শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
জয়ে মরিয়া দুই দলই

জাতীয় নির্বাচনের আগে ফল ঘরে তোলাই লক্ষ্য

সিলেট

আরাফাত মুন্না, সিলেট থেকে

‘সিলেট যার ক্ষমতা তার’ রাজনীতিতে এমন বিশ্বাস রয়েছে বহুদিন ধরেই। আসলে বাস্তবেও তাই ঘটেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে (সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকা) যে দল জয়লাভ করেছে, তারাই সরকার গঠন করেছে। এবার তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিলেট সিটি করপোরেশনে যে কোনো মূল্যে জয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সিলেট-১ আসনই হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.)সহ ৩৬০ আউলিয়ার অধিকাংশেরই মাজার। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেন সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমেই। তাই ধর্মীয় ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই নগরীর ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ প্রধান দুই দলই। এই সিটির জয় নিশ্চিত করতে দুই দলই নানা কৌশল নিয়েছে। সিটি নির্বাচনের শুরু থেকে দলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নজিরবিহীন ঐক্যবদ্ধতা নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও দলের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। আর দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি শুরুতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর পৃথক মেয়র প্রার্থী আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে নিয়ে বেকায়দায় থাকলেও গত বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় সেই ঝামেলা থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এখন জামায়াতের মন গলানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই সিলেটে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ছাড়া এবার সিসিক নির্বাচনে কোন্দল ঠেকাতে কাউন্সিলর পদে কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে ফ্লোর উন্মুক্ত রেখেছে দুই দলই। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে শুধু সিলেট-১ আসনে বিএনপির খন্দকার আবদুল মালিক জয়ী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে বাকি ১৮টি আসনে দলীয় প্রার্থীরা পরাজিত হলেও সরকার গঠন করেছিল বিএনপি। তেমনিভাবে সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দুবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপির প্রার্থী এ আসনে জয়ী হলে তাদের দল সরকার গঠন করে। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, ২০০১ সালে বিএনপির এম সাইফুর রহমান এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত জয়ী হন। এ কারণেই আসনটি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিলেট ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। সিলেট ছাড়া অন্য কোথাও এত পীর আউলিয়ার মাজার নেই। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সিলেটে যে দল জয়লাভ করেছে, সেই দলই সরকার গঠন করেছে। তাই রাজনৈতিকভাবেও সিলেটকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, সিলেটের অন্যান্য নির্বাচনের চেয়ে এবার আমাদের অবস্থান অনেক ভালো। এবার আমাদের দলের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। সবাই একযোগে দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে, নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত সিলেটের এই সিটিতে জয়ের মাধ্যমেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার জয় সুনিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা।জানতে চাইলে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, আসলে সিলেটকে পুণ্যভূমি হিসেবেই সবাই চেনে। এখানে ৩৬০ জন আউলিয়ার মাজার। তাই ধর্মীয়ভাবে এই এলাকা নিয়ে দেশের মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে, পীর আউলিয়ারা যাকে দোয়া-আশীর্বাদ করে দেন তিনিই নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি আরও বলেন, আধ্যাত্মিক ধারণার পাশাপাশি সিলেট নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সিলেটের মানুষ অনেক সচেতন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় কোথাও গণভোট প্রয়োজন না হলেও সিলেটে কিন্তু ঠিকই গণভোট হয়েছিল। গণভোটের মাধ্যমেই আসাম থেকে সিলেট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। সেই হিসেবে সিলেট রাজনৈতিকভাবেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ জুলাই নির্বাচনে সিলেটের বিচক্ষণ মানুষ ধানের শীষে ভোট দিয়ে সরকারের জুলুম-নির্যাতনের জবাব দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর