সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

তৃতীয় পক্ষ মাঠে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফের : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৃতীয় পক্ষ মাঠে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফের : প্রধানমন্ত্রী

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুযোগ নিতে তৃতীয় পক্ষ মাঠে নেমেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে সেজন্য অত্যন্ত দুঃখিত আমরা, পদক্ষেপ নিয়েছি। যথেষ্ট হয়েছে আর নয়, শিক্ষার্থীরা এবার ক্লাসে ফের। শিক্ষার্থীরা কয়েকটি আন্দোলন করেছে। তাদের ইচ্ছামতো যা যা করার করছে—আমরা তা মেনে নিয়েছি। কোনো বাধা দেইনি। এখন তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছে। সেজন্য ছাত্রদের নিয়ে আমি শঙ্কিত। অগ্নি-সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীরা যে কোনো অঘটন ঘটাতে পার। গতকাল দুপুরে গণভবন থেকে ১০ জেলার ৩০০ ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা পক্ষ বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। কেউ গুজবে কান দেবেন না, অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। এখানে ঢাকার বাইরে থেকে লোক এসেছে, তাদের কাজ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা। যখনই আমি এটা জেনেছি, আমি আতঙ্কিত বোধ করছি। শিক্ষার্থীদের এখন যদি কিছু হয়, তবে এর দায়িত্ব কে নেবে। অতীতে যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, শিক্ষার্থীদের হত্যা করতে পারে, চলন্ত গাড়িতে পেট্রল ছুড়ে মেরে মানুষ হত্যা করতে পারে তারা যখন এর সঙ্গে নেমে আসে তখন তারা কি না করতে পারে। তিনি বলেন, অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিন। আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারতে পারে তাদের পক্ষে যে কোনো কিছু করা সম্ভব। ঘরের ছেলে-মেয়ে ঘরে ফিরে যেতে হবে। এখন যদি কোনো ধরনের নাশকতা ঘটে তাহলে তার দায় কে নেবে? শিক্ষার্থীদের বলব, পড়াশোনায় মনোযোগী হও। যার যার স্কুলে চলে যাও। লেখাপড়া করতে হবে। আর কোনো বাবা-মায়ের কোল খালি হোক আমি চাই না। কারণ, হারানোর বেদনা আমি বুঝি।

অনুষ্ঠানে ডাক টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রী মুস্তাফা জব্বার এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইসিটি বিভাগের সচিব জুয়েনা আজিজ প্রকল্পের ওপর অডিওভিজুয়াল বিবরণ উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

ছাত্রছাত্রীদের গত কয়েকদিনের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীর যা যা দাবি-দাওয়া ছিল আমরা সব মেনে নিয়েছি। তারা ইচ্ছামতো যা যা করার করছে। বাধা দেওয়া হয়নি। তারা ট্রাফিক পুলিশের আইন-কানুন না বুঝলেও রাস্তায় গাড়ির কাগজ পরীক্ষা করেছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, মন্ত্রীরা মিলে সব শুনেছেন, ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের এমপি মন্ত্রীদের গাড়ি আটকে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না তারা এসব (গাড়ির কাগজপত্র) বোঝে কিনা তবে, তবে এখন তাদের ঘরে ফিরে যেতে হবে। আমরা ট্রাফিক সপ্তাহ পালন শুরু করেছি। শিক্ষার্থীদের আর রাস্তায় থাকার দরকার নেই। পুলিশই দায়িত্ব পালন করবে। তারপরেও ছাত্রদের কেউ এতে আগ্রহ দেখালে তারা ট্রাফিক পুলিশের কাজে সাহায্য করতে পারবে। তারা দুজন সহপাঠীকে হারিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। আর কেউ না বুঝুক, আমার চেয়ে কেউ তাদের কষ্ট বুঝবে না। কারণ, আমি মা-বাবা-ভাই হারিয়েছি। আমি তাদের কষ্ট বুঝতে পারি। তারপরেও আমি তাদের বলছি, এবার তাদের ঘরে, স্কুলে ফিরে যেতে হবে।

শনিবার নিজের রাজনৈতিক কার‌্যালয়ে হামলার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গাউসিয়া মার্কেটে স্কুল ইউনিফরম বিক্রি বেড়ে গেছে। পলাশী থেকে আইডি কার্ড তৈরি করা হয়েছে। তারা আমাদের দলীয় কার্যালয়ে আক্রমণ করেছে। আমাদের ১৭ জন কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে। আমাকে ফোন দিয়েছে। আমি ধৈর্য ধরতে বলেছি। গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হলো, সেখানে নাকি চারজনকে মেরে লাশ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এরপর ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ২০/২৫ জন শিক্ষার্থীকে অফিসে নিয়ে গেছে। সেখানে তারা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছে। কোথাও কিছু পায়নি। দলীয় কার্যালয়ে পাথর নিক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ছাত্র হলে তো তাদের ব্যাগে বই থাকবে। পাথর থাকবে কেন? গণমাধ্যমের একটি অংশের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, কিছু কিছু পত্রপত্রিকা আছে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা তাদের পছন্দ নয়। তারা চায় অন্য কিছু ঘটুক। এটা হলে তারা গাড়িতে পতাকা পায়, মন্ত্রী হতে পারে। তবে যদি এতই শখ তাহলে রাজনীতি করেন না কেন? মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি— অপপ্রচার চালিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল করার কী অধিকার তাদের আছে?

‘বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই মিতব্যয়ী হবেন’: বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আটটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুইটি নবনির্মিত গ্রিড উপকেন্দ্র ও ২১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করব বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই একটু মিতব্যয়ী হবেন। কারণ এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক খরচ হয়, সেটা মাথায় রাখতে হবে।’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রমুখ।

ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার নির্দেশ: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী গোষ্ঠী তৃতীয় পক্ষ  কোনো ষড়যন্ত্র করার সুযোগ না পায় সেজন্য নেতাদের ডেকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যা আটটার দিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনির্ধারিত বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা পৌঁছে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকের আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন এবং নির্দেশনা শুনে আসেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুনরায় দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে এসে বৈঠকে বসেন।

সর্বশেষ খবর