মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি ভোটে সন্দেহ অবিশ্বাস

দুই দলের দুই কৌশল

সিলেট

আরাফাত মুন্না ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আর বাকি পাঁচ দিন। প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ভোটের দিনের নানা কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিং এজেন্টের বিষয়টি। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হয়েও বিগত নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে নিজের এজেন্ট না থাকাটা এবারও ভাবাচ্ছে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। অন্যদিকে এজেন্টের নাম প্রকাশ হলেই অন্য সিটি নির্বাচনগুলোর মতো পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এবার তাই দুই দলই পুলিং এজেন্ট ঠিক করতে নিয়েছে নানা কৌশল। দুই দলের একাধিক সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় সূত্র জানায়, নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের ১৩৪ কেন্দ্রের ৯২৬টি বুথে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটারের ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ভোটের আগের দিনই প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ ভোটগ্রহণের সামগ্রী পৌঁছে যাবে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। এবার সিলেটে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন নারী ভোটার রয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, বিগত ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে পুলিং এজেন্ট না পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষের এজেন্ট হয়েও কেন্দ্রে আসেননি। ভোট শুরু হওয়ার এক-দুই ঘণ্টার মধ্যেই কেন্দ্র থেকে চলে যান। সূত্র জানায়, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফল বিশ্লেষণে কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকার জন্য দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে এজেন্ট বিক্রি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে এবার কোন্দল না থাকলেও টাকার বিনিময়ে এজেন্টদের প্রভাবিত করার বিষয়টিকে উড়িয়ে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। জানা গেছে, এবার প্রতিটি বুথের জন্য অন্তত দুজন করে, কোনো কোনো কেন্দ্রে বুথপ্রতি তিনজন করে এজেন্টের নাম তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। ভোটের দিন সকালেই মূলত এজেন্ট চূড়ান্ত করতে চায় তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গতবারের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার আমরা সতর্কতার সঙ্গে পুলিং এজেন্টদের তালিকা তৈরি করছি। কোনো বুথ যাতে এজেন্ট ছাড়া না থাকে এজন্য প্রয়োজনে তালিকায় একাধিক ব্যক্তির নাম রাখা হচ্ছে।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো সিলেটেও সরকারি দল আগেই এজেন্টদের সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। দলের মেয়র প্রার্থীর সম্ভাব্য এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হানা দিচ্ছে। কোনো মামলা না থাকলেও পুরনো মামলায় সম্ভাব্য এজেন্টদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে সিলেটের পুলিশ। তাদের অভিযোগ, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা চান বিএনপির কোনো এজেন্ট যাতে কেন্দ্রে যেতে না পারে। তারা নির্বিঘ্নে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে জয় লাভ করতে পারে।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দলের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আলী আহমদ বলেন, আমাদের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হানা দিচ্ছে। তাই পুলিং এজেন্টের বিষয়টি আমরা এখনো ঠিক করতে পারিনি। তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে যাতে আমাদের শক্ত এজেন্ট দিতে পারি, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি। বুথপ্রতি অন্তত দুজন করে এজেন্টের তালিকা করা হচ্ছে। এদের যাচাই বাছাই করে ভোটের দিন সকালেই এজেন্ট চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি। আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন ও ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ১২৭ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে বিএনপির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম দলের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেও ব্যালট পেপারে তার নাম থাকবে বলে জানিয়েছেন রিটানিং অফিসার মো. আলীমুজ্জামান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর