজশাহীর রাজনীতিতে সক্রিয়। এদের অনেকেই জনপ্রতিনিধির আড়ালে ঘাপটি মেড়ে আছে। এদের সঙ্গে নিয়ে যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তার মতে, এখানকার জামায়াতের ভোটাররা বিভিন্ন সময় নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সরব ছিল। কিন্তু এবার সেভাবে মেয়র পদে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সরব নয় জামায়াত। এ কারণে কোন প্রার্থীর পক্ষে তাদের সমর্থন যাবে তাও এখন বড় ফ্যাক্টর।

সর্বশেষ খবর