শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
জয়ে মরিয়া দুই দলই

ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অস্থায়ী কার্যালয়

বরিশাল

নিজামুল হক বিপুল ও রাহাত খান, বরিশাল থেকে

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল শহর এখন উৎসবের নগরী। তবে চোখে পড়ার মতো বিষয় হচ্ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০টি ওয়ার্ডের প্রায় সর্বত্রই গজিয়ে উঠেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর অস্থায়ী কার্যালয়। আর এই কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি তৎপর বড় রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও নির্বাচনী আচরণবিধিতে স্পষ্ট বলা আছে, প্রধান কার্যালয়সহ সিটি করপোরেশন এলাকার তিনটি থানায় তিনটির বেশি নির্বাচনী কার্যালয় করা যাবে না। কিন্তু কে শুনে নির্বাচন কমিশনের কথা। বরং প্রতিযোগিতা করেই চলছে আচরণবিধি ভঙ্গের এই তৎপরতা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মোড়ে মোড়ে রাস্তার কাছেই গড়ে উঠেছে এসব অস্থায়ী কার্যালয়। যদিও বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীরা এ বিষয়ে বলছেন ভিন্ন কথা। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। আর ছোট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গে অভিযোগ করছেন বড় দলগুলোর প্রতি। গতকাল শহরের রূপাতলী, ভাটার খাল এলাকা, চাদমারী, বগুড়া রোড কাজী অফিস, আমতলা পানির ট্যাংকি এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় গজিয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের নৌকা এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের নতুন নতুন অস্থায়ী কার্যালয়। এনিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক মেয়র প্রার্থী। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ইকবাল হোসেন তাপস। গতকাল দুপুরে নির্বাচনী প্রচারকালে নগরীর কেডিসি বস্তিতে কথা হয় তাপসের সঙ্গে। তিনি বলেন, একটি বিশেষ মার্কার পক্ষে একজন প্রার্থী ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গড়ে তুলেছেন দুই-তিনটি করে অস্থায়ী কার্যালয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেন কিছুই দেখছে না। তাপস অভিযোগ করেন, শুধু অস্থায়ী কার্যালয়ই নয়, একটি বিশেষ মার্কার পক্ষে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, বরিশাল সিটি করপোরেশন, শেরেবাংলা মেডিকেল হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রচার চালাচ্ছেন। যা আচরণবিধির সরাসরি লঙ্ঘন। তিনি বলেন, তারা বাইরের লোকজন এনে শহরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, আচরণবিধি দিব্বি লঙ্ঘন হচ্ছে। প্রতিটি দলের প্রতীক তিন মিটার লম্বা হওয়ার কথা। সেখানে বিশাল প্রতীক তৈরি করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অস্থায়ী কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছে। এতে ভোটারের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আচরণবিধি নিয়ে প্রশাসন মোটেই সোচ্চার নয়। নির্বাচন কমিশন বলেছিল, খুলনা-গাজীপুরের মতো নির্বাচন বরিশালে হবে না। কিন্তু আমরা কোনো লক্ষণ দেখছি না।

এখানে সরকারদলীয় এমপিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তিন-চারটা করে অস্থায়ী কার্যালয় করা হয়েছে। সরকারি অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণসংযোগ চালাচ্ছেন। মিছিল-মিটিং করছেন। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রতিকার মিলছে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি সম্পর্কে মাইকিং করে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর কথা। কিন্তু তারা সেটা করছেন না। তার প্রতি প্রশ্ন ছিল আপনার দল ও সমর্থকরাও একইভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একাধিক অস্থায়ী কার্যালয় গড়ে তুলেছেন। জবাবে সরোয়ার বলেন, আমরা ওদের (আওয়ামী লীগ) ফলো করছি। তারা যেহেতু একাধিক কার্যালয় গড়ে তুলেছে, সে কারণে আমরাও করেছি।

আচরণবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার কাণ্ডারি আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, এসব অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। এসব বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, আমার জানামতে, আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয় আছে। এর বাইরে কিছু নেই। বরং বিএনপিই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অস্থায়ী কার্যালয় গড়ে তুলেছে।

ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অস্থায়ী কার্যালয় গড়ে তুলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। এটি প্রধান দুটি দলের কৌশল। তারা দলীয় কার্যালয়কে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, আমরা এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। যখনই আমরা অভিযান চালাই তখন তারা কার্যালয় থেকে পোস্টার, ব্যানার সরিয়ে নেয়। ফলে আমরা তাদের আইনগতভাবে ধরতে পারছি না। তিনি বলেন, একটা ওয়ার্ডে রাজনৈতিক দলগুলোর কয়টা কার্যালয় থাকবে সেটা তাদের বিষয়। তাই এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।  নির্বাচনী কার্যালয় হয়েছে কি না সেটা আমরা দেখি।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছি। এরপরও যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরকম কোনো দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর