শিরোনাম
রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নিষেধাজ্ঞা বাড়ছে বাংলাদেশি খাদ্য রপ্তানিতে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের সুপারিশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পানে ‘স্যালমোনেলা’ নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে ২০১৪ সালে পান আমদানি বন্ধ করে দেয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এরপর বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শও দেয় ইইউ। সেই পরামর্শ মানা না হলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হবে এমন সতর্কতা জারির পরও হুঁশ হয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এখন সেই নিষেধাজ্ঞা ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস রপ্তানির সম্ভাবনাময় বাজার ছিল সৌদি আরব। বেশ কয়েকটি দেশীয় কোম্পানি হালাল মাংস রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছিল। কিন্তু যথাযথ মান নিশ্চিত না করায় এখন এই পণ্যটি রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৌদি আরব। সূত্র জানায়, সৌদি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এসএফডিএ) কর্তৃক বাংলাদেশ হতে সৌদি আরবে রপ্তানিকৃত প্রায় ১২ হাজার কেজি খাদ্যপণ্যে ভৌত রাসায়নিক ও জীবাণুঘটিত ত্রুটি উদঘাটিত হয়েছে। বিষয়টির সমাধানে সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস দেশটির এসএফডিএ-এর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

সমস্যা রয়েছে মাছ ও সবজি রপ্তানিতেও। ভুয়া সনদ দিয়ে সবজি রপ্তানি করায় বেশ কয়েকবার সতর্কতা ও সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও আসে ইইউ থেকে। এ ধরনের অভিযোগের মুখে গতবছরের মার্চে মরিচ, বড়ই, করলা ও চিচিঙ্গা ইউরোপে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ইউরোপে রপ্তানিকৃত সুপার জেলি কোনস এ ‘ক্যারাগিনান’-এর উপস্থিতি থাকায় এলার্ট জারি করেছে ইইউ। এক মাসের মধ্যে ওই নোটিফিকেশনের জবাব ইউরোপীয় কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। এমন কি ব্রাসেলসের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে গন্ধযুক্ত চিংড়ি রপ্তানি করায় ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানাও দিতে হয়েছে বাংলাদেশের একটি কোম্পানিকে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারক মোফা ফিশ লিমিটেডের সঙ্গে ব্রাসেলসের আমদানিকারক গালানা এনভি-এর ২০১৭ সালে সৃষ্ট বাণিজ্য বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে রপ্তানি অনুবিভাগে অনুষ্ঠিত সভায় গন্ধযুক্ত চিংড়ি কনটেইনারের জরিমানা স্বরূপ মোফা ফিশকে ৩৫ হাজার ডলার জরিমানা দিয়ে বিষয়টির নিষ্পতি করতে বলা হয়। তবে রপ্তানিকারক কোম্পানি বলেছে তাদের চিংড়িতে কোনো গন্ধ পাওয়া যায়নি।

একই ধরনের অভিযোগ করেছে লন্ডনের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান লন্ডার লিমিটেড। ২০১৬ সালে পটুয়াখালীর নিরালা সি-ফুড লিমিটেড যে চিংড়ি রপ্তানি করে তাতে নিষিদ্ধ ভাইরাসের উপস্থিতি দেখিয়ে চিংড়ি চালানটি ফেরত পাঠিয়ে দেয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এখন সমপরিমাণ চিংড়ি আবার ওই প্রতিষ্ঠানটিকে দিতে হবে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তাদের চিংড়ি রপ্তানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত গুঁড়া মসলার মান নিয়েও অভিযোগ তুলেছে ইউরোপের কোম্পানিগুলো। জানা গেছে গুঁড়া মসলার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে যে ‘ওরামাইন ও’ জাতীয় কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে সেটি নিয়েই ইইউ-এর অভিযোগ। এ বিষয়ে অবশ্য দেশি কোম্পানিগুলো বলেছে, আমদানি শর্তে এ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহারে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। খাদ্য রপ্তানি নিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক মনে করে এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বোসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, খাদ্য সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে হবে; রপ্তানিকৃত পণ্য দ্রুত সময়ে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিতে হবে, ইউরোপের দেশগুলোতে ইইউ-এর স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করে যেন খাদ্য রপ্তানিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয় সেই বিষয়টিও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, খাদ্য রপ্তানিতে যেসব সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। পানে সালমোনেলা ভাইরাসের উপস্থিতি দূর করতে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে উৎপাদিত পণ্যে বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) ব্যবহার নিয়ে। ইইউ চায় পণ্যটি উৎপাদনের কতদিন আগে বালাইনাশক ব্যবহার হয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে।

সর্বশেষ খবর