শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আসছে মৃত্যুদণ্ডের কঠোর আইন

সড়ক দুর্ঘটনা হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে ফাঁসির বিধান, মন্ত্রিসভায় উঠছে সোমবার

নিজামুল হক বিপুল

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখাসহ বেশ কিছু অপরাধের বিষয়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার বিধান থাকছে প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে। ইতিমধ্যে ভেটিং সম্পন্ন হয়ে যাওয়া আইনটি আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটলে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। দুই গাড়ি পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড থাকছে প্রস্তাবিত আইনে। আবার দুর্ঘটনায় না পড়লেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, চালক হিসেবে লাইসেন্স পেতে বিদ্যমান আইনে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত ছিল না। কিন্তু নতুন আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীকে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। চালকের সহকারী হতে হলেও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকতে হবে। সহকারী হতে হলেও লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক।  প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। আর পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এই ধরনের অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। আর চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়ায়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে না। কেউ এ আইন অমান্য করলে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে— এমন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেফতার করতে পারবে। প্রস্তাবিত আইনে চালকরা যাতে আইন মেনে চলেন, সে জন্য পয়েন্টের ব্যবস্থা চালু করার কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে (চালকদের) পয়েন্ট কাটার সিস্টেম আছে। অর্থাৎ, ড্রাইভার যদি একবার দোষ করেন তাহলে একটা বা দুইটা পয়েন্ট কাটতে থাকে। এভাবে পয়েন্ট নিল (শূন্য) হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। আইনে এটি চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। মোট ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। ড্রাইভিং সংক্রান্ত বিধিবিধান যদি কেউ অমান্য করে তাহলে আস্তে আস্তে তার পয়েন্ট কর্তন হতে থাকবে। কোন অফেন্সে কত পয়েন্ট কাটা যাবে সেটা তফসিলে বলা আছে। পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স আর থাকবে না। বিদ্যমান আইনে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য ২ বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে ২ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফিটনেট চলে যাওয়ার পরেও মোটরযান ব্যবহার করলে এক বছরের জেল বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।  এ ছাড়াও প্রস্তাবিত আইনে মদপান করে বা নেশাজতীয় দ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালালে, সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালালে, উল্টো দিকে গাড়ি চালালে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য স্থানে গাড়ি থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, চালক ছাড়া মোটরসাইকেল একজনের বেশি সহযাত্রী ওঠালে, মোটরসাইকেলের চালক ও সহযাত্রীর হেলমেট না থাকলে, ছাদে যাত্রী বা পণ্য বহন করলে, সড়ক বা ফুটপাথে গাড়ি সারানোর নামে যানবাহন রেখে পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে, ফুটপাথের ওপর দিয়ে কোনো মোটরযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

সর্বশেষ খবর