সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
উড়ছে টাকা ভোটের মাঠে

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কালো টাকা নিয়ে

রাজশাহী

জুলকার নাইন, রাজশাহী থেকে

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই রাজশাহীতে কালো টাকা উড়ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির  কর্মী-সমর্থকেরা। টাকা ছড়িয়ে নিম্নবিত্তদের ভোট কেনার অভিযোগ আছে একে অন্যের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের মতে, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কালো টাকা ছড়ানো বাড়ছে। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, পোস্টার লাগানোর প্রক্রিয়া থেকেই কালো টাকার ব্যবহার শুরু করেছে সরকারি দল। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দাবি, বিএনপি লন্ডন থেকে দেওয়া নির্দেশনায় কার মাধ্যমে কোথায় কালো টাকা হস্তান্তর করেছে তা রাজশাহীবাসী জানে। রাজশাহী জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, নির্বাচনী বিধি  মোতাবেক একজন মেয়র প্রার্থী সর্বসাকল্যে পৌনে ১৬ লাখ টাকা নির্বাচনী কাজে ব্যয় করতে পারবেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচ এম খায়রুজ্জামান  লিটনের সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পুরো টাকা তিনি নিজ তহবিল থেকে খরচ করবেন। এর মধ্যে কেবল কর্মীদের পেছনে খরচ করবেন এক লাখ ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া পোস্টারে ২ লাখ ৭৯ হাজার, নির্বাচনী ক্যাম্পে ২০ হাজার, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে ১৮ হাজার, যাতায়াতে ৪৮ হাজার, ঘরোয়া  বৈঠকে ৬০ হাজার লিফলেটে ৮০ হাজার, হ্যান্ডবিলে সোয়া ৩ লাখ, ডিজিটাল ব্যানারে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা, ১০ পথসভায় ১৪ হাজার, মাইকিং এ এক লাখ ৪৫ হাজার ৮০০, প্রতীকে এক লাখ ২০ হাজার এবং আপ্যায়নে ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

অপরদিকে ? বিএনপির প্রার্থী ও দলটির নগর সভাপতি মোসাদ্দেক  হোসেন বুলবুলও সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার নিজ তহবিল থেকে আসবে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৫ লাখ টাকা স্ত্রীর ভাই বজলুর রহমান এবং ৫ লাখ টাকা জাফর ইমাম দেবেন। বুলবুলের এবারের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে, পোস্টারে এক লাখ ৩২ হাজার ৫০০, নির্বাচনী ক্যাম্পে এক লাখ ২০ হাজার, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে ৬০ হাজার, যাতায়াতে ৭০ হাজার, প্রতীকে ৫০০, অফিস আপ্যায়নে ২৪ হাজার, ৩০ পথসভায় ১৫ হাজার, মাইকিং এ ৬৪ হাজার লিফলেটে ২ লাখ ৭৫ হাজার, হ্যান্ডবিলে এক লাখ ৮০ হাজার, ব্যানারে এক লাখ ২২ হাজার এবং ডিজিটাল ব্যানারে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তবে কর্মীদের পেছনে খরচ নেই বলে অঙ্গীকারনামায় দেখিয়েছেন বুলবুল।

কিন্তু মহানগরীর প্রেস ও ডিজিটাল প্রেস মালিকদের ধারণা, দুই প্রার্থীর যে পরিমাণ পোস্টার-ব্যানার শহরে লাগানো হয়েছে সেটাই কোটি টাকার উপরে। বেশিরভাগ পোস্টার ঝুলছে লেমিনেটেড অবস্থায়। এ ব্যাপারে প্রার্থীদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, তাদের নিজ অর্থায়নের বাইরে কোনো শুভাকাঙ্খী পোস্টার লাগালে তারা বাধা দিতে পারেন না। এর বাইরে শহরজুড়ে থাকা কয়েক শ’ নির্বাচনী কার্যালয়ের প্রতিটিতে প্রতিদিন কমপক্ষে হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। সূত্রের খবর, রাজশাহীতে সরাসরি ভোট কেনাবেচার নগদ অর্থ বিতরণ এখনো শুরু হয়নি। তবে কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে মাঠ দখল রাখতে উভয় পক্ষ থেকেই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের মতে, নির্বাচনী ব্যয়সীমা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। আর নির্ধারিত ব্যয়সীমায় এখন নির্বাচন করাটাও দুঃসাধ্য।

বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের অভিযোগ, কালো টাকার পোস্টারে শহর ছেয়ে ফেলা হয়েছে। এখন ভোটের মাঠ কালো টাকায় দখলে রেখেছে সরকারি দল। অর্থ দিয়ে ভোট ও প্রশাসন কিনে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, কালো টাকা কাদের কাছে আছে, কারা কালো টাকা দিয়ে জ্বালাও পোড়াও করেছিল, মানুষ পুড়িয়েছিল এবং কারা কালো টাকা ব্যবহার করে অবৈধপন্থায় সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল তা নগরবাসী জানে।

সর্বশেষ খবর