বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু হত্যা গোয়েন্দা ব্যর্থতা না তারাও জড়িত

নতুন বিশ্লেষণ দুই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বঙ্গবন্ধু হত্যা গোয়েন্দা ব্যর্থতা না তারাও জড়িত

সেনানিবাস থেকে ট্যাংক বের হয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে রওনা হলো। সৈন্যসহ ট্যাংক রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে সদর্পে এগিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতির বাড়ি ঘেরাও করল। ঘাতকের গুলির আঘাতে ঝাঁজরা হলো বাংলার সূর্য সন্তানের হৃদয়। সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে জাতির জনকের বুকের তাজা রক্ত কালিমা লেপন করল ইতিহাসের পাতায়। পূর্বপরিকল্পিত কষা ছকে এত কিছু ঘটে গেল। অথচ ঘুণাক্ষরেও টের পেল না রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত তৎকালীন গোয়েন্দা বাহিনী। এটা কি শুধুই গোয়েন্দা ব্যর্থতা নাকি তারাও জড়িত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের জন্মকে অস্বীকার করতে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্ন তোলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ এবং মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গোয়েন্দা ব্যর্থতা বিষয়ে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা বাহিনী ভূমিকা পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। তারা কি অথর্ব ছিল নাকি জড়িত ছিল সেটাই দেখার বিষয়। একের পর এক এতকিছু ঘটে গেল কিন্তু কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। কেউ কেউ লোক দেখানো এগিয়েছেন। কিন্তু কার্যত যাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা তারা তখন কি করছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধু একটি খুনের ঘটনা নয়, এর পেছনে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতার রদবদল ঘটিয়ে পাল্টে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশের মূল সাংগঠনিক কাঠামোকে। ক্ষমতা পাল্টানোর সহজ উপায় হিসেবে কুচক্রী মহল এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি কখনো কাম্য ছিল না। পাকিস্তানের রাজনীতির সঙ্গে মিল রেখে এই ঘটনার পটভূমি রচিত হয়েছিল। তারা শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছিল। সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক সরকার নিয়ন্ত্রিত, রাজনৈতিক সরকারকে কখনো সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটাই গণতন্ত্র। ইতিহাসের কালো অধ্যায় থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের সুবাতাস।  বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, গোয়েন্দা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এত কিছু ঘটে গেল নাকি তারাও জড়িত ছিল সেটাই এখন দেখার বিষয়। যারা সরাসরি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু যারা নেপথ্যে থেকে জাতির পিতাকে হত্যার সমস্ত ইন্ধন যুগিয়ে গেল তারা বিচারের আওতার বাইরে থেকে গেল। এতদিন ধরে এসব ষড়যন্ত্রকারী দেশের ভিতরে আছে এবং তারা এখনো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে হবে। তৎকালীন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা বা দেশে অবস্থানকারী কর্মকর্তা ছিলেন না। তিনি পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন হয়ে এসেছিলেন। তাই তার ভূমিকা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ তেমন ব্যর্থতাও স্পষ্ট। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মতো ন্যক্কারজনক অপরাধ থেকে মুক্তি পেতে হলে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে এর নেপথ্যে কলকাঠি নাড়া সব অপরাধীকে। তাতেও যদি কিছুটা কলঙ্কমুক্ত হয় জাতি।

সর্বশেষ খবর