সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ষড়যন্ত্র ও সংলাপ একসঙ্গে চলবে না

রফিকুল ইসলাম রনি

ষড়যন্ত্র ও সংলাপ একসঙ্গে চলবে না

মাহবুব-উল আলম হানিফ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, সংলাপ আর ষড়যন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না। বিএনপি ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল ও উন্নয়ন কাজে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করবে,  আবার সংলাপের কথা বলবে, এটা হতে পারে না। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সাক্ষাৎকারে সমসাময়িক রাজনীতি, সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, রাজনৈতিক দলের জোট গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা। 

মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমরা সব সময়ই বলে আসছি, সংলাপ চাওয়ার আগে ষড়যন্ত্রের পথ থেকে সরে আসতে হবে। আমরা তখন ভেবে দেখব সংলাপ হতে পারে কি-না। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ওই দিন খুনির দল জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু খুনিদের খুশি করতে যারা মিথ্যা জন্মদিন পালন করে তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে না। তারা সমাজের কাছে ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত। তাদের সঙ্গে কি সংলাপ হতে পারে?

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নামক দলটির নীতি বা আদর্শের ওপর ভিত্তি করে জন্ম হয়নি। ক্যান্টনমেন্টে বসে অস্ত্রের মুখে এই দল গঠিত হয়েছে। এই দল কখনই জনগণের কল্যাণে কাজ করেনি, সঠিক পথও অনুসরণ করেনি। জনগণের প্রতি তাদের বিশ্বাস নেই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রায় ১২০০ মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছিল। হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা-গুম করেছিল। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের জন্য জনগণ দ্বারা গণধিকৃত হয়েছে। সেখান থেকে তারা এখনো ফিরতে পারেনি। সে কারণে বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা তলানিতে। তিনি বলেন, তাদের দলের শীর্ষ নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার অপরাধে জেলে রয়েছেন। আরেক শীর্ষ নেতা বিদেশে পলাতক। অনেক নেতার নামে দুর্নীতির মামলা রয়েছে। তাই জনগণের ভোটকে তারা ভয় পায়। ষড়যন্ত্র ছাড়া তারা কিছুই ভাবতে পারছে না। তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও করেছে। কিন্তু জনগণ শক্ত হাতেই তা প্রতিহত করেছে। নিজেদের শক্তি নেই, অন্যের কাঁধে সওয়ার হয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চায়। সরকারের  পতন ঘটিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করতে চায়। সম্প্রতি দুটি আন্দোলনে আমরা তা দেখতে পেয়েছি। কিন্তু তারা সফল হয়নি। সর্বশেষ নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকার যখনই মেনে নিয়ে দাবি বাস্তবায়ন শুরু করেছে, তখনই এই অশুভ শক্তি এদের কাঁধে সওয়ার হয়ে আন্দোলনে রূপ দিয়েছে। কিন্তু সেটাও ব্যর্থ হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে, তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক সক্ষমতা নেই। তারা রাজনৈতিক দেউলিয়া। সে কারণে তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে।

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বৈঠক প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি হানিফ বলেন, আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য। জাতির মধ্যে বিভেদ থাকায় বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়। এটা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়ে অন্য দেশের কেউ হস্তক্ষেপ করবে তা কাম্য নয়। আমরা সব দেশকেই উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে দেখতে চাই। কিন্তু কেউ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে তা চাই না। তিনি বলেন, ১৫ বছরের ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, আমাদের দেশের অভ্যন্তরে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করতে সব সময় বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান করা হয়েছে। এর আগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মার্কিন সরকারের কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য চিঠি লিখেছেন। এমনকি পরোক্ষভাবে দেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করারও তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির এই অজ্ঞ রাজনীতির কারণেই বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ  বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দেশে এক শ্রেণির তথাকথিত সুশীল সমাজ ও কিছু রাজনীতিবিদ আছেন, যারা কখনো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেননি, কখনো মানুষের মন জয় করতে পারেননি। বড় বড় খেতাবধারী এই ব্যক্তিরা দেশে কোনো ধরনের ক্রাইসিস দেখলেই নড়াচড়া শুরু করেন। তারা ভাবেন, এই সময়ে বিদেশিদের সহায়তায় তারা ক্ষমতায় যাবেন। আমরা পরিষ্কারভাবেই জানিয়েছি, এই ধরনের সুবিধাবাদী ব্যক্তি যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে থেকেছেন, দল ভেঙেছেন, নতুন দল গঠন করেছেন, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। তারা জনগণ দ্বারা ধিকৃত। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন জাতির পিতাকে হত্যার পর লন্ডনে যখন ছিলেন, তখন তাকে বলা হয়েছিল, জেলখানার অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হতে পারে, বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারকে জানানো হোক। বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে থাকার কথা বলেও তিনি (কামাল হোসেন) থাকেননি। তিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কথা বলেন, আর তাঁর মেয়ের জামাই যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন-এই ধরনের বেইমান- মোনাফেকদের বাংলাদেশে ঠাঁই হবে না। সংসদ নির্বাচনের আগে জোট গঠনের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, নির্বাচনের সময় জোট গঠন ও জোট ভাঙাগড়ার একটা প্রক্রিয়া চলে। বিশেষ করে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো, যাদের এককভাবে ভোট করে কোনো আসনে জয় লাভ করার সম্ভবনা নেই, তারা বড় দলের সঙ্গে জোট করে। আবার অনেক রাজনৈতিক দল আছে, যারা আদর্শিক জোট করে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের খেলা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর