শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
কে কোথায় ভোটের ফ্যাক্টর

ব্যবসায়ী বস্তিবাসী ও নতুন ভোটারদের দিকে চোখ সবার

সিলেট

আরাফাত মুন্না, সিলেট থেকে

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের ভোট নিয়ে হিসাব কষতে শুরু করে দিয়েছেন প্রার্থীরা। সিলেটে এবার ৩১ হাজার নতুন ভোটারের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসকারী আরও প্রায় ৪০ হাজার ভোটার নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। তারা জানান, নতুন ভোটার ও বস্তিবাসী ভোটারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও সিলেটের বাইরের জেলাগুলো থেকে আসা ভোটাররাও নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করতে পারেন। এ ছাড়া সিলেটে এবার যেহেতু প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে, তাই দলীয় ভোটও ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তারা। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ৩০ হাজার ৬৮৬ ভোট বেড়েছে। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন। আর এবার ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২-এ। এর মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন নারী ভোটার রয়েছেন। নতুন ভোটার অর্থাৎ তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রধান দুই দলের দুই মেয়র প্রার্থীই তাদের প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের সিটি করপোরেশনে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ওয়াইফাই চালুসহ নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। প্রার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোও বিশ্লেষণ করছেন নবীন ভোটাররা। তারা বলেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সিটি গড়তে যাকে যোগ্য মনে হবে, তাকেই তারা এবার ভোট দেবেন। এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ছাত্র সানজিন জানান, যুবসমাজের সমস্যা সমাধানে যিনি আন্তরিক হবেন তাকে আমরা ভোট দেব। স্থানীয়রা জানান, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অনেক বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে প্রায় ৪০ হাজার ভোটার বসবাস করেন। যেসব প্রার্থী বস্তিবাসীর উন্নয়নে কাজ করবেন বা ইতিপূর্বে করেছেন এমন প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন তারা। এসব বস্তিতে ভোট কেনাবেচার ঘটনাও ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা। এ ছাড়া সিলেট নগরীর বিভিন্ন মার্কেট-বাজার মিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার ব্যবসায়ী-কর্মচারী রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। ফলে জয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ব্যবসায়ীদেরই কাজে লাগাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থনে এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের পৃথক দুটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। কয়েকদিন ধরে ‘ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ’ ও ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী ফোরাম’ নামে সংগঠন দুটি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষক, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলয়ে বিভক্ত। সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলে এমন চিত্রই পাওয়া যাবে। তাই সিলেটেও দলীয় প্রতীক অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। যারা এবার নতুন ভোটার হয়েছেন তাদের মধ্যেও দেখা যাবে অনেকেই দলীয় সমর্থক। তিনি বলেন, সিলেটে প্রায় ৫০ হাজারের মতো নন সিলেটি ভোটার রয়েছেন। বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে বসবাস করেন। প্রার্থীরাও এসব ভোটারদের কাছে টানতে বিভিন্ন জেলা সমিতি ও বিভাগীয় সমিতির সঙ্গে সভা-সমাবেশ করছেন। তিনি আরও বলেন, সিলেটে ফলাফল নির্ধারণে বড় ফ্যাক্টর হবে নিরপেক্ষ ভোটার।

২৫ শতাংশের মতো ভোটার রয়েছেন যারা কোনো দলের সমর্থন করেন না। যদি এই ২৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে আসেন, তাহলে তারাই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবেন বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক। জানতে চাইলে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি আবদুল করিম কিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নগরীর উন্নয়নকেই বেশি প্রাধান্য দেন ভোটাররা। এবার নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যেই। এ দুই প্রার্থীই আগে সিলেটের মেয়র ছিলেন। তাই সিলেটের উন্নয়নে ভোটাররা যাকে বেশি সক্ষম মনে করবেন তাকেই ভোট দেবেন। তিনি আরও বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে তরুণসমাজ কিন্তু যে কোনো কাজেই একটা বড় ভূমিকা রাখে। এবার সিলেট সিটিতে প্রায় ৩১ হাজার নতুন ভোটার। তাই নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে নতুন ভোটাররাও ভূমিকা রাখতে পারেন।

সর্বশেষ খবর