বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় ডিসিদের ভূমিকা চায় সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনকালীন সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে যেন কোনোভাবেই পরিস্থিতির অবনতি না হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে ডিসিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড যেন না বাড়ে।

সন্ত্রাস ও মাদকের বিস্তার ঠেকাতেও ডিসিদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সরকার। সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ডিসিরা ভূমিকা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে গণসচেতনতা বাড়ানো এবং সন্ত্রাস-মাদকের বিরুদ্ধে জনগণের সোচ্চার ভূমিকা পালনের ব্যাপারে ডিসিদের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন-২০১৮-এর প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন অধিবেশনে এসব বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গতকাল ছিল সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। আজ শেষ দিন।

সম্মেলনের কার্য অধিবেশনে গতকাল অংশ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, কোনো চাপের মুখে মাথানত না করতে তিনি ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন। ডিসিদের নিজ নিজ জেলায় মন্ত্রী, এমপিসহ ভিআইপিদের প্রোটোকল কমিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাসের মতো বাকি। তাই তাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। রাস্তাগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। বিদ্যমান রাস্তাগুলো সচল রাখতে হবে। নতুন করে রাস্তার কোনো স্বপ্ন দেখানো যাবে না। ভারি বর্ষণে যেসব রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো গাড়ি চলাচলের উপযোগী করতে হবে। যানজট কমাতে হবে। পশুবাহী পরিবহন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক, বাসসহ আসন্ন ঈদুল আজহায় রাস্তায় স্বস্তিদায়ক পরিবেশ বজায় রাখতে ডিসিদের মনিটরিং বাড়াতে হবে।

এর আগে গতকাল দুপুরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত কার্য অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, যেভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আছে সেইভাবে যাতে আগামীতেও নিয়ন্ত্রণে থাকে সে বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিষয়ে যে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছেন সে বিষয়ে সচেতন থেকে কাজ করার জন্য আমরা তাদের বলেছি।

তিনি জানান, চিনি কলগুলো যাতে পুরো বছর চালু থাকে তার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। চিনি উৎপাদিত হয় মাত্র তিন মাস। এটা যাতে সারা বছর হয় সেজন্য আমরা উদ্যোগ নেব। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সার বিতরণ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়ে আসছে। এমনকি ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, রাস্তা অবরোধেও সার ডিস্ট্রিবিউশনে কোনো সমস্যা হয়নি। তখনো সরকার সব জায়গায় সার পৌঁছে দিয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। আমি তো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। কিছু কিছু কাজে মতানৈক্য আছে, তবে সমন্বয়হীনতা আছে এমন আমার জানা নেই। মতবিরোধ তো আমার সঙ্গে আমার সচিবেরও হয় সেটা বড় বিষয় নয়। তবে কোনো প্রকার সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়নি।

নির্বাচনে ডিসিদের ভূমিকা নিয়ে কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ সময় আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি অত্যন্ত সুচারুরূপে দেখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কোনো সময়ই করার সুযোগ নেই। তবে এটা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত আলোচনা করবে। খন্দকার মোশাররফ বলেন, আলোচনার মধ্যে বিশেষ করে এসেছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প। যেটা আমাদের বিবেচনায় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ভালো একটি প্রকল্প। আগে আমরা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কথা বলেছি এখন আমরা ক্ষুদ্র সঞ্চয় নিয়ে কথা বলি। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র সঞ্চয় সিস্টেম চালু করেছেন। আমরা ঋণের আবর্তে মানুষকে ফেলতে পারি না। বরং তার চেয়ে আমরা সঞ্চয় বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। যাতে করে তাদের নিজেদের সঞ্চয় থেকেই তাদের উন্নয়নের পন্থা আবিষ্কার করতে পারে। এরপরও যদি তাদের সঞ্চয় থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় কভার করতে না পারে সেক্ষেত্রে তারা পল্লী উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও এগিয়ে যেতে পারবে। এসব বিষয়ে ডিসিদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমদ বলেছেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড তদন্তের দায়িত্ব সরকার যেই সংস্থাকে দেবে সেই সংস্থাই দায়িত্ব পালন করবে। এটা নিয়ে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই। এটা নিয়ে কোনো ডিসকাসের সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, যার যার জায়গা থেকে যার যার কাজ করবে। এটা কোনো সমস্যা নয়। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে দিয়ে কী করাবে। যার যেটা ম্যান্ডেট আছে সে-ই সেটা করবে।

সর্বশেষ খবর