সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকারে ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বী পার্টির অভাব হবে না

♦ জোর করে ক্ষমতায় থাকার অভিলাষ নেই
♦ সংলাপের সুযোগ-সময় নেই, উদ্যোগও নেব না
♦ মনোনয়ন পেতে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বী পার্টির অভাব হবে না

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও প্রতিদ্বন্দ্বী পার্টির অভাব হবে না। তারা যদি নিজ থেকে নির্বাচনে না আসে তাহলে সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার বাধ্য করবে না। আর নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্ভবনা নেই, সুযোগ নেই, বাস্তব অবস্থা নেই, সময়ও নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ নৌকায় ভোট দেবে, আওয়ামী লীগ আবারও জনগণের রায়ে ক্ষমতায় আসবে। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ঘণ্টাব্যাপী একান্ত আলাপচারিতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ, দলের মনোনয়ন, সড়ক পরিবহন সেক্টরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করণীয় এবং সমসাময়িক বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সে কারণে আমরা উইনেবল প্রার্থী মনোনয়ন দেব। জোটশরিকদেরও সে কথা জানিয়েছি।’ সড়ক পরিবহন খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সর্বমহলে একটা টনক নড়েছে। শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে। রোড সেফটির জন্য গৃহীত উদ্যোগগুলো টিমওয়ার্ক করে সমন্বিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার জন্য আক্ষেপ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সামাজিক আন্দোলনে রাজনৈতিক উসকানি দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনাসহ কিছু গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করেন কাদের। অক্টোবরে গঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। সেই সরকারে কারা থাকবেন সেটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। সংসদে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তারাই থাকবেন। এখানে বিএনপির অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না বলে সাফ জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

বিএনপি নির্বাচনে না এলেও প্রতিদ্বন্দ্বী পার্টির অভাব হবে না : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রশ্ন ছিল, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এবার কি সব দল অংশগ্রহণ করবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কী করে বলব নির্বাচনে কারা অংশ গ্রহণ করবে, কারা করবে না? তবে আমার কাছে মনে হয়, বিএনপি যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাও করে, প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা কম হবে না। প্রতিদ্বন্দ্বী পার্টির অভাব হবে না। বিএনপি কী করবে এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা কাউকে আহ্বান করে, অনুনয়-বিনয় করে নির্বাচনে আনব না।’

সংলাপের কোনো সম্ভবনা, সুযোগ, বাস্তব অবস্থা নেই, সময়ও নেই : বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্ভাবনা নেই, সুযোগ নেই, বাস্তব অবস্থা নেই, সময়ও নেই। বিএনপি বারবার গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তারা কোটার ওপর ভর করে সরকারের পতন ঘটাতে চায়। সেখানে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থীদের সামাজিক আন্দোলনে ভর করে সরকার হটানোর চক্রান্ত করে। এখন তারা বিদেশিদের নালিশ করছে, আর গুজবসন্ত্রাস করছে। আগামীতে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আমরা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলা করব। কোনো ধরনের সহিংসতা করলে সরকার আইনগতভাবে দমন করবে। ২০১৩-১৪ সালের মতো সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না। কঠোরভাবে মোকাবিলা করব, পরাজিত করব।’

জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কিছু মিডিয়া : কিছুদিন ধরে হঠাৎ এক-এগারোর কথা রাজনৈতিক মহলে বলাবলি হচ্ছে। আসলে কি এমন পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে? জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এক-এগারোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে—এ কারণেই বলছি, বিএনপি এবং তার সাম্প্রদায়িক সহযোগীদের হুমকি-ধমকি, দেশে-বিদেশে আসা-যাওয়া, গোপন বৈঠক, লন্ডন, দুবাইয়ে বৈঠক এবং ঢাকায় কিছু গোপন বৈঠক হয়েছে। গোপনে যে বৈঠক সেখানে ষড়যন্ত্রও রয়েছে। সরকার এগুলোর খোঁজ রাখছে। কাদের সঙ্গে বসছে, কার কী ভূমিকা ছিল? আমরা খোঁজখবর রাখছি। এক-এগারোর আগেও এমন পরিবেশ দেখা গেছে। তিনি বলে, এক-এগারোর সময় কিছু মিডিয়া সক্রিয় ছিল। তারা এখনো সক্রিয়। বিএনপির আন্দোলন মাঠে না থাকলেও সেই সব মিডিয়ায় সরব রয়েছে। সম্প্রতি কোটা সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের সামাজিক আন্দোলনে দু-একটি মিডিয়া একেবারেই ভিন্ন ধরনের ভূমিকায় ছিল। তারা মিথ্যাচার করেছে। বিএনপি-জামায়াতের যে রাজনৈতিক এজেন্ডা, সেগুলো সঙ্গে ওই মিডিয়ার অপপ্রচারগুলোর শতভাগ মিল রয়েছে। আওয়ামী লীগ অফিসে যে সুপরিকল্পিত হামলা হলো, সেখানেও ভিন্ন খাতে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ড্রেস পরে চাপাতি, চাকু, শিলাপাথর নিয়ে যে হামলা করা হলো, সেখানে ওই মিডিয়াগুলো আক্রান্তকে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আমাদের একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীর দুই চোখ চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে গেল। অথচ তার পরিচয় গোপন রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থী বানিয়ে তা প্রচার করেছে ওই মিডিয়াগুলো। আবার দেখিয়েছে, ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ মিডিয়াই দায়িত্বশীল। আগে তারা দেশের কথা ভাবে। শান্তি, শৃঙ্খলা, গণতন্ত্র সব মিলিয়ে দেশ একটি পজেটিভ জায়গায় আছে। ওই মিডিয়ার ব্যক্তিরা এক-এগারোর সময় বিতর্কিত ভূমিকায় ছিল। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তাদের ভালো লাগে না। দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের কদর বাড়ে।’

নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রীর আক্ষেপ : নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছিল। এখন দেশের প্রতিটি মানুষ চায় নিরাপদ সড়ক। আপনি এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। কতটুকু নিরাপদ সড়ক করতে পেরেছেন সেটা দেশবাসী জানতে চায়—জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা অনেক দিনের প্রক্রিয়া। নিরাপদ সড়কের জন্য আমার চেয়ে অতীতে কেউ রাস্তায় বেশি দিন নামেনি। সাতটি বছর এমন কোনো সপ্তাহ নেই, রাস্তায় গাড়ির লাইন্সেস চেক, বিআরটিএ মোবাইল টিমের অভিযান, গাড়ির ফিটনেস আমি দেখিনি। এ জন্য নিরাপদ সড়কের ইলিয়াস কাঞ্চন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদসহ সিনেমার সেলিব্রেটিদের নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়েছি। নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করেছি। তবে এই কাজটি আমি করতে পারিনি, তাহলো টিমওয়ার্ক কাজগুলো করতে পারিনি। রোড সেফটির ব্যাপারে আমার উদ্যোগগুলো টিমওয়ার্ক করে সমন্বিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যেমন ধরুন বাংলাদেশে একটি কথার প্রচলন ছিল—‘‘মরতে যদি চাও তাহলে আরিচা যাও’’। আরিচা রোডে এখন সড়ক দুর্ঘটনা কমে এসেছে। ডিভাইডার করেছি। সরকার ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দুর্ঘটনা কমে এসেছে। মাওয়া রাস্তায় প্রতিদিনই মানুষ মারা যেত। সেগুলো এখন কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দেশের ১৪৪টি ব্ল্যাকস্পটের ৮০ ভাগ ব্ল্যাকস্পটে ১৬৫ কোটি টাকার কাজ করেছি। নতুন একটি প্রজেক্ট আমরা হাতে নিচ্ছি। কাজ তো আমাদের হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৬টি ফুটওভার ব্রিজ। সেগুলো মানুষ খুবই কম ব্যবহার করে। ফুটওভার ব্রিজের পাশ দিয়ে মানুষ হেঁটে পার হয়। লাফিয়ে লাফিয়ে পার হতে দেখা যায়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যানজটের সঙ্গে জনজটও বাড়ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। যদি নিরাপদ সড়ক চান, তাহলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সবার মনমানসিকতা বাড়াতে হবে।’ ভিআইপিদের সমালোচনা করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘অসাধারণ লোকেরা, ভিআইপিরাও রং রোডে যায়। উল্টোপথে যায়। শিক্ষার্থীদের সামাজিক আন্দোলনের কারণে অনেকেরই টনক নড়েছে। আমাদের হাইওয়ে পুলিশ অনেক সক্রিয়। শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে সমস্যাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে। এখন যদি সচেতন না হই তাহলে কবে হব। এটা অব্যাহত রাখলে সড়ক নিরাপদ হবে।’ 

জোট বড় করার প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে : কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে আপনার বৈঠক হয়েছে। তারা কি ১৪-দলীয় জোটে আসবে, নাকি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে—জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সিপিবি আমাকে জানিয়েছে, তারা তাদের নিয়ে আলাদা জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্য যেসব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথা হয়েছে, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, টেলিফোনে খালেকুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয়েছে, মেজর আবদুল মান্নান সাহেবের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। কেউ কেউ আমার সঙ্গে দেখাও করেছেন। এটা শুধু রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে। এটা প্রাথমিক পর্যায়ের কথাবার্তা। শুধু নির্বাচন নিয়ে নয়, রাজনৈতিক আলোচনা। তারাও বলেননি, জোটে আসবেন, আমরাও বলিনি জোটে নেব। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বড় জোট গঠনের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে।’

উইনেবল প্রার্থী দেয়া হবে : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করা। এ জন্য উইনেবল প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাদের সঙ্গে থেকে নির্বাচন করার কথা বলেছেন। ১৪ দলও একসঙ্গে কাজ করছে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমাদের জোটসঙ্গীদের বলে দিয়েছি, আপনারা এমন কোনো প্রার্থীর জন্য আবদার করবেন না, যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হতে পারে এমন প্রার্থীকেই আমরা মনোনয়ন দেব। জয়ী হতে না পারলে মনোনয়ন দিয়ে কী লাভ।’ তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আমি মনে করি। সে কারণে জিততে হবে। জনগণ আমাদের ভোট দেবে। কারণ আমাদের উন্নয়ন অর্জন, শেখ হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তা এবং নেত্রীর প্রতি দেশের জনগণের বিশ্বাস, আস্থা রয়েছে। দেশে এ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুকন্যা সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। যে প্রার্থীদের নিয়ে আমরা নিয়ে ভোটে যাব, তাকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। জনমত জরিপে তার নামটা জনপ্রিয়তার বিচারে এগিয়ে থাকতে হবে। এর পরই তাদের নাম বিবেচনায় রাখা হবে।’ তিনি বলেন, সবার এসিআর নেত্রীর কাছে জমা হয়েছে। এগুলো এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

গাফ্ফার চৌধুরী ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন : প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, ৮০ ভাগ এমপিকে বাদ দিতে হবে। আপনি কি তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত?—এমন প্রশ্নে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘না। এটা আবদুল গাফ্ফার সাহেবের ব্যক্তিগত মত হতে পারে। তিনি আমাদের একজন ভালো শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি আমাদের ভালো চান। এটা তার ব্যক্তিগত মত। তিনি দেশে থাকেন না। বিদেশে থাকলেও তিনি খোঁজখবর রাখেন। তার পরামার্শটা আমরা জেনেছি। সিদ্ধান্ত আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের। আমরা আমাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন দেব।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলব, আগামী নির্বাচনে আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। দেশের জনগণ নৌকায় ভোট দেবে। আমি বলতে পারি, আমাদের নেত্রী জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সাল থেকে চিনি। জনমতের বিরুদ্ধে জোর করে নির্বাচনে জিততে হবে এটা তিনি কখনো চিন্তা করেন না। আওয়ামী লীগ কখনোই নির্বাচনে জোর করে নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করেনি। জোর করে ক্ষমতায় থাকতে হবে এমন ক্ষমতাবিলাস, এমন অভিলাষ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেই।’

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ তো আছেই : গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ করতে পারে। শেষ পর্যন্ত সমীকরণ, মেরুকরণ কী দাঁড়াবে সেটা বলা যায় না। যোগাযোগ তো আছেই। বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তো চলেই এসেছেন। আপনারাই (সাংবাদিক) খুঁজে বের করুন।’

বিদেশি হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না : নির্বাচন সামনে রেখে কোনো চাপ আছে কি না। যারা আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র, তারা পরামর্শ দিতে পারে। বলতে পারে, নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। এটা সবাই চায়। সেটা বলতে পারে। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যে বিষয়গুলো হস্তক্ষেপের শামিল বলে মনে করি, সেগুলো আমরা সহ্য করব না। আমরাই আমাদের দেখব। সংবিধান আছে। নির্বাচন কমিশন আছে। কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আর সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা করবে।

আওয়ামী লীগ ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের রায়ে বিশ্বাসী। জনমতের বাইরে আওয়ামী লীগ কখনো কোনো কাজ করেনি। তারা যখন জিতল তখন তো অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। তাহলে এখন কেন উঠছে? উন্নয়নকে ঘিরে যে প্রচারণা সেটাই কাজে লেগেছে। এবার আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। সিলেটে ঐক্যের অভাব ছিল। সে কারণে জিততে পারিনি। আগামী নির্বাচনে কী ধরনের প্রস্তুতি নেব—আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করব। আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন, যারা ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ভুল সংশোধন করতে আমাদের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ইচ্ছা আছে।’  তিনি বলেন, সদ্য সমাপ্ত পাঁচটি সিটি নির্বাচন হলো। এই নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছি। এই পাঁচটি সিটির মধ্যে চারটিতে আমরা জয়লাভ করেছি। একটিতে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে হেরেছি। এই পাঁচটি সিটি করপোরেশন কিন্তু আমাদের ছিল না। অর্থাৎ বিগত সময়ে এই সিটি নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। একটি সুশৃঙ্খল ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নানামুখী অভিযোগ রয়েছে। আমরা যদি জবরদস্তি করে জিততাম, তাহলে এর আগে যখন নির্বাচন হয়েছিল তখনো আমরা জিততে পারতাম। কিন্তু তা করিনি।’ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শের সঙ্গে জামায়াতের নীতি-আদর্শ এপিঠ-ওপিঠ। আওয়ামী লীগ দেশের জন্মলগ্ন থেকেই একমুহূর্তের জন্য নীতি-আদর্শ পরিবর্তন করেনি। সময়ের সঙ্গে আমাদের কৌশল কিছু পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। ১৯৯৬ সালে আমাদের কৌশল কিছু পরিবর্তন করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও করেছি। এরশাদের সঙ্গেও আমাদের জোট করতে হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর