সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
উড়ছে টাকা ভোটের মাঠে

ভোট কেনা নিয়ে যত কথা

বরিশাল

নিজামুল হক বিপুল ও রাহাত খান, বরিশাল থেকে

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ির অভিযোগ উঠেছে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে। ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বস্তিবাসী দরিদ্র লোকজনের ভোট কেনা-বেচার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসছে। একই সঙ্গে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বড় দলগুলোর পেশি শক্তির মহড়ার। একাধিক মেয়র প্রার্থী বলেছেন, এরই মধ্যে টাকা এবং পেশি শক্তির ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু দৃশ্যমান না হওয়ায় এসবের কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। আর এ কারণেই প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বিঘ্ন হতে পারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। সরেজমিন বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার  স্টেডিয়াম বস্তি, রসুলপুর বস্তি, কেডিসি বস্তি, ভাটার খাল বস্তি, আলেকান্দা, রূপাতলী ও নগরীর বর্ধিত এলাকা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দরিদ্র ভোটারদের ভোট নিজেদের বাক্সে নিতে তৎপর বড় দলগুলো। স্টেডিয়াম বস্তির ফাতেমা বেগম বললেন, বাজান ভোট তো কিছু কেনাবেচা হয়ই। এ কারণে ভোট আসলেই তো বস্তির লোকজনের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু সবাই যে টাকা নিয়ে ভোট দেয় তা কিন্তু ঠিক নয়। এবারও ভোট কেনাবেচা হবে এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বস্তিতে তো এ নিয়ে কানাঘুষা আছেই। রিকশাচালক নূর হোসেন বলেন, টাকা খাইব কিন্তু ভোট দিব না। কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বস্তির লোকজনও তো রাজনীতি করে। তাই নিজের দলরে রাইখা অন্য দলের প্রার্থীকে ভোট দেবে না। কিন্তু টাকা ঠিকই খাবে। রসুলপুর বস্তির বাসিন্দা বাবুল হোসেন বলেন, শুনতাছি  ভোটের আগেই টাকা দিবে। কারা টাকা দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই যারা বড় দলের মেয়র প্রার্থী তারা ছাড়া আর কে দেবে। নগরীর কাটপট্টি এলাকার একজন যুবদল কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলের মেয়র প্রার্থীই টাকা ছাড়বেন। এই টাকা দিয়ে ভোট কেনার ঘটনা ঘটবে নির্বাচনের এক দুই রাত আগে। মহানগর বিএনপির আরেক নেতা বলেন, ভাই দরিদ্র লোকজন তো টাকা নেয়। এ কারণে বড় দলগুলো টাকা দিয়ে ওই ভোট নিজেদের বাক্সে নিতে তৎপর থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। আলেকান্দা এলাকার একজন আওয়ামী লীগ কর্মী বললেন, নগরীর বস্তির ভোটেই টাকার খেলা হবে। যে যত বেশি টাকা ছাড়বে বস্তির ভোট তার পক্ষেই যাবে। দলটির আরেকজন কর্মী সানাউল বলেন, টাকা নিয়ে সবাই যে ভোট দেবে তা মনে হয় না। তবে একটা অংশ তো আছেই টাকায় বিক্রি হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বস্তির ভোট কিনতে ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তৎপর। বস্তির ভোটারদের ওপর যাদের প্রভাব আছে এমন নেতারাই দুই দলের পক্ষে কাজ করছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কালো টাকা ছড়াছড়ি নিয়ে অভিযোগ করেছেন একাধিক মেয়র প্রার্থী। কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী এ কে আজাদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কালো টাকার ছড়াছড়ি শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কালো টাকা ও পেশির ব্যবহার। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অভিযোগ করার পরও কমিশন বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। বাসদ (খালেকুজ্জামান) মেয়র প্রার্থী ড. মনীষা চক্রবর্তী বলেছেন, বস্তিগুলোতে কালো টাকা ছড়ানো হচ্ছে। পেশি শক্তির ব্যবহারও বাড়ছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর