সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

তলে তলে ভোট মাঠে বিএনপি

ভোটের পক্ষে খালেদা জিয়া, অর্ধশতাধিক প্রার্থী লন্ডনে পৃথকভাবে দেখা করে এসেছেন তারেক রহমানের সঙ্গে, সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী কাজ শুরু, অক্টোবর থেকে মাঠে থাকবেন প্রার্থীরা

মাহমুদ আজহার

তলে তলে ভোট মাঠে বিএনপি

ভোটের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। দলের সিনিয়র নেতাদের কয়েকজন যখন বলছেন, ‘নো খালেদা, নো ইলেকশন’— তখনই ভোট প্রস্তুতি নিয়ে মাঠ নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ছয় মাসে দলের অন্তত অর্ধশত সম্ভাব্য প্রার্থী পৃথকভাবে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের ভোটের পক্ষে মাঠে থাকতে ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন তারেক। অন্যদিকে কারান্তরিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও ভোটের পক্ষে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলের নির্ভরশীল নেতারা। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করবে বিএনপি। পরের মাস অক্টোবর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নামবেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক দফা জরিপ চালিয়ে বিএনপি ৩০০ আসনে সহস্রাধিক প্রার্থী প্রস্তুত করে রেখেছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় শ সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তরুণ নেতা-নেত্রী সবুজ সংকেত পেয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠে কাজও শুরু করেছেন। দলের ভিশন-২০৩০ ধরে ইশতেহার তৈরির কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। তবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবিতেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের কারামুক্তি ছাড়াও সংসদ ভেঙে দেওয়া, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় নির্বাচনের দাবিতেও মাঠে সরব থাকবে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা সব সময় নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনের আগে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে অনুকূল পরিবেশও তৈরি করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়া সরকার নির্বাচনের চক্রান্ত করছে। এটা সফল হতে দেওয়া হবে না।’

সর্বশেষ মঙ্গলবার ১৪টি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও বিএনপিকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ওই বৈঠকে বিএনপিও ছিল অনেকটাই নমনীয়। তবে তারা কূটনীতিকদের জানিয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু সরকারই চায় বিএনপি নির্বাচনের বাইরে থাকুক। এজন্যই দলের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে গত শনিবার দিনভর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নেতারা মতামত দেন। সেখানেও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষেই ছিলেন অধিকাংশ নেতা। এর সপক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেন নেতারা। তবে ওই বৈঠক মুলতবি রয়েছে। আজ আবারও বৈঠক হতে পারে।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সরকার এখনো আগের অবস্থানে অনড়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি তারা সহজে মেনে নেবে না। এ নিয়ে তারা বিএনপিসহ ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো সংলাপও চায় না। দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে রাজপথের আন্দোলনেই যেতে হবে। এজন্য পর্যায়ক্রমে আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তাও করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। আগামী অক্টোবরকে টার্গেট করে এগোচ্ছে দলটি। পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাব্য সব প্রস্তুতিও এগিয়ে রাখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার আলোচনার মাধ্যমে এই দাবি না মানলে বিএনপির আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।’

বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামে বিএনপি চেয়ারপারসন যে রূপকল্প ঘোষণা করেছিলেন, তার ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচনের জন্য একটি ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়। এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা ও দল সমর্থিত বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এ কাজে যুক্ত হন। দল ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বুদ্ধিজীবীদের মতামত নেওয়া হয়। বিএনপির এক নেতা জানান, ইশতেহার তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বড় অংশই এখন মনে করছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ছিল মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। আজ বেগম খালেদা জিয়ার জেলসহ নেতা-কর্মীরা নানামুখী হয়রানির মুখোমুখি। বিএনপি আজকের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কখনই পড়েনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এ কারণে যত প্রতিকূল পরিবেশই থাকুক না কেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে হবে। নইলে দলের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়বে।

বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পালাবদল হয়। বিএনপিও একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমার জানা মতে, তারাও নির্বাচনের পক্ষে। নির্বাচন বর্জন কোনো সমাধান নয়। তাই যত প্রতিকূল পরিবেশই থাকুক না কেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে— এটাই আমি মনে করি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর