বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
জাতীয় শোক দিবস পালিত

শোককে শক্তিতে পরিণত করার অঙ্গীকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

শোককে শক্তিতে পরিণত করার অঙ্গীকার

বনানী কবরস্থানে দোয়া শেষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতির জনকের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

শোক আর বিনম্র শ্রদ্ধায় গতকাল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেছে জাতি। শোকাবহ এই দিনে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে সিক্ত হয়েছে টুঙ্গিপাড়ার সমাধিস্থল, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বনানী কবরস্থান। শোককে শক্তিতে পরিণত করে জঙ্গিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার অঙ্গীকার করে শোকাহত জাতি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করা এবং হত্যার পেছনের ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে এবারের জাতীয় শোক দিবসে।

গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। পবিত্র কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচিও পালিত হয়েছে সেখানে। স্বাধীনতার মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই তিন জায়গায় ছিল শোকার্ত লাখো মানুষের ঢল। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ এখন জনারণ্য। গতকাল দিনটি ছিল সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সরকারি-বেসরকারি রেডিও ও টিভি চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেশজুড়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা, চিত্রাঙ্কন, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং মিলাদ, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। রাজধানীসহ সারা দেশে শোকের প্রতীক কালো পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড ও তোরণ নির্মাণ করা হয়। অলিগলিতে মাইকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান, কবিতা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণামূলক গানও প্রচারিত হয় মাইকে। ভোর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তায় সমবেত হতে থাকে। থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের উদ্যোগে দিনব্যাপী কোরআনখানি, মোনাজাত, আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিট। সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন : সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে জাতির পক্ষে প্রথমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পৃথক শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মহান নেতার প্রতি সম্মান জানাতে তাঁরা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল সে সময় জাতির পিতাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। মন্ত্রিসভার সদস্য ছাড়াও তিন বাহিনীর প্রধানগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দলীয় সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাসভবনে প্রবেশ করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে ঘাতকদের গুলিতে বঙ্গবন্ধুর প্রাণহীন দেহ পড়ে ছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। ওই স্থানটিতে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করেন। সেখানে ঘুরে ঘুরে তাঁরা বাবার স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান; যেখানে তাঁর মাতা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল এবং ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারীরা চিরনিদ্রায় শায়িত। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এবং কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। তাঁরা এ সময় প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ করেন এবং দোয়ায় শরিক হন।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুহাম্মদ ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন, দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, দলের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মির্জা আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদ প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন।

ধানমন্ডিতে অশ্রুসিক্ত জনতার ঢল : ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে নামে শোকার্ত জনতার ঢল। গভীর শ্রদ্ধা আর সিক্ত নয়নে কৃতজ্ঞ জাতি নতমস্তকে স্মরণ করে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবন থেকে নিউমার্কেট ও আসাদগেট রাস্তা ও এর চারপাশে ছিল হাজারো কালো রঙের ব্যানার। লাখো মানুষের গায়ে পোশাকের রংও কালো। যাদের পরনে ভিন্ন রঙের বসন, তারা ধারণ করেছেন কালো ব্যাজ। হাতে ছিল কালো পতাকা ও পুষ্পস্তবক। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে মানুষের এই মিলনমেলায় পা ফেলার জায়গা ছিল না। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর কিংবা বৃদ্ধ সবাই এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আবুল হাসানাত ও শাহে আলম মুরাদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এবং এ কে এম রহমত উল্লাহ ও সাদেক খানের নেতৃত্বে উত্তর আওয়ামী লীগ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

বঙ্গভবনে মিলাদ : জাতীয় শোক দিবসে গতকাল জোহরের নামাজের পর বঙ্গভবনের দরবার হলে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যোগ দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মিলাদ মাহফিলে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য ও বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।

মহিলা আওয়ামী লীগের মিলাদে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান : মহিলা আওয়ামী লীগ বাদ আসর ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাসহ প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়স্বজন, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা মিলাদে যোগ দেন। পরে শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়।

সর্বধর্ম প্রার্থনা : কলাবাগান মেন্টরস কোচিং সেন্টারে সর্বধর্ম প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে পবিত্র কোরআন, বেদ, বাইবেল ও ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়। পরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। সর্বধর্ম প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম রব্বানী চিনু ও সাবেক ছাত্রনেতা আফজাল বাবু। প্রার্থনা সভায় রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।

দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, ইউনিটটে গরিব অসহায়, এতিম-ছিন্নমূল শিশু ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সরকারদলীয় এমপিরা। ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী) নির্বাচনী এলাকার এমপি আলহাজ হাবিবুর রহমান মোল্লা তার নির্বাচনী এলাকা ধলপুর, সায়েদাবাদ, সুতিখালপাড়, কাজলা, ভাঙাপ্রেস, ছনটেক, শনিরআখড়া, দনিয়া এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বর্ণমালা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রায়েরবাগ, কোনাপাড়া, মুরগির ফার্ম মোড়, ডগাইর বাজার, আল আমিন রোড, বড়ভাঙা, হাজীনগর, স্টাফ কোয়ার্টার, সারুলিয়ায় গরিব-দুঃখী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম ফজলুল হক খান, বৃহত্তর ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কৌশিক আহমেদ জসিম, এনামুল ইসলাম এনাম। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাবেক এপিএস ও আওয়ামী লীগ নেতা ড. আওলাদ হোসেন গতকাল শ্যামপুরে গরিব অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন। এ সময় স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকার এমপি আসলামুল হক আসলাম, সাহারা খাতুন, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এ কে এম রহমত উল্লাহ, হাজী সেলিম, কামাল আহমেদ মজুমদার, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, সংরক্ষিত আসনের এমপি সাবিনা আকতার তুহিনসহ প্রত্যেক এমপি এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা খাবার বিতরণ করেন।

ঢাকেশ্বরীতে বিশেষ প্রার্থনা : রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১১টায় এ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রার্থনা সভায় বিপুলসংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী অংশ নেন। প্রার্থনায় বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বাবু পরিতোষ।

বন্ধুসমাজের গণমোনাজাত : বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেশবাসীর পক্ষে বাংলাদেশ বন্ধুসমাজের আয়োজনে গণমোনাজাত হয়। সংগঠনের সভাপতি এফ আহমেদ খান রাজীবের পরিচালনায় গণমোনাজাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গসহ অসংখ্য বন্ধুর সমাগম ঘটে।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) লিমিটেডের প্রশিক্ষণ বিভাগের মিলনায়তনে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, রক্তদান কর্মসূচি, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

এদিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন জগন্নাথপুর ঢাকা মহানগরী উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক আবদুল্লাহ রনি গণভোজের আয়োজন করেন। উপস্থিত ছিলেন মহানগরী আওয়ামী লীগের হাফিজুর রহমান, তারেক ইসলাম, মহানগরী উত্তর ছাত্রলীগের সৌর চৌধুরী, মসিউর জামান প্রিয়ম প্রমুখ।

বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিকেল : শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ। গতকাল কলেজ প্রাঙ্গণে এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ ডা. আবু উবাইদ মুহাম্মদ মুহসিন। বক্তব্য রাখেন ডা. মো. নুরুল আলম, ডা. বেলায়েত হোসেন, ডা. ওয়াহিদা হাসিন প্রমুখ। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

এফবিসিসিআই ও রিহ্যাব : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের দুই সংগঠন এফবিসিসিআই ও রিহ্যাব। ধানমন্ডিতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু এবং ১৫ আগস্টের সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল সকালে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন— এফবিসিসিআই পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভরসা, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, হাবিব উল্লাহ ডন, প্রবীর কুমার সাহা, হাফেজ হারুন-অর-রশীদ, প্রীতি চক্রবর্তী প্রমুখ। পরে শহীদদের স্মরণে মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে দিনব্যাপী কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়।

এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল কর্মসূচি পালন করেছে রিহ্যাব। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও রোডে রিহ্যাবের কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুই হাজার দুস্থ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দেন— রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, সিনিয়র সহসভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি এবং প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া, সহসভাপতি ও আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর