রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনে ইসির যত প্রস্তুতি

সেপ্টেম্বরে কেন্দ্র চূড়ান্ত, নির্বাচনী আইন সংশোধন, নভেম্বরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেই তফসিল ঘোষণা, চলছে ইভিএম কেনার কাজ

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচনে ইসির যত প্রস্তুতি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোর প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হচ্ছে ভোট কেন্দ্রের তালিকা। সংসদীয় আসনের সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুতির কাজ শেষ। আগামী মাসে নির্বাচনী আইন সংস্কারের কাজও শেষ করতে চায় ইসি। আগামী সংসদ নির্বাচনে আংশিকভাবে ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হচ্ছে। আজ তা নিয়ে বৈঠকে বসছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকারের যাত্রা দিয়ে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নভেম্বরের শুরুতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ইসি। এরপর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিলের সিদ্ধান্ত নেবে তারা। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে নভেম্বরের শুরুতে বা মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের দিন ২৭ ডিসেম্বর বা ৩ জানুয়ারি প্রাথমিক তারিখ চিন্তা করা হচ্ছে। কেননা জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। এ লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণার আগে-পরে দুই ধাপে অন্তত ৯০টি কাজ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী এগোচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ইতোমধ্যে বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোটের জন্য নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দেওয়া হতে পারে। কমিশনের বৈঠকে ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে ভোট হবে। শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা ও বিশ্ব ইজতেমার সময়কেও বিবেচনায় নেবে কমিশন। এসব বিষয় মাথায় রেখেই সেপ্টেম্বরে ‘একাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সূচি’র খসড়া কমিশনে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইসি কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয় ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। তিন দফা তারিখ পরিবর্তন করে ভোট হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর।

জানা যায়, প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে ৬০ দিন, দ্বিতীয় ৫৪ দিন, তৃতীয় ৪৭ দিন, ৪র্থ ৬৯ দিন, পঞ্চম ৭৮ দিন, ষষ্ঠ ৪৭ দিন, সপ্তম ৪৭ দিন, অষ্টম ৪২ দিন, নবম ৪৭ দিন ও দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করেছিল কমিশন।

চলছে ভোটের আগের প্রস্তুতি, ক্ষণ গণনা শুরু ৩০ অক্টোবর : ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, একইসঙ্গে সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ। শুরু হয়েছে নির্বাচনসামগ্রী কেনাকাটার কাজ। সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত হচ্ছে ভোট কেন্দ্র, ভোটার তালিকার সিডিও প্রস্তুত রয়েছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন হয়েছিল ২৯ জানুয়ারি। সে হিসেবে এবার ভোটের ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে আগামী ৩০ অক্টোবর। তিনি বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার মতো প্রস্তুতি আছে আমাদের। নির্বাচন কমিশন এখনো ওইভাবে আলোচনা করেনি তারিখ নিয়ে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের শেষার্ধে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন হবে। ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটের ক্ষণ গণনার শুরু থেকে ফলাফলের গেজেট করা পর্যন্ত অন্তত ৯০টি কাজ চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছেন তারা।

সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের নির্বাচন : ইসি কর্মকর্তারা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪৩ লাখেরও বেশি ভোটার থাকবে। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র হবে ৪০ হাজারের বেশি। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুজন করে পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ৬ লাখের বেশি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৮ জন নিরাপত্তা সদস্য থাকবেন। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমের নেতৃত্বে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক লাখ সদস্য। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট রয়েছে ৬৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনার চেয়ে আড়াই-তিন গুণ ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। ছবিসহ ভোটার তালিকার পর নবম সংসদ নির্বাচনে ৮ কোটি ১০ লাখ ও দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটার ছিলেন।

ইভিএম কেনার প্রস্তুতি : সংসদ নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক আসনে প্রাথমিকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ প্রকল্পের অধীন দেড় লাখ ইভিএম কেনা হচ্ছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এতে প্রতিটি ইভিএমের দাম পড়বে প্রায় ২ লাখ টাকা। এদিকে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দেশব্যাপী ইভিএমের পরিচিতি ও ভোটদানে উৎসাহ দিতে মেলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।

সেপ্টেম্বরে ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত : একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রের বিষয়ে গত ১৯ আগস্ট পর্যন্ত দাবি-আপত্তি গ্রহণ করা হয়েছে। আর দাবি নিষ্পত্তির তারিখ রাখা হয়েছে ৩০ আগস্ট এবং ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত হবে ৬ সেপ্টেম্বর। ইসি সূত্র জানিয়েছে, নবম সংসদে ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি (ভোটকক্ষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি)। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটারের বিপরীতে কেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭টি। এ সময় ৩০০ আসনে ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪৩ লক্ষাধিক ভোটারের বিপরীতে প্রয়োজন হবে প্রায় ৪০ হাজার কেন্দ্র; এতে ভোটকক্ষ প্রায় ২ লাখ। ৩০০ আসনের মধ্যে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র সমতল এলাকায় ৩৯ হাজার ৩৮৭টি এবং পার্বত্য এলাকায় ৬১৩টি।

সর্বশেষ খবর