শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজপথে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে তখন ঝড়ো হওয়াসহ বৃষ্টি পড়ছে। এর মধ্যেই রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি মোড়ে একটি করে লেন তৈরি করে রেখেছে ছাত্ররা। মোড়ের চেকপয়েন্টে দাঁড়িয়ে একেকটি গ্রুপ হয়ে চালকের লাইসেন্স দেখছে তারা। এ সময় সেখানে এলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের গাড়ি। যদিও মুখ্য সচিব তখন গাড়িতে ছিলেন না। কিন্তু গাড়িচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। এ কারণে গাড়িটিকে চিহ্নিত করে পাঠানো হলো দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে। মামলাও দিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট। পরে মামলার কাগজ হাতে নিয়ে শাহবাগ মোড় পার হতে হলো গাড়িটিকে। গতকাল সকাল থেকেই শাহবাগ মোড়ে ট্রাফিকের ভূমিকা নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্স চেক করেছে তারা। লাইসেন্স পেলে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের লাইসেন্স নেই, তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। পুলিশও মামলা দিচ্ছে। একই চিত্র ছিল রাজধানীর বিজয় সরণির মোড়ে। সেখানেও সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টির মধ্যে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে লাইসেন্স পরীক্ষা করছিল। প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানের লাইসেন্স পরীক্ষা করে তারা। অবশ্য এ সময় ট্রাফিক পুলিশ আংশিক ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। তেজগাঁও কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এ সময় অবস্থান নেয়। একই অবস্থা দেখা যায় মতিঝিল শাপলা চত্বরে। এখানেও শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। একই সঙ্গে চলাচলকারী যানবাহনের ফিটনেস চেক করে তারা। আশপাশের রাস্তায় ছিল তীব্র যানজট। চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের কাগজ আছে কিনা তা পরীক্ষা করে তারা। এখানে তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট এলাকায়ও ছিল অভিন্ন চিত্র। বেলা ১টার দিকে উইনার পরিবহনের একটি বাস আটকায় শিক্ষার্থীরা। বাসটি যাত্রী নিয়ে গুলশান থেকে আজিমপুরের দিকে যাচ্ছিল। ল্যাবএইডের সামনে আসার পর শিক্ষার্থীরা বাসটি থামিয়ে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায়। চালক বৈধ লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হলে বাসটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিহঙ্গ পরিবহনের আরেকটি বাস থামিয়ে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা। অবশ্য দুপুরের পর সায়েন্স ল্যাবে ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক পুলিশ সদস্যের বচসায় তৈরি হয় অপ্রীতিকর দৃশ্য। তবে ঢাকার রামপুরা ব্রিজের চিত্র ছিল খানিকটা ভিন্ন। এখানে লাইন্সেন্স থাক না বা থাক কাউকেই নিজস্ব বাহনে পার হতে দেওয়া হচ্ছিল না ব্রিজ ও হাতির ঝিলের অংশ। রাস্তায় বাহন রেখে পার হতে হয়েছে পায়ে হেঁটে। কিংবা ঘুরে যেতে হয়েছে ভিন্ন পথে। রামপুরা পার হয়ে বাড্ডার বিভিন্ন অংশে রাস্তায় ক্ষণে ক্ষণে যানবাহনের কাগজ চেক করতে দেখা যায় স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরিহিত ছেলে ও মেয়েদের। গুলশান ২ নম্বর থেকে বারিধারার রাস্তায় স্কুলের ইউনিফর্ম পরিহিত তিন মেয়েকে দেখা গেল প্রায় শখানেক গাড়ির কাগজপত্র চেক এবং লাইন কন্ট্রোল করতে। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দীন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পঞ্চম দিনের মতো ঢাকায় তাদের অবস্থান চালিয়ে যায়। তবে অন্যদিকে বিক্ষুব্ধরা ভাঙচুর চালালেও পঞ্চম দিনে রীতিমতো ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নেয় শিক্ষার্থীরা। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন মহাসড়কেও ট্রাফিক পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা চেক করে বিভিন্ন গাড়ি ও চালকের কাগজপত্র। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাতুয়াইলে ডিএমআরসি কলেজ গেটে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা যানবাহনের হালনাগাদ কাগজপত্র চেক করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও একই ধরনের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

সর্বশেষ খবর