রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাণিজ্যযুদ্ধে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা দুটোই আছে বাংলাদেশের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাণিজ্যযুদ্ধে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা দুটোই আছে বাংলাদেশের

মাহবুব আহমেদ

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে সেটি দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এ শুল্ক যুদ্ধ যদি মহাযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়, তবে তার গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করা এক সময় অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।

বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এডিবি-তে দায়িত্ব পালন করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক শুল্কহার বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা দুটিই আছে। স্বল্প বা মধ্য মেয়াদে সম্ভাবনার দিকে বেশি জোর দেওয়া যেতে পারে। তবে শুল্ক যুদ্ধ আরও সম্প্রসারিত হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের রপ্তানি বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মাহবুব আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে দেশটি তৈরি পোশাক আমদানি করেছে ৮ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে চীন থেকে আমদানির পরিমাণ ২ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার, আর বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে মাত্র ৫০৬ কোটি ডলার। সাদামাটাভাবে যে কেউ বলতে পারেন উচ্চ শুল্ক হার আরোপের ফলে চীন হতে আমদানি না করে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা বিকল্প উৎস খুঁজবেন। এ বিকল্প উৎস হিসেবে বাংলাদেশ আসতে পারবে কি না তা নির্ভর করছে চীনে যেসব এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর শুল্ক বেড়েছে সেসব এইচএস কোডভুক্ত তৈরি পোশাক বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে সক্ষম কি না। তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আমাদের পোশাক খাতে নিরাপত্তা কর্মপরিবেশে অনেক উন্নতি হয়েছে। তাছাড়া তৈরি পোশাকের কাঁচাপণ্য তুলার ওপরও পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের ফলে দুই দেশের তুলা বাংলাদেশে সহজলভ্য হবে, ফলে দামের দিক থেকেও বাংলাদেশ সুবিধা পেতে পারে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের ঝুঁকি সম্পর্কে এডিবির বিকল্প নির্বাহী পরিচালক বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও ভারতের পণ্যের ওপরও শুল্ক বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের মূল রপ্তানি উৎস ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। আমদানি উৎস চীন ও ভারত। অর্থাৎ আমাদের বাণিজ্যের প্রধান চারটি অংশীদারই এ শুল্ক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের চাঙ্গা অর্থনীতিতে আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীত অবস্থায় দেশের রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। তাই এ বাণিজ্যযুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি ফল কী দাঁড়াবে তা এখনই বলা মুশকিল।  এ পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে কোনো ধরনের ঝুঁকি পরিলক্ষিত হওয়া মাত্রই টিকফার (বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো চুক্তি) আওতায় এ বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরে সম্ভাব্য সুবিধা আদায় করা। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। দোহা রাউন্ডের পর ডব্লিউটিও-এর কার্যক্রমে তেমন কোনো অগ্রগতিও নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশের উচিত হবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) নজর দেওয়া।

সর্বশেষ খবর