বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
নাগরিক তালিকা নিয়ে উৎকণ্ঠা

আসাম ইস্যুতে ভারতের সংসদে উত্তাপ অব্যাহত

কলকাতা প্রতিনিধি

আসামে পেশ হওয়া জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া রিপোর্ট ঘিরে উত্তাল ভারতের রাজনীতি। খসড়া তালিকা থেকে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বাদ পড়া নিয়ে অভিযোগ-অনুযোগ চলছেই। আর গত কয়েক দিন ধরেই সংসদে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আর গতকাল এই অগ্নিতে ঘৃতাহুতির সৃষ্টি হয় রাজ্যসভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মন্তব্যে। গতকাল দুপুরে রাজ্যসভায় দেওয়া ভাষণে অমিত তার গোটা দায়টাই চাপিয়ে দেন কংগ্রেসের ঘাড়ে। অমিত বলেন, ‘রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন আসাম থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করার লক্ষ্যেই আসাম চুক্তি করেছিলেন। বরং পর পর দুটি ইউপিএ সরকার যা করতে পারেনি, গত ৪ বছরে এনডিএ সরকার তা করতে পেরেছে।’ অমিত শাহ অবশ্য তার বক্তব্য শেষ করতে পারেননি। বিরোধীদের তুমুল হইচইয়ে তার গলা চাপা পড়ে যায়। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু এর পরেই সারা দিনের জন্য রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করে দেন। তবে অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করার আগে অবশ্য বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘এই স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সরকারি বক্তব্য জানাবেন রাজ্যসভায়।’ তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় সংসদের বাইরে দুই সাংসদের তর্কাতর্কি। এনআরসি ইস্যুতেই বিজেপি সাংসদ অশ্বিনী চৌবের সঙ্গে প্রবল তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। পরে অবশ্য অন্যান্য সাংসদদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। উল্লেখ্য, সোমবারই ভারতে আসাম রাজ্যে প্রকাশিত হয় জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসি)’-এর চূড়ান্ত খসড়া তালিকা। এনআরসি-এর কাছে জমা পড়া ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৬৭ জনের নাম। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে আসামের প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম। আর এরপরই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

এনআরসি ইস্যুতে কেন্দ্রের সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। সোমবার দিল্লিতে মমতা অভিযোগ করেন বিজেপি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মমতার প্রশ্ন হঠাৎ করেই বলা হচ্ছে দেশ ছেড়ে চলে যাও। খ্রিস্টান, মুসলিম, দলিত হলেই সকলকেই আলাদা করা হচ্ছে-কেন? কেন্দে র এই আচরণ একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। কে কী খাবে, কী পরবে তা বিজেপি কেন ঠিক করে দেবে?’

এনআরসি নিয়ে ভারতজুড়ে বিতর্কের মধ্যেই অবৈধ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি ইস্যুতে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন তেলেঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক রাজা সিং। গতকাল কার্যত হুমকি দিয়েই তিনি বলেন, ‘এই রোহিঙ্গারা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা যদি দেশ না ছাড়ে তাদের গুলি করে তাড়ানো উচিত। একমাত্র তবেই আমাদের দেশ নিরাপদে থাকবে।’

তবে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘আসামে যে ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম খসড়া তালিকায় নেই তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এই খসড়ার ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। যাদের যা অভিযোগ আছে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব অভিযোগ জানিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবি জানানো যাবে।’

স্ত্রী-কন্যার নাম আছে কিন্তু বাবা বা স্বামীর নেই : এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, আসামের নাগরিক তালিকাকরণে বিশৃঙ্খল ও অনিয়মের এন্তার অভিযোগ উঠেছে। সেই তালিকায় অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তানের নাম আছে নাগরিক তালিকায় কিন্তু ওই ব্যক্তিরই নাম নেই। এ ধরনের এক ব্যক্তি কাছাড় জেলার শিলকুড়ি এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন সূত্রধর। তিনি বিবিসিকে বলেন, এটা কীভাবে সম্ভব যে বাবা বা স্বামী হিসেবে আমি বৈধ নাগরিক হলাম না, অথচ স্ত্রী, কন্যা আর এক পুত্রের নাম নাগরিক পঞ্জীতে উঠল! আবার এক ছেলের নাম আছে, অন্যজন বাদ! আবার হাইলাকান্দির বন্দুকমারা এলাকার বাসিন্দা মীনারা বেগমের অভিযোগ, ‘আমার শ্বশুর আর বাবার দুজনেরই নামই ছিল ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীতে। বাকি যা কাগজ দরকার, সব দিয়েছিলাম। কিন্তু সাতজনের পরিবারের তিনজনের নাম এসেছে, বাকি চারজনের নাম নেই।’ তালিকায় যেসব মানুষের নাম বাদ পড়েছে, তাদের বেশিরভাগই বাংলাভাষী মুসলমান বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও এ নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য এখনো দেওয়া হয়নি। বাদ পড়েছে অনেক বাঙালি হিন্দুর নামও।

সর্বশেষ খবর