রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল

ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে ভোট নির্বাচনকালীন সরকারের সময় ভোটের তারিখ নির্ধারণ সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত হচ্ছে ভোটকেন্দ্র

গোলাম রাব্বানী

নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ করেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদ নির্বাচনের মালামাল সংগ্রহের পাশাপাশি সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে ভোট কেন্দ্রের তালিকা। সেই সঙ্গে সংসদীয় আসনের সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুতির কাজও শেষ, আজ-কালের মধ্যে তা নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করবেন মাঠ কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকারের সময় শুরুর পরে ভোটের তারিখ নির্ধারণে বৈঠক করবে কমিশন। আর তফসিলের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি নিতে প্রায় দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ইসির নির্বাচন শাখা জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শেষ করেই এখন সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ চলছে ইসি সচিবালয়ে। তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনকে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচন করার জন্য নভেম্বরের মাঝামাঝিতে হতে পারে তফসিল। এজন্য সংসদীয় আসন অনুযায়ী ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুতের কাজও শেষ। আজ-কালের মধ্যে তা মাঠ কর্মকর্তারা ইসি সচিবালয়ে জমা দেবেন। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর তা চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহসহ অন্যান্য কাজ চলছে। 

ইসির কর্মকর্তারা বলেন, মূলত সংসদ নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভোটার তালিকা। আর এই ভোটার তালিকা নিয়েই অনেক সময় নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এজন্য ভোটের অনেক আগেই ভোটার তালিকা সিডি প্রস্তুত করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী সংসদীয় আসনভিত্তিক আলাদা-আলাদা ভোটার তালিকার সিডি তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের জন্যও আলাদা-আলাদা ভোটার তালিকার সিডিও করা হয়েছে। ভোটের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। 

নভেম্বরের শুরু বা মাঝামাঝিতে তফসিল : নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, সংসদে প্রায় ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্র; এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ভোটকক্ষ থাকবে। নির্বাচনকালীন সরকারের সময় শুরুর পর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কমিশন বৈঠকে ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, অক্টোবর থেকে তো সময় শুরু হবে। নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দেওয়া হতে পারে। শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা, বিশ্ব ইজতেমাসহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেব। দলভিত্তিক সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কে এম নূরুল হুদা জানান, প্রতিদ্বন্দ্বীরা মাঠে থাকলে যে কোনো অনিয়ম প্রতিরোধ হবে।

চলছে প্রস্তুতি : ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, একই সঙ্গে সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। সীমানার কাজ শেষ। শুরু হয়েছে নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটার কাজও। সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত হচ্ছে ভোটকেন্দ্র, ভোটার তালিকার সিডিও প্রস্তুত রয়েছে। এক্ষেত্রে সিল, প্যাড, অমচনীয় কালির, সুঁই-সুতা, বিভিন্ন ধরনের খাম, মমবাতিসহ আরও অনেক নির্বাচনী সামগ্রী প্রয়োজন হয়, এ সব সংগ্রহের কাজও চলছে।

সেপ্টেম্বরে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত : একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত দাবি-আপত্তি গ্রহণ করা হবে। এদিকে সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন অনুমোদিত ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা’ অনুযায়ী ইসির জেলা-উপজেলা কর্মকর্তারা এই তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে নির্বাচন কমিশন এখনো ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত সংখ্যা জানাতে না পারলেও প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ হয়েছে ৫ আগস্ট। ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে দাবি-আপত্তি করার সময় ১৯ আগস্ট পর্যন্ত, দাবি নিষ্পত্তির তারিখ ৩০ আগস্ট এবং ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত হবে ৬ সেপ্টেম্বর। এর আগে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সব জেলা নির্বাচন অফিসারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে- ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা অনুযায়ী খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ, দাবি-আপত্তি গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।  ইসি সূত্র জানিয়েছে, নবম সংসদে ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি (ভোটকক্ষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি)। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটারের বিপরীতে ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭। এ সময় ৩০০ আসনে ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের বিপরীতে প্রয়োজন হবে ৪০,০০০ ভোটকেন্দ্র; এতে ভোটকক্ষ প্রায় ২ লাখ। ৩০০ আসনের মধ্যে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র সমতল এলাকায় ৩৯,৩৮৭টি এবং পার্বত্য এলাকায় ৬১৩টি।

সর্বশেষ খবর