‘সুষ্ঠু হবে নির্বাচন-ভোট দিবে প্রশাসন’—এমন একটা বক্তব্য বা স্লোগান এখন বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। শহরের যে প্রান্তে যাওয়া যায় না কেন, এই অপ্রিয় কথাটা শোনা যায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে চাপা ভয়, আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা আছে। গত কয়েক দিনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ভোটারদের পাশাপাশি প্রার্থীরাও ভোট নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দিতে পারাটাই হবে বড় ব্যাপার। বরিশাল শহরের স্টেডিয়াম বস্তির মলি বেগম বলেন, ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। একই বস্তির বাবুল বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে পারবে কি না সেটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। ভয়-আতঙ্ক তো আছেই। রূপাতলী এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ মিয়া বলেন, প্রকাশ্যে কোনো রকম হুমকি নেই। তবে ভিতরে ভিতরে অনেকেই হুমকি পাচ্ছেন। রিকশাচালক কালাম মিয়া বলেন, ভোট কেমন হইবো বলতে পারি না। তবে সুষ্ঠু ভোট হলে এক রকম ফলাফল হবে, আর না হলে আরেক রকম। সেটা কী রকম জানতে চাইলে বলেন, এইটা তো ভোটের দিনই বুঝতে পারবেন। ভোটারদের এমন আশঙ্কার কথা শোনা গেল একাধিক মেয়র প্রার্থীর মুখেও। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস সুষ্ঠু ভোট হবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বলেন, ভোটার ভোট দিতে পারবে কি না সেটা বলা খুব কঠিন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বরিশাল শহরে এখন একটা স্লোগান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, ‘সুষ্ঠু হবে নির্বাচন-ভোট দিবে প্রশাসন।’ এটাই বরিশালের ভোটের আসল চিত্র। একজন প্রভাবশালী প্রার্থীর পক্ষ থেকে সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে ভোটারদের মাঝে। তিনি বলেন, আমরা একজন নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। তাপস বলেন, বরিশালের নির্বাচন হবে কি-না তা নিয়েই এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশা করেছিলাম সুন্দর নির্বাচন হবে। কিন্তু নির্বাচনকে উৎসব মুখর মনে হচ্ছে না। মানুষের ইচ্ছা আছে ভোট দেওয়ার, আমরাও উৎসাহ দিচ্ছি। কিন্তু যেভাবে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে তাতে কতটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তা নিয়ে তো শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক-উদ্বেগ আছে। বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী জানালেন, ভোটারদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এই হুমকি যেমন সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষ থেকে আসছে, তেমনি ক্ষমতার বাইরে থাকা প্রভাশালী প্রার্থীদের পক্ষ থেকেও আসছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকার ভোটারদের বেশি হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানে বিএনপির অবস্থান নেই। তারাই উল্টো ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, যাতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে না যায়।