শিরোনাম
শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন মিত্রের সন্ধানে দুই দল

বাড়ছে ছোট দলের কদর । সুযোগ নিচ্ছে নামসর্বস্ব দলগুলো

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

নতুন মিত্রের সন্ধানে দুই দল

দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হঠাৎ নতুন রাজনৈতিক মিত্রের সন্ধানে নেমেছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দুই দলে এই তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উভয় দলেরই রয়েছে জোট। একটি ১৪-দলীয়, আরেকটি ২০-দলীয়। এরপরও নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিতে আরও কিছু ছোট দলকে কাছে টানার চেষ্টা চলছে। অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোট বাড়ানোর চেষ্টা করলেও বিএনপি চাইছে আপাতত পৃথক প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় করা যাবে। এ নিয়ে প্রয়োজনে আসন ছাড়ের সমঝোতাও হতে পারে। এ ছাড়া উভয় দলই শরিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ঐক্য সংহত করার উদ্যোগ নিয়েছে।রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ছোট দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থান যা-ই থাকুক, রাজনৈতিক গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এসব দলকে বড় দুই দল জোটে টানছে। তাই ভোটের আগে ছোট দলগুলোর কদর বেড়েছে। ছোট দলগুলোর নেতাদের বাসা কিংবা অফিসে গিয়ে বৈঠক করে আসছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা। এই সুযোগ নিয়ে ছোট দলগুলোও আসন নিয়ে দরকষাকষি করছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট আরও বড় হতে পারে। অনেকেই জোটে আসতে চাইছে। অনেকেই আবার নিজেরাই আলাদা জোটে ঢুকতে চাইছে। বিএনপির সঙ্গেও থাকবে না, আওয়ামী লীগের সঙ্গেও নয়। এমন জোটও হতে পারে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এটা পরিষ্কার হবে অক্টোবরে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০-দলীয় জোটের বাইরেও আমরা সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। অনেকেই সাড়াও দিয়েছে। কেউ কেউ ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে আমাদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছে। গণদাবিতে আমরা একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। আমাদের ক্ষমতায় যাওয়াই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ জন্যই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’ বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘একতরফা’ বদনাম ঘোচাতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য জোটের মিত্র বাড়ানোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনকৃত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ চায় ক্ষমতাসীন দলটি। একাদশের আগে স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এমন রাজনৈতিক দলকে জোটে স্বাগত জানাবে আওয়ামী লীগ। কেউ জোটে আসতে না চাইলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটা চায় সরকার। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে জোট সম্প্রসারণ করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ১৪ দলের মুখপাত্র আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কয়েকটি দল ১৪ দলে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই জোটের বাইরে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা মনে করে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ভোটে অংশ নেয়নি। ১৪-দলীয় জোট এবং বর্তমানে সংসদের বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়। এতে করে অনেকটাই ‘একতরফা’ নির্বাচনের উপাধি দেওয়া হয়। সে কারণে এই ‘একতরফা’ বদনাম ঘোচাতে চায় আওয়ামী লীগ। তাই প্রথম টার্গেট স্বাধীনতার পক্ষের সব রাজনৈতিক দলকে জোটে আনা। এতে কাজ না হলে যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা নিশ্চিত করতে চায় তারা। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জানা গেছে, কোনো ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই ২৪ জুলাই সিপিবি অফিসে যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। তারা দীর্ঘ সময় একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, সিপিবি একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না বাঁধলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ২৬ জুলাই কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই দিন জোট গঠনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে বৈঠক করেন বিএনএ জোটের প্রধান সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে। কয়েক দিন পর বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ফোনে কথা বলেন এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের সঙ্গেও। এদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছে বিএনপি। এসব নেতার বাসা কিংবা অফিসে গিয়েও বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাদের নেতৃত্বে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন একটি জোট হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এই ফ্রন্ট জাতীয় ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে পাশে থাকবে। এ ছাড়া এই জোটে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগকেও টানার চেষ্টা চলছে। এ দুই নেতার সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছে বিএনপিও। দলীয় সূত্র জানায়, সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি বাম দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে বিএনপি। দলের দায়িত্বশীল এক নেতা এরই মধ্যে তিনটি বাম সংগঠনের শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের যৌক্তিক দাবিতে বিএনপির সঙ্গে তারা একমতও পোষণ করেন। এসব দাবিতে তারাও মাঠে থাকবেন। তবে তারা বিএনপির সঙ্গে কোনো জোট গড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর