শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
জয়ে মরিয়া দুই দলই

কাছের মানুষই দুশ্চিন্তার কারণ লিটন-বুলবুলের

রাজশাহী

জুলকার নাইন, রাজশাহী থেকে

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের জন্য শেষ পর্যন্ত গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিতে পারেন নিজ দলের কাছের মানুষরাই। প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করলেও দুই দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই প্রার্থীদের বিষয়ে আড়ালে বিরূপ মন্তব্য করছেন। শেষ পর্যন্ত এসব নেতা তাদের অনুসারীদের নিয়ে নিজ দলের প্রার্থীদের বিষয়ে কী ভূমিকা নেন সেটাই এখন রাজশাহীর রাজনৈতিক মহলের মূল আলোচ্য বিষয়। গত কয়েক দিন রাজশাহীর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আলোচনায় এ ধরনের মনোভাব পাওয়া গেছে। সূত্রের খবর, রাজশাহীর মেয়র হিসেবে প্রথম মেয়াদে উন্নয়নের জোয়ার দেখানো খায়রুজ্জামান লিটন পরেরবার নির্বাচনে অর্ধলক্ষাধিক ভোটে হেরে যান বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে। এর পেছনে দলীয় কর্মীদের অসহযোগিতাই ছিল প্রধান কারণ বলে মনে করেন রাজশাহীর নেতারা। নির্বাচনের পর লিটনের অনেক নেতা-কর্মীর বাড়ি থেকে বান্ডিলে বান্ডিলে পোস্টার উদ্ধার হয়েছিল। তারা গণসংযোগ দূরের কথা পোস্টার পর্যন্ত লাগাননি। এবার এ সংকট দূর করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকাশ্যে সবাই মেয়রের পক্ষে এলেও মেয়র নির্বাচনের পরপরই আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখার বিষয়ে চিন্তিত রাজশাহীর একাধিক শীর্ষ নেতা এখনো তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেননি। অন্যদিকে, জাতীয় চার নেতার একজনের সন্তান হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটনের পারিবারিক মর্যাদা স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনের মধ্যে ঈর্ষার মনোভাব তৈরি করেছে দীর্ঘদিন ধরে। দলীয় সভানেত্রীর কাছে খায়রুজ্জামান লিটনের গ্রহণযোগ্যতা কমানোর জন্য এবারের মেয়র নির্বাচনকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন তারা। পরপর দুবার মেয়র পদে পরাজিত হলে ভবিষ্যতে রাজশাহীর রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের প্রত্যাশা এসব নেতার। এ ছাড়া মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে আওয়ামী লীগের সুযোগসন্ধানী ও স্বার্থান্বেষীরা লিটনের কাছে ঘেঁষতে পারেননি। এটাকেও হিসাবে রাখছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের একটি গ্রুপ। লিটন মেয়র হলে সিটির টেন্ডার পাবেন এমন নিশ্চয়তা না থাকায় এই গ্রুপটিও ভিন্ন চিন্তা মাথায় নিয়েই আছে দলীয় প্রচার-প্রচারণায়। মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘প্রচার-প্রচারণায় সবাই থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কী হয় তা বলা মুশকিল। তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল লিটনের পক্ষে একাট্টা।’

অন্যদিকে, স্থানীয়ভাবে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপির অভ্যন্তরের মতবিরোধ অনেকটাই প্রকাশ্য। বিএনপির স্থানীয় সব কমিটিই এক শীর্ষ নেতার অনুকূলে। মেয়র পদে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সঙ্গে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালালেও অতীতের বেশকিছু কর্মকাণ্ডে তিনি বুলবুলের বিষয়ে নাখোশ। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের বিএনপির একাধিক সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে বুলবুলকে ঘরোয়া বৈঠকে প্রকাশ্যেই দুর্বল হিসেবে আখ্যা দিয়ে নানান বিরূপ মন্তব্য করছেন। শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনের দিন রাজশাহীতে অবস্থান করবেন কিনা এ নিয়েও দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে সংশয় আছে। যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহীতে লাগাতার প্রচার-প্রচারণায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অংশ নিচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রাজশাহী সফরে কেটে যাবে সব মতবিরোধ। অন্যদিকে, শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির ভিত্তিতে এক ধরনের সমঝোতা হলেও সংশয় কাটেনি। জামায়াতের দলীয় একাধিক সূত্রের খবর, মেয়র পদের চেয়ে নির্বাচনে জামায়াতের মূল লক্ষ্য ১৪ কাউন্সিলরের জয় নিশ্চিত করা। অধিকসংখ্যক কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে যে কোনো মেয়রের সময়ই প্রভাব বিস্তার সম্ভব হবে বলে মনে করছেন জামায়াত কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর