বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
আসাম নিয়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

উদ্বেগের কিছু নেই বাংলাদেশের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

উদ্বেগের কিছু নেই বাংলাদেশের

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, আসামে নাগরিক তালিকা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, আসামে কেউ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও ইতিমধ্যে স্পষ্টভাবে বলেছেন, নাগরিক তালিকায় বাদ পড়া ব্যক্তিদের ‘বিদেশি’ হিসেবে গণ্য করা হবে না। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আসামে নাগরিক তালিকা বিষয়ে মতবিনিময়কালে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এসব কথা বলেন। তিনি মনে করেন, আসামে এনআরসির কোনো প্রভাব বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে পড়বে না। এদিকে ভারতের আসাম রাজ্যে খসড়া নাগরিক তালিকায় বাদ পড়া ব্যক্তিদের ভোটাধিকার থাকবে বলে জানিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পি রাওয়াত গতকাল দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, খসড়া নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বাদ পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের নাম ভোটার তালিকায় আছে, তারা ভোটার থাকবেন এবং ভোট দিতে পারবেন। তবে আসামে ৪০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা নাগরিকত্ব তালিকায় স্থান না পাওয়া ইস্যুতে গতকাল ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিরোধীরা একজোট হয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে মুখর হয়ে ওঠেন। এরপর লোকসভার অধিবেশন আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আসামের তিন কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করে এনআরসিতে নাম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন। খসড়া এনআরসিতে দুই কোটি ৮৯ লাখ বাসিন্দাকে প্রকৃত নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৪০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার নাম বাদ পড়েছে। জানা গেছে, এনআরসি নিয়ে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমালোচনা করছে। গতকাল ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় জিরো আওয়ারে আসামে এনআরসির প্রসঙ্গ তোলেন বিরোধী কংগ্রেস দলের সদস্য অধীর রঞ্জন চৌধুরী। অন্যদিকে রাজ্যসভায় এনআরসি ইস্যুতে উত্তাপ ছড়ায়। বিরোধী সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গতকাল ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, এনআরসি একটি প্রক্রিয়া। এনআরসিতে যে ৪০ লাখ লোক বাদ পড়েছে তাদের তথ্য-উপাত্ত এখনো যাচাই করা শেষ হয়নি। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ইতিমধ্যে বলেছেন যে এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তিনিও মনে করেন, আসামে এনআরসির কোনো প্রভাব বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে পড়বে না। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারত সরকার এনআরসি প্রকাশের আগেই আসাম রাজ্য সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার এবং কেউ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। যারা দুই দফায় প্রকাশিত তালিকায় বাদ পড়েছেন তারাও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পাবেন।

শ্রিংলা বলেন, আসামে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করতে এনআরসি প্রণয়ন কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বা আসাম রাজ্যের সরকারের সিদ্ধান্তে নয়, আদালতের নির্দেশে এনআরসি প্রণয়ন করা হচ্ছে। জানা গেছে, আসামে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য বাসিন্দাদের কাছে এমন ১৬টি ডকুমেন্ট চাওয়া হচ্ছে, যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে ওই বাসিন্দারা বা তাদের পূর্বপুরুষরা আসামে বৈধভাবে ছিলেন। আসামের বাসিন্দারা ১৬টি ডকুমেন্টের যে কোনো একটি জমা দিয়েই আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। ৪০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার ডকুমেন্ট যাচাই করার প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। শেষ পর্যন্ত নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা হতে পারে—বিভিন্ন মহলের এমন আশঙ্কাকেও অবাস্তব বলছে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো। একজন কূটনীতিক বলেন, আবেদনকারী ভারতীয় নাগরিক কি না তা-ই এনআরসিতে যাচাই করা হচ্ছে। আবেদনকারী ভারতীয় না হলে অন্য কোন দেশের তা এনআরসিতে উল্লেখ নেই। এ ছাড়া একজন ব্যক্তিকে অন্য একটি দেশের নাগরিক বললেই ওই দেশ তাকে নিয়ে নেবে না।

সর্বশেষ খবর