শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তৃণমূল

খালেদার মুক্তিতে শক্ত আন্দোলনের বিকল্প নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে শক্ত আন্দোলন কর্মসূচি চাইলেন দলের তৃণমূল নেতারা। দলের হাইকমান্ডকে তারা বলেছেন, আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে হলে ঢাকার নেতাদের মাঠে নামতে হবে। আগামী দিনে যুগপৎ আন্দোলন সফল করতে জামায়াতকে ছাড়ার পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ। তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে স্পষ্ট বক্তব্য উঠে আসে, বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। তার মুক্তির জন্য এখন থেকেই নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি মিলবে না। প্রয়োজনে সেপ্টেম্বর থেকে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হবে। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। প্রথম দফায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিএনপির ১৯টি সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে বৈঠক করে দলের হাইকমান্ড। পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দলের হাইকমান্ড খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২২টি সাংগঠনিক ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতি জেলা থেকে পাঁচজন নেতা বৈঠকে অংশ নেন। আজ প্রথম ভাগে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট এবং দ্বিতীয় ভাগে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অংশ নেন। এ ছাড়া প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, বৈঠকে সকালের অধিবেশনে নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী থাকার পরও বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়, ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির জন্য জামায়াত কোনো সমস্যা নয়। ফলে আগামী নির্বাচনের আগে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাক দেওয়া ‘জাতীয় ঐক্য’ করতে জোট থেকে জামায়াতকে বাদ  দেওয়া জরুরি। এর ফলে ড. কামাল  হোসেন, ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো নেতাদেরও জোটে সম্পৃক্ত করা যাবে। তার এ বক্তব্য সমর্থন করে একই বক্তব্য দেন লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু। সিরাজগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে আন্দোলন করে লাভ নেই। আগে ঢাকাকে ঠিক করতে হবে। ঢাকার নেতারা মাঠে নামলে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা রাজপথ দখলে নেবে।’

মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ বলেন, পুলিশের অনুমতি নিয়ে বর্তমান স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সফল করা যাবে না। ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য শক্ত আন্দোলন কর্মসূচি দিতে হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম বিশ্বাসও ঢাকার আন্দোলন জোরদারে গুরুত্ব আরোপ করেন। বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হচ্ছে না।

বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা দলের সঙ্গে বেইমানি করেছে, তাদের কিছু নেতাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এলাকার নেতা-কর্মীরা এটা ভালোভাবে নেননি। সুতরাং কেন্দ্র থেকে তাদের কোনো দায়িত্ব দিয়ে যেন এলাকায় না পাঠানো হয়।

 

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আর অবশ্যই সিইসিসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরে যেতে হবে। এ জন্যই আমাদের শক্ত আন্দোলন কর্মসূচির বিকল্প নেই।’ বৈঠকে রংপুর বিভাগের এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এ জন্য আগামী দিনে তার মুক্তির এক দফার আন্দোলন হবে। তিনি মুক্তি পেয়ে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এসব নির্বাচনে সরকারের মুখোশ জনগণের কাছে প্রকাশ পাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগের এক নেতা বৈঠকে বলেন, ‘সরকার র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হত্যা-গুম-নির্যাতন করবে আর আমরা চুপ করে থাকব তা হবে না। এবার জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। প্রয়োজনে সব কেন্দ্রীয় নেতা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করব।’ বিগত আন্দোলন প্রসঙ্গে রংপুরের আরেক নেতা বলেন, বিগত আন্দোলনে তৃণমূলে কোনো সমস্যা ছিল না। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাদের জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু সেই আন্দোলনে ঢাকার নেতাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। আগামী দিনের আন্দোলনে ঢাকার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। রাজশাহী বিভাগের এক নেতা বলেন, ‘নির্বাচন মুখ্য নয়, এখন খালেদা জিয়ার মুক্তিই দলের মুখ্য বিষয়।

এখন স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচন হয় না। নির্বাচন হয় প্রশাসনের সঙ্গে ধানের শীষের। তবে আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। এসব নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপক ভোট কারচুপির বিষয়ে দেশি-বিদেশিরা দেখছেন, জানছেন। তবে এখন বিএনপির মুখ্য বিষয় জাতীয় নির্বাচন নয়, খালেদা জিয়ার মুক্তি। আর এ জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই।’

সর্বশেষ খবর