মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি ভোটে সন্দেহ অবিশ্বাস

এজেন্ট নিয়ে হাহাকার লবিং-পরীক্ষা

রাজশাহী

জুলকার নাইন, রাজশাহী থেকে

তীব্র গরমের পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে রাজশাহীতে। নির্বাচনী ডামাডোলে ব্যস্ত মহানগরীর জনজীবনে এসেছে খানিকটা  স্বস্তি। কিন্তু  নির্বাচনের সপ্তাহের কম সময় বাকি থাকায় দম ফেলার সময় নেই প্রার্থীদের। প্রচারণার মাইকিংয়ে শহরে এখন কান পাতাও দায়। প্রচারণার পাশাপাশি নির্বাচনী কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগই এখন তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। প্রায় দেড় হাজার করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলে দেখা দিয়েছে ভিন্ন দুই চিত্র। এক পক্ষে চলছে হাহাকার, অন্য পক্ষে আধিক্যের কারণে চলছে লবিং, নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা। রাজশাহী নির্বাচন অফিসের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৩৮টি কেন্দ্রের এক হাজার ২৬টি বুথে। প্রতিটি বুথেই প্রতিটি মেয়র প্রার্থীর একজন করে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার কথা। ভোটের দিন সকাল ৭টার মধ্যেই প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে পোলিং এজেন্টের তালিকা জমা দিতে হবে একেকজন প্রার্থীর। তারা সকাল ৮টা থেকে ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রার্থীর প্রতিনিধিত্ব করবেন। ভোটে স্বচ্ছতা আনার জন্য এই পোলিং এজেন্টের প্রতিনিধি রাখা হয়।

জানা যায়, গ্রেফতার আতঙ্ক ও অজানা হয়রানির আশঙ্কায় বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের এজেন্ট হওয়া নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত তার নিজ দলের কর্মীরা। এর মধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে পোলিং এজেন্ট পাওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বলা হয়, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে যোগাযোগ করতে। এরপর পোলিং এজেন্টের প্রাথমিক তালিকায় নাম থাকা কয়েকজনের গ্রেফতার পরিস্থিতি আরও জটিল করে। আগ্রহী হয়ে তালিকায় নাম লেখানোর পরও প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন না অনেক এজেন্টই। এই শূন্যস্থান পূরণে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে বিএনপি প্রার্থীর কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া সদ্য সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তার পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইলেকশন কমিশনের কাছে কয়েক দফায় দাবি জানালেও এর কোনো সুরাহা হয়নি গতকাল পর্যন্ত। বুলবুল নির্বাচনের তিন দিন আগে থেকে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফেরা পর্যন্ত পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

বিএনপির নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের জড়তা তো আছেই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের জড়তা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তাদের মনোবল চাঙা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, পোলিং এজেন্ট না পেলেও আমরা জয়লাভ করব।’ বুলবুলের প্রচার সেলের প্রধান নাজমুল হক ডিকেন বলেন, বিএনপির প্রার্থীর প্রায় ১৪৫০ জন পোলিং এজেন্টকে কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গতকাল এবং আজও প্রশিক্ষণ হয়েছে। যারা গ্রেফতার হয়েছেন বা আতঙ্কে আসতে চাইছেন না তাদের স্থানে অন্যদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার কাজ চলছে। ভয়ভীতি ও গ্রেফতারের কারণে বিএনপিতে পোলিং এজেন্ট সংকটের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ অভিযোগ করা ছাড়া বিএনপি এখন পর্যন্ত একটা ঘটনারও প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। সত্যিকার অর্থে বিএনপির এখন কর্মীই পাই। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে দলের ভিতর এত দ্বন্দ্ব যে বিএনপি বিপর্যস্ত। এর প্রমাণ এই পোলিং এজেন্ট না পাওয়া।’ সূত্র মতে, আওয়ামী লীগে এতসংখ্যক কর্মী পোলিং এজেন্ট হতে চাইছেন যে কাকে রেখে কাকে করা হবে তা নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয়। এ জন্য কয়েক দিন ধরে আগ্রহী পোলিং এজেন্ট প্রার্থীদের এক ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। আগ্রহীদের দিয়ে করানো হচ্ছে পথসভা, চালানো হচ্ছে প্রচারণা। এরপর নেওয়া হচ্ছে তালিকায়। আওয়ামী লীগের মহানগর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান প্রধান জানান, মহানগরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের দিন তারা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, কোন পরিস্থিতিতে কার কাছে কীভাবে যোগাযোগ করবেন এসব এবং বুথে তাদের দায়িত্ব কীভাবে তা-ই শেখানো হচ্ছে এসব প্রশিক্ষণে। আগামী ২৬ তারিখের মধ্যেই পোলিং এজেন্টের তালিকা চূড়ান্ত হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।

সর্বশেষ খবর