শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না : আরিফ

ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না : আরিফ

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ভোট নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। তবে এই পুণ্যভূমিতে কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। তিনি বলেন, আমি পাঁচ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনের সময় আড়াই বছরই জেলে থাকতে হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যে পরিমাণ কাজ করেছি, তা সিলেটের ইতিহাসে আর হয়নি। ভোটাররা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ১৭ বছর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে নিজের আড়াই  বছরের পার্থক্য নির্ণয় করেই ভোট দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আরিফুল হক চৌধুরী। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রচারণায় কেমন সাড়া পাচ্ছেন— এমন প্রশ্নে আরিফ বলেন, মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেখানেই যাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবাই এগিয়ে এসে আমার প্রচারণায় অংশ নেন। তবে অনেকে আবার ভয় পান প্রচারণায় এলেই বুঝি মামলা খেতে হবে। নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে আরিফুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত পরিবেশ ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। তিনি বলেন, এখনই আমার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে। পুরনো মামলায় আমার নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমি ভোটারদের সমর্থন নিয়ে সন্তুষ্ট, কিন্তু ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে টেনশনে আছি। তিনি বলেন, আমি শুধু সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। নগরবাসীর সমর্থন ও ভোটারদের ব্যাপক সাড়ায় আমি অভিভূত। প্রশ্নহীন নির্বাচন হলে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

কামরানকে ভোট না দিয়ে মানুষ আপনাকে কেন ভোট দেবে— এমন প্রশ্নে আরিফ বলেন, মানুষ শুধু ধানের শীষ আর নৌকা দেখে ভোট দেবে না। যার মধ্যে নগরীর উন্নয়নে কাজ করার মতো সক্ষমতা রয়েছে তাকেই ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, উন্নয়ন বিষয়ে যিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও নাটকীয়তার অভিযোগ তুলেছেন, তিনি আমার বয়সে বড়। আমার আগেও মেয়র ছিলেন। তার কাছ থেকে এমন বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত। তার পরও যদি এমন কথা বলেন, তাহলে আমাকে বলতে হবে নিজে নায়ক হয়ে তিনি আমাকে হয়তো নাটক শেখানোর চেষ্টা করছেন!

ষড়যন্ত্র করে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে আরিফ বলেন, নগরবাসী আমাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করলেও আমি নগর ভবনের চেয়ারে ছিলাম মাত্র আড়াই বছর। ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় আমাকে নগর ভবন থেকে দূরে রাখা হয়। আমি এজন্যই আবারও প্রার্থী হয়েছি; যাতে মাত্র দুই বছরে যে উন্নয়নের সূচনা হয়েছে, তা সম্পন্ন করে যেতে পারি। নিজের কাজ ও নগরবাসীর প্রতি দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস আছে বলেই ১৭ বছরের ‘লং টাইম’ জনপ্রতিনিধির (কামরান) সঙ্গে আমি ‘শর্ট টাইম’ মেয়র (আরিফ) নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছি। আমার বিশ্বাস, শুরু করা উন্নয়ন কাজগুলো সম্পন্ন করতে নগরবাসী আমাকে আবার সুযোগ দেবেন। জয়ী হলে আগামী দিনেও তো জেলে যেতে হতে পারে, তখন নগরবাসীকে সেবা দেবেন কী করে— এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকলে আমি নির্দোষ হিসেবে খালাস পাব। আমাকে জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।

দলের মধ্যে থাকা বিভেদের বিষয়ে কী বলবেন— এমন প্রশ্নে আরিফ বলেন, দল ও জোটের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। আমি ২০-দলীয় জোট তথা বিএনপির একক প্রার্থী। আমার দলের একজন প্রার্থী হয়েছিলেন, তিনি সরেও গেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী শব্দটা মিডিয়ার সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেন আরিফুল হক। তিনি বলেন, দলের সব শ্রেণির নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও মাঠে আছেন। জামায়াতের মহানগর আমির প্রার্থী হওয়ায় জোটে চিড় ধরেছে কিনা— এমন প্রশ্নে আরিফ বলেন, এখানে জামায়াতের যিনি প্রার্থী, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী তো যে কেউ হতে পারেন। জাতীয়ভাবে ২০-দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইছেন। তাই এর মাধ্যমে জোটে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না। রাজনৈতিক জীবনে স্ত্রী শ্যামা হকের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আরিফুল হক বলেন, আমার স্ত্রী সব সময় আমার পাশে থেকেছেন।

বিগত পাঁচ বছরে মেয়র থাকার সময় আমি যে আড়াই বছর জেলে ছিলাম, ওই সময় তিনি নগরবাসীকে আমার শূন্যতা বুঝতে দেননি। নির্বাচনের সময়ও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করছেন। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। নগরীর মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে আরিফ বলেন, মাস্টারপ্ল্যান কামরান সাহেব করেছেন ঠিক। কিন্তু তিনি এমন প্ল্যান করেছেন, যা নিজেই অনুকরণ করেননি, বরং পদে পদে লঙ্ঘন করেছেন। তার মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী তিনি একটি কাজও করেননি। উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে হয়েছে— এর জবাবে আরিফ বলেন, জনগণের টাকা জনগণের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। নগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন মেয়রের কাজ। উন্নয়নের জন্য অর্থমন্ত্রী-মেয়রের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হয়। কারণ নগরীর উন্নয়নে উভয়েই একে অন্যের সম্পূরক। নগরী নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে আরিফ বলেন, এ শহরকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ‘সেন্ট্রালাইজড’ করতে হবে। সবকিছু এক জায়গায় জমা করে রাখলে চলবে না। তিনি আরও বলেন, নগরীতে গণপরিবহনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এর জন্য জায়গা লাগবে। ১০-১৫টি গাড়ি হলে চলবে না, কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ গাড়ি লাগবে। এসব গণপরিবহন চলাচলের জন্য পৃথক লেনও করতে হবে রাস্তায়। নির্বাচিত হলে চালু করব।

সর্বশেষ খবর